রায়পুরে বিএনপির প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনা, ভোট গ্রহণ বন্ধ
Published: 17th, August 2025 GMT
দলের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কারণে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলার নয়ারহাট এলাকায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে এক সপ্তাহ থেকেই বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, ৮ আগস্ট ছিল প্রতিনিধি নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহের শেষ দিন। ওই দিন সভাপতি পদপ্রার্থীসহ অন্তত তিনজনকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেরোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকারও ছিলেন। তিনি প্রবাসী হওয়ায় সভাপতি পদে তাঁকে ফরম দেওয়া হয়নি। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ব্যাপারীর ওপর চড়াও হন নজরুল ইসলামের অনুসারীরা। তাঁরা রশিদ ব্যাপারীসহ নির্বাচন পরিচালনায় জড়িতদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও চেয়ার ছুড়ে মারেন।
এ ঘটনায় নজরুল ইসলাম সরকারকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া একই কারণে বহিষ্কৃত হন রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনও। গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে কেন তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানাতে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এর পর থেকেই স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল করে। গত শুক্রবার রাতেও নির্বাচন বন্ধের দাবিতে এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা মিছিল করেন। পরে আজ বেলা দেড়টার দিকে প্রতিনিধি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ব্যাপারী নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেরোয়া ইউনিয়নে ভোট গ্রহণের পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের নিয়ে সমঝোতা করা হবে। এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসী হওয়ার অজুহাতে আমাকে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়নি। অথচ দলের দুঃসময়ে আমি সব সময় পাশে থেকেছি। বিদেশে অবস্থান করেও নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করেছি। বর্তমানে দেশে থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘কেরোয়া ইউনিয়ন প্রতিনিধি নির্বাচনে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি ও উত্তেজনার কারণে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। আমরা চাই, সবাই মিলেমিশে দলের স্বার্থে কাজ করুক। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, এখানে যেকোনো কর্মীকে মূল্যায়ন করা হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ট গ রহণ বন ধ নজর ল ইসল ম ব এনপ র প
এছাড়াও পড়ুন:
নদীভাঙন রোধে পাটুরিয়ায় ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এবং আশপাশে এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে তারা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এ সব কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনকারী আজিবার রহমান জানান, পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া ফেরি, লঞ্চঘাট, ঘাটসংলগ্ন ধুতরাবাড়ী ও তেগুরি গ্রামে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম দুটিতে কয়েকটি বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে ফেরিঘাটও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
নেত্রকোনায় বিকাশকর্মী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
রংপুরে শ্বশুর-জামাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন শহীদ রফিক চত্বরে উথলী-পাটুরিয়া সড়কে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে শহীদ রফিক চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উথলী-পাটুরিয়া সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যায়।
অবরোধ চলাকালে নদীভাঙন প্রতিকারের দাবিতে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন খান (পান্নু), ব্যবসায়ী নূর ইসলাম, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাপস খান, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন, উত্তম পাল, আরিফ হোসেন ও রানা শিকদার।
বক্তারা বলেন, ‘‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরিঘাট নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘাট এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে অনেকে পথে বসেছে। অথচ ভাঙনরোধে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’’
নদীভাঙন প্রতিরোধে বক্তারা দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ঘাট সংলগ্ন দুই কিলোমিটার এলাকা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এরপরও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশে নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে ইতোমধ্যে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
ঢাকা/চন্দন/বকুল