২০২৪-২৫ সালের সরকারি অনুদান পাচ্ছে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও তথ্যচিত্র। গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুদান প্রদানের তথ্য জানান। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘জুলাই নিয়ে দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং আটটি শর্ট ফিল্ম ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হবে সরকারি অনুদানে।’

৩০ জুন ছিল অর্থবছরের শেষ দিন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুদানপ্রক্রিয়া শেষ করতে গত শনি ও রোববার অনেকটা তাড়াহুড়া করে আবেদনকারী নির্মাতা ও প্রযোজকদের ‘পিচিং’–এর জন্য ডাকা হয়। সবাই এক দিন করে প্রস্তুতির সময় পান। পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির পিচিংয়ের দুই দিন ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির এক দিন পরই চূড়ান্ত করা হয় অনুদানের সিনেমার তালিকা।

তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শারমিন আখতার স্বাক্ষরিত ৩০ জুনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘চলচ্চিত্রশিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীর আবহমান সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যে শিল্পমানসমৃদ্ধ ও বহুস্বর বিবৃত করে, এমন পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে অনুদান কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ২ জুলাই রাতে প্রকাশ্যে আসে এই প্রজ্ঞাপন।

প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ৩২টি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৯ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান দেওয়া হবে ৭৫ লাখ টাকা। এই শাখায় অনুদান পাবেন ১২ জন প্রযোজক। ঘোষণামতো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ২০ সিনেমার ২০ প্রযোজক পাবেন ২০ লাখ করে টাকা।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে শিশুতোষ শাখায় অনুদান পেয়েছে ‘রবিনহুডের আশ্চর্য অভিযান।’ এটির প্রযোজক জগন্ময় পাল। প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে অনুদান পেয়েছে প্রযোজক লাবিব নাজমুস শাকিবের ‘মায়ের ডাক।’ ‘রাজনৈতিক ইতিহাস তথা আবহমান বাংলার সব রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, আন্দোলন ও বিপ্লব—যা এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নিয়ামকসংক্রান্ত শাখা’য় অনুদান পেয়েছে ‘জুলাই।’ এটির প্রযোজক মাহমুদুল ইসলাম। ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাস তথা বাংলার ঐতিহ্য, মিথ ও ফোকলোর’ শাখায় অনুদান পেয়েছে ‘রুহের কাফেলা।’ সিনেমাটির প্রযোজক আহমেদ হাসান সানি।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সাধারণ শাখায় অনুদান পেয়েছে আটটি সিনেমা। ‘পরোটার স্বাদ’ (সিংখানু মারমা), ‘খোঁয়ারি’ (সৈয়দ সালেহ আহমেদ), ‘জীবন অপেরা’ (আলভী আহমেদ), ‘জলযুদ্ধ’ (গোলাম সোহরাব দোদুল), ‘কবির মুখ দ্য টাইম কিপার’ (মুশফিকুর রহমান), ‘কফিনের ডানা’ (আনুশেহ আনাদিল), ‘নওয়াব ফুজুন্নেসা’ (সাহিবা মাহবুব) ও ‘জুঁই’ (সুজন মাহমুদ)।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে শিশুতোষ শাখায় অনুদান পেয়েছে ‘মন্দ-ভালো।’ এটি প্রযোজনা করেছেন মাহবুব আলম। প্রামাণ্যচিত্র শাখায় অনুদান পেয়েছে ‘ফেলানী’ (সাব্বির), ‘ঝুঁকির মাত্রা’ (আক্তার তাফজিরা রহমান সামিয়া), ‘জীবনের গান’ (জাহিদ হাসান)। আবহমান বাংলার সব রাজনৈতিক অভ্যুত্থান, আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়ে তিনটি সিনেমা অনুদান পাচ্ছে। অভীকচন্দ্র তালুকদার প্রযোজিত ‘হু হ্যাজ মেইড আস ফ্লাই’, সাইদুল আলম খানের ‘ভরা বাদর’, সালমান নূরের ‘১২৩০।’ বাংলার ঐতিহ্য, মিথ ও ফোকলোর–সংক্রান্ত শাখায় অনুদান পেয়েছে বৃন্দারাণীর ‘আঙুল।’ এটি প্রযোজনা করেছেন শুভাশিস সিনহা।

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সাধারণ শাখায় অনুদান পেয়েছে ১০টি সিনেমা। এগুলো হলো ‘একটি সিনেমার জন্য’ (সাদমান শাহরিয়ার), ‘দাফন’ (সাইদুল ইসলাম), ‘সাঁতার’ (মোহাম্মদ ইফতেখার জাহান নয়ন), ‘মাংস কম’ (নোশিন নাওয়ার), ‘গগন’ (সুমন আনোয়ার), ‘অতিথি’ (আবিদ মল্লিক), ‘বোবা’ (সালজার রহমান), ‘অদ্বৈত’ (সাদিয়া খালিদ), ‘আশার আলো’ (আরিফুর রহমান), ‘গর্জনপুরের বাঘা’ (মনিরুজ্জামান), ‘হোয়ার দ্য ওয়াটার স্লিপস’ (তছলিমা আক্তার নূপুর) এবং ‘অপসময়’ (নাসরুল্লাহ মানসুর)।

পিচিং নিয়ে যা বলছেন নির্মাতারা
এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য শাখায় ১৮৯টি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় ১৪০টি ছবি জমা পড়ে। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ৯০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৮৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রযোজক–পরিচালককে পিচিংয়ের জন্য ডাকা হয়। একসঙ্গে এতসংখ্যক আবেদনকারীকে পিচিংয়ে ডাকার কারণে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে পিচিং। সোহেল রানা নামের একজন পরিচালক বলেন, ‘পিচিংয়ের জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছিল, সেটা কম সময়। এত অল্প সময়ে কোথাও পিচিং হয় না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘একটি সিনেমার পিচিং তিন মিনিট! যে প্রেজেন্টেশন তৈরি করছি, কিছুই কেউ দেখছেন না। এক প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই আরেক প্রশ্ন। পরে বলল, এখন আসুন। এভাবে কোনো সিনেমার পিচিং হতে পারে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য অতিরিক্ত সচিব কাউসার আহাম্মদকে ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ খ য় অন দ ন প য় ছ চলচ চ ত র ন র ম ণ র জন ত ক র জন য ণ র জন রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

একটি চিকেন রোল কেনা কীভাবে ইবাদত হতে পারে

দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজগুলো কি শুধুই যান্ত্রিক অভ্যাস, নাকি এর মাধ্যমেও স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব? ইসলামে একটি গভীর নীতি রয়েছে, যা সাধারণ জাগতিক কাজকেও পুণ্যের পথে রূপান্তরিত করতে পারে—আর তা হল ‘নিয়ত’ বা অভিপ্রায়।

অধিকাংশ মানুষ জীবন যাপন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, তাদের কাজের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবে না বললেই চলে। কিন্তু একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা প্রতিটি কর্মকে বরকতপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসেবে দেখতে পারি।

প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’মুহাম্মাদ ফারিস, প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা

প্রখ্যাত লেখক ও প্রডাক্টিভ মুসলিমের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট কোর্সের শিক্ষার্থীদের একটি সহজ অনুশীলনের কথা বলেছেন, “প্রতিটি কাজের আগে একটু থামুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই কাজের মাধ্যমে আমি কীভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি?’”

এক ভাইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি দেখান, এই অনুশীলন প্রথমে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। যেমন, যখন স্ত্রীকে খুশি করতে বা সন্তানের আবদার মেটাতে চিকেন রোল কিনতে যাওয়া হয়, তখন এই কাজকে ‘ইবাদত’ ভাবা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু এই সাধারণ কাজটিকেই আধ্যাত্মিক উচ্চতায় উন্নীত করার একটি কাঠামো রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘নিয়তের স্তরভেদ’।

আরও পড়ুনজীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫নিয়তের স্তরভেদ: জাগতিক উদ্দেশ্য

মুহাম্মাদ ফারিস তাঁর বারাকাহ ইফেক্ট গ্রন্থে যে নিয়তের স্তরভেদের কাঠামোটি আলোচনা করেছেন, তা অনুসরণ করে আমরা একটি চিকেন রোল কেনার কাজটিকে কীভাবে ধাপে ধাপে ইবাদতে পরিণত করতে পারি, তা দেখা যাক।

স্তর ১: ‘আমার কী লাভ?’

এই স্তরে কাজটি করার উদ্দেশ্য থাকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত সুবিধা বা স্বার্থ।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে খুশি থাকে (এবং আমাকে বিরক্ত না করে, বা বাড়িতে শান্তি বজায় থাকে)।

বিশ্লেষণ: এটি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা। এখানে মূল উদ্দেশ্য কাজ শেষ করা বা ঝামেলা এড়ানো। এই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে ৯০% মানুষই তাদের জীবন যাপন করে।

জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ২: ‘মানুষ আমাকে কী ভাববে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সম্মান বা খ্যাতি রক্ষা করা।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, যেন আমার স্ত্রী/মেয়ে আমাকে একজন ভালো স্বামী/বাবা মনে করে।

বিশ্লেষণ: এটি এক ধরনের ‘খ্যাতি ব্যবস্থাপনা’ (Reputation Management)। এখানে কাজটি করা হয় নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়।

স্তর ৩: ‘এই কাজটি করতে আমার কেমন লাগবে’

এই স্তরের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি বা মনস্তাত্ত্বিক প্রেরণা। এটিকে সাধারণত অভ্যন্তরীণ প্রেরণা (Intrinsic Motivation) বলা হয়।

উদ্দেশ্য: আমি চিকেন রোলটি কিনে আনছি, কারণ পরিবারের জন্য জোগান দেওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগে। আমি একজন ভালো বাবা/জোগানদাতা হতে চাই, তারা এর প্রশংসা করল কি না—তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

বিশ্লেষণ: বেশিরভাগ ব্যক্তিগত উন্নয়ন গুরুরা এই স্তরে এসেই থেমে যান। তারা এটিকে সর্বোচ্চ পর্যায় বলে মনে করেন।

আরও পড়ুনসুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার ইবাদত০৮ আগস্ট ২০২৫আধ্যাত্মিক স্তর: পরকালের বিনিয়োগ

একজন বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা বরকত (ঐশী কল্যাণ) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধান করি। তাই জাগতিক উদ্দেশ্য অতিক্রম করে যখন আমরা পরকালের দৃষ্টিকোণ যোগ করি, তখনই কাজটি ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।

স্তর ৪: সুন্নাহর অনুসরণ

এই স্তরে চিকেন রোল কেনা আর কেবল খাবার সংগ্রহ থাকে না, বরং এটি একটি সদকা (দান) এবং উত্তম আদর্শের অনুসরণে পরিণত হয়।

পরিবারের সাথে উত্তম আচরণ: মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের কাছে শ্রেষ্ঠ।” (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৪১৭৭; সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৯৫)

এই হাদিসের আলোকে, স্ত্রীর অনুরোধ রাখা ও সন্তানের আবদার পূরণের মাধ্যমে আপনি শ্রেষ্ঠ মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার নিয়তে কাজটি করতে পারেন।

তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬

সদকা হিসেবে গণ্য হওয়া: অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “তুমি যা-ই খরচ করো না কেন, এর প্রতিদান দেওয়া হবে—এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া খাবারের লোকমাটির জন্যও।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৯৬)

এই হাদিসের ব্যাপকতা অনুসারে, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, তা চিকেন রোলই হোক না কেন—তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়। (মুহাম্মাদ ফারিস, দ্য বারাকাহ ইফেক্ট, পৃষ্ঠা: ৮০, গার্ডেন অফ জান্নাহ পাবলিশিং, লন্ডন, ২০২৪)

এভাবে একটি সাধারণ কাজকে আপনি পরকালের জন্য বিনিয়োগে পরিণত করতে পারেন।

স্তর ৫: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা

এই স্তরটি সর্বোচ্চ। এখানে কাজটি করা হয় জাগতিক কোনো উপকার বা পরকালের পুরস্কারের লোভ ছাড়াই—শুধুমাত্র আল্লাহর ভালোবাসায় ও তাঁর নির্দেশ পালনের নিয়তে।

রিজিকদাতার প্রতিনিধি: আপনি আল্লাহকে আল-রাযযাক (রিজিকদাতা) হিসেবে স্বীকার করেন এবং নিজেকে তাঁর দেওয়া রিজিক আপনার সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখেন। এটি একটি পরম সৌভাগ্যের কাজ।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: আপনি এই ছোট্ট কাজটির মাধ্যমে প্রাপ্ত অসংখ্য নেয়ামতের (শান্তি, দারিদ্র্যের ভয় থেকে মুক্তি, খাদ্যের সহজলভ্যতা, যুদ্ধ না থাকা) জন্য আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই কৃতজ্ঞতা নিজেই একটি ইবাদতে পরিণত হয়। (আল-গাজ্জালি, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৪/৭৬, দারুল মা'রিফা, বৈরুত, ২০০৫)

আপনি যখন উচ্চ স্তরের নিয়ত করেন, তখন একটি তুচ্ছ কেনাকাটাও বরকতপূর্ণ অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়, যা আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযুক্ত করে এবং আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থাকে উন্নত করে।

অভ্যাসকে ইবাদতে রূপান্তর

প্রথমদিকে হয়তো মনে হবে, এত কিছু ভাবাটা একটু বেশিই হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি বছরের পর বছর ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকা জাগতিক অভ্যাসকে পুনরায় তারে সংযুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। এই অভ্যাস আসলে এমন একটি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই, যা সাধারণ জাগতিক কাজগুলো থেকে আধ্যাত্মিক দিকটিকে মুছে ফেলেছে।

প্রতিটি কাজের আগে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজের নিয়তকে যাচাই করা একজন মুমিনের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। আপনি যখন নিজের নিয়তকে শুধু স্ত্রী বা সন্তানের খুশি থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে উন্নীত করবেন, তখন প্রতিটি পদক্ষেপই হবে পুণ্যের পথে যাত্রা।

আরও পড়ুননিজের যত্নও একটি ইবাদত১১ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ