বাংলা গানের প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০২০ সালের ৬ জুলাই পরপারে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি শিল্পী। জীবদ্দশায় ১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া কালজয়ী গানের সংখ্যাও কম নয়। 

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের সহশিল্পী ছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। জুটি বেঁধে তারা বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। 

এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “একজন বড় মাপের শিল্পী বলতে যা বুঝি সেটা ছিলেন তিনি। এমন শিল্পী চলচ্চিত্রে আর আসবে না। চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার নাম।” 

আরো পড়ুন:

সংগীতশিল্পী জীনাত রেহানা মারা গেছেন

৪ কোটি শিশুকে শরণার্থী বানিয়েছে যুদ্ধ আর সংঘাত

এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হলে তাকে বাসায় নিয়ে যেতেন সাবিনা ইয়াসমিন। এমন ইচ্ছা প্রকাশ করে এই শিল্পী বলেন, “এখন যদি এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হতো কিছুই বলতাম না। হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসতাম। আমার সংগীত জীবনে অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মানুষটার সাথে। কত যে গান গেয়েছি দুজনে তার হিসাব নাই। এমন শিল্পী যুগে যুগে আসে না।” 

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। সেখানেই কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোরের বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি। তার মা ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর। 

আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন তিনি। 

এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন। 

‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। 

১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোর। গানগুলো হলো— ‘আমার সারা দেহ খেওগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। 

এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেওগো মাটি’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ প্রভৃতি। 

১৯৮৭ সালে আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টুর সঙ্গে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য ‘প্রবাহ’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এন্ড্রু কিশোর। ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক। দুজনেই এখন বিদেশে পড়াশোনা করছেন।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র র

এছাড়াও পড়ুন:

মনিরামপুরে বাসের ধাক্কায় দু’জন নিহত

যশোরের মনিরামপুরে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দু’জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিনজন। রোববার দুপুর ২টার দিকে পৌর শহরের মনিরামপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণপাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ট্রাকটি জব্দ ও চালককে আটক করেছে। 

নিহতরা হলেন- মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের মৃত আবুল খায়ের দফাদারের ছেলে নাজমুল হোসেন এবং গাইবান্ধা জেলার সাঘাট উপজেলার আব্দুল্লাহপাড়া গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে রতন মিয়া। 

আহতদের মধ্যে সোয়াইব হোসেন ও ইব্রাহিম হোসেনকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বাবুল আক্তার নামে একজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনিরামপুর পৌর শহর থেকে ভ্যানে করে কয়েকজন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ভ্যানটি মনিরামপুর কলেজের সামনে পৌঁছলে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় যশোরগামী একটি বাস। এ সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান রতন। এরপর বাসটি পালিয়ে যেতে চাইলে পথচারী নাজমুল শেখ বাধা দিতে চান। তখন বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যান নাজমুল। পরে স্থানীয়রা চালক আবদুল গনিসহ বাসটি আটক করে। 

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, নিহত দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাকটি জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ