চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভাগনের ছুরিকাঘাতে মামা খুন হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম মো. হারুনুর রশিদ (৪৫)। হারুন উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম তালবাড়িয়া গ্রামের মো. সেকান্দরের ছেলে। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হারুনুর রশিদ নিজ বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জায়গাজমি–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানা গেছে।

নিহত হারুনুর রশিদের প্রতিবেশী মো.

বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হারুনুর রশিদ কুয়েতপ্রবাসী ছিলেন। ভাগনে মো. শাহিন আলমের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে জায়গাজমি–সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে আজ সকালেও দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। বিকেলে বিষয়টি সমাধান করতে আমাদের ডাকা হয়। সেখানে আলাপ–আলোচনা চলছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে দুজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় শাহিন আলম মামা মো. হারুনুর রশিদের বুকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলে ঢলে পড়েন তিনি। পরে আমরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাড়িতে স্ত্রী ও দুটি ছোট সন্তান রয়েছে হারুনুর রশিদের। কিছুদিন পরে আবার প্রবাসে চলে যাওয়ার কথা ছিল হারুনুর রশিদের।’

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা সদরের সেবা আধুনিক হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ রোম্মান প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত ব্যক্তির বুকের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাতের গভীর ক্ষত ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। খুনিকে গ্রেপ্তার করতে আমরা কাজ করছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রসর

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেমেছে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ। তবে শান্তি ফেরেনি। একে তো ফিলিস্তিনিরা নিজ ঠিকানায় ফিরে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছেন না, এরপর আবার চুক্তি অনুযায়ী এখনো গাজায় নির্ধারিত পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে উপত্যকাটিতে খাবারের সংকট কাটছে না।
বুধবার ছিল যুদ্ধবিরতির ষষ্ঠ দিন। আগের পাঁচ দিনে চুক্তি অনুযায়ী বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল। তবে হামাস মৃত জিম্মিদের ফেরত পাঠাতে দেরি করছে—এমন অজুহাত তুলে ইসরায়েল জানায়, গতকাল থেকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দেবে তারা। দক্ষিণ গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিংও আপাতত চালু না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে ক্রসিংটি খুলে দেওয়া হয়।
যদিও যুদ্ধবিরতির পর থেকেই দিনে নির্ধারিত ৬০০ ট্রাকের অনেক কম ত্রাণ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এদিন তাদের মাধ্যমে মাত্র ১৩৭ ট্রাক ত্রাণ উপত্যকাটিতে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ট্রাকে ময়দা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তবে পানির পরিমাণ ছিল কম। জ্বালানি তো ছিলই না।

যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত যেসব মানুষ গাজা নগরীতে ফিরেছেন, তাঁরা পানি নিয়ে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। নগরীর বাসিন্দা গাদা আল কুর্দ বলেন, প্রায় সব এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনো পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। আর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা মাহমুদ এমাদ রোস্তম বলেন, কিছু ত্রাণ প্রবেশ করায় খাবারের সরবরাহ বেড়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।

এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরতে পারছেন না বাসিন্দারা। এসব এলাকায় ফিরতে যাওয়া ৬ জনসহ মোট ৯ ফিলিস্তিনিকে মঙ্গলবার হত্যা করেছেন ইসরায়েলি সেনারা। বুধবারও সুজাইয়া এলাকায় দুই ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই বছরের বেশি সময়ে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৯৩৮।

নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস

২০০৭ সালে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে ছয় দিনের সংঘর্ষের পর থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছিল হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সে নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এখন কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর আবার নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহর এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে।

গাজার এসব এলাকায় এখন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের হামলা না থাকলেও বিগত কয়েক দিনে হামাসের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবশেষ মঙ্গলবার সকালে হামাস নিরাপত্তা বাহিনীর এবং হিল্লেস পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।

এরই মধ্যে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, পিছমোড়া করে হাত বাঁধা সাতজনকে টেনেহিঁচড়ে গাজা নগরীর একটি চত্বরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের বসিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ভিডিওটি গত সোমবার ধারণ করা। আর সাতজনকে হামাসের সদস্যরাই গুলি করে হত্যা করেন।

গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণের ট্রাক। বুধবার খান ইউনিসে

সম্পর্কিত নিবন্ধ