রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) তারা চিকিৎসাধীন ছিল। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হয়েছে।

গতকাল মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলো আব্দুল মুসাব্বির মাকিন (১৩) ও আফরোজ আইমান (১০)। মুসাব্বির মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আফরোজ পড়ত স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে।

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এ নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ জন মারা গেল। গতকালের দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুসাব্বিরের শরীরের ৭০ শতাংশ এবং আফরোজের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৩। এর মধ্যে দুজন ছাড়া বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিন শিশু ও দুই অভিভাবকের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১০ জন। এর মধ্যে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৮ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন ভর্তি আছেন। সেই হিসাবে আহতদের মধ্যে এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫০ জন।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আহতদের বিষয়ে গতকাল বিকেলে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন পাঁচজনের অবস্থা ক্রিটিক্যাল (সংকটাপন্ন)। তাঁদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাঁদের চেয়ে একটু কম গুরুতর অর্থাৎ সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ১০ জন। আর ইন্টারমিডিয়েট (মাঝারি) ক্যাটাগরিতে পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে ১০ জনকে। আরও ১৫ জন বার্ন ইনস্টিটিউটের কেবিনে আছেন।

অবস্থার উন্নতিও হয়েছে

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের চিকিৎসা দল। প্রতিদিনই তাঁদের সঙ্গে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় হচ্ছে। বিদেশি চিকিৎসকেরাও রোগীদের দেখছেন। সব মিলিয়ে দগ্ধ হয়ে যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাঁদের কারও কারও শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয়েছে।

এ বিষয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দীন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, একটি ভালো খবর যে কয়জনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তাঁদের থেকে দুজনের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাঁদের ভেন্টিলেটর খুলে ফেলা হয়েছে। তাঁরা নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছেন। শনিবার (আজ) চার থেকে পাঁচজন রোগীকে ছুটি (ছাড়পত্র) দেওয়া যাবে।

উৎসুক জনতার ভিড়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থানটি দেখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফটকে গতকালও উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। পাঁচ-সাত মিনিট পরপর ৮-১০ জনকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

গত সোমবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে আছে। তবে গত বুধবার ও গত বৃহস্পতিবার এমন মানুষের প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

তবে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনে গিয়ে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। কলেজের প্রধান ফটকে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা উৎসুক লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের গতকালও কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মানুষকে আর কতক্ষণ আটকে রাখা যায়। কর্তৃপক্ষ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে বলেছে, অল্প অল্প করে লোকজনকে প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে। তারা ৪ নম্বর ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তবে মিডিয়াকে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত সোমবার বিধ্বস্ত হয়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ঢুকে পড়ে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম ন ব ধ বস ত র ম ইলস ট ন স ক ল ত র ঘটন র পর চ প রব শ উৎস ক গতক ল ১০ জন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে মার্জিন হিসাবে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই এ সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে কমিশনে জমা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্টব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।

আরো পড়ুন:

৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ

ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা

ওই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা জমা দানের বিষয়ে আজকের কমিশন সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:

* গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

* পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসকল বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ