আহতদের খোঁজ নিতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা
Published: 26th, July 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দীনের কাছ থেকে আহতদের বর্তমান অবস্থা জানতে চান।
অধ্যাপক নাসির উদ্দীন জানান, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ‘মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের’ পরামর্শক্রমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক জানান, সবার সম্মিলিত মূল্যায়নে বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চারজন ‘ক্রিটিক্যাল’, নয়জন ‘সিভিয়ার’ এবং ২৩ জন ‘ইন্টারমিডিয়েট’ ক্যাটাগরির রোগী আছেন। এই মূল্যায়ন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, ওষুধ বা অন্য কিছুর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না জানতে চান।
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে যে দুয়েকটি সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা দল সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা হতাহতের বিস্তারিত জানতে চাইলে তাঁর বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.
সায়েদুর রহমান আরও জানান, প্রায় ১০টি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তী সময়ে অন্য হাসপাতালে রোগীদের দ্রুত স্থানান্তর করার কারণে প্রথম দিকে নিহত ও আহত রোগীর সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেহাবশেষ ছিল, যেগুলো ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়েছে। ফলে কিছু সময় লেগেছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী জানান, রোগীদের স্থানান্তরের সময় আম্বুলেন্সের অভাব প্রকটভাবে বোঝা গেছে। এ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অবিলম্বে এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতে ও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিংয়ের প্রতি জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন তিনি। এ কার্যক্রমে নিহতদের পরিবার, আহত ও আহতের পরিবার এবং মাইলস্টোন স্কুলের প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর পাশাপাশি দগ্ধ রোগীদের নিকটাত্মীয়দের হাসপাতালে অবস্থানের সময় তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে পরিচালককে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
এ ঘটনায় বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ সবাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে যাঁরা এই বিপদের সময় বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার হাসপাতাল পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসকরা
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের বিশেষ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান শেষে দেশে ফিরে গেছে ভারতীয় চিকিৎসক দল।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং সফদরজং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত চার সদস্যের দলটি ঢাকা ছেড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসে এই চিকিৎসক দল।
গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে বহু মানুষ হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই ভারত বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভারতীয় চিকিৎসক দলটি জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে। তারা মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় কারিগরি পরামর্শ প্রদান করেন এবং জটিল কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত বিনিময় করেন।
ভারতীয় চিকিৎসকরা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গৃহীত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ইনস্টিটিউটের বার্ন কেয়ার ইউনিট ও ক্রিটিক্যাল কেস ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের দক্ষতার প্রশংসা করেন তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে ভারত আরো চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ দেওয়া হবে।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, দেশটির মেডিকেল টিমের এই সফর দুই দেশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও সহানুভূতির চিরন্তন বন্ধনের প্রতিফল।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী