দ্বিধান্বিত কূটনীতি, অসমন্বিত পদক্ষেপ
Published: 5th, August 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিছক একটি রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং তা বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানে সম্ভাব্য পুনর্গঠনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। রাজপথে নেমে আসা নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও বৈষম্যহীনতার দাবি—যা কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেই নয়, বরং দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক অবস্থানকেও নতুন করে চিন্তার মুখে ফেলেছে। এ প্রজন্ম আর বলয়–নির্ভরতা চায় না। তারা চায় নীতিনিষ্ঠ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও সমতাভিত্তিক এক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে আমরা দেখছি, বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান এখন দ্বিধা, অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতার এক সংকটময় ধাঁধায় আটকে পড়েছে।
বাংলাদেশ অতীতে দুই প্রতিবেশী, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে একধরনের দোদুল্যমান নীতি অনুসরণ করেছে। কখনো ভারতনির্ভর, কখনো পাকিস্তানপন্থী অবস্থান—এই দোলাচল রাজনৈতিক শিবিরভেদে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে আজকের প্রজন্ম এমন এক বাংলাদেশ চায়, যার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হবে কোনো বলয়-নির্ভরতার ভিত্তিতে নয়, বরং নীতিগত অবস্থান, আত্মমর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থকে ভিত্তি করে।
এই পরিবর্তিত প্রজন্মের দাবি ও বলয়নিরপেক্ষ নীতির প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়া এবং এ–সংলগ্ন অঞ্চলে দ্রুত রূপান্তরশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়। মিয়ানমারে নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও সেনা-জাতিগত দ্বন্দ্ব, রোহিঙ্গা–সংকট, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা এবং বঙ্গোপসাগর ঘিরে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি এখন অস্থির হয়ে আছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান, সিদ্ধান্ত ও কূটনৈতিক কৌশল কতখানি সুসংগঠিত, আত্মনির্ভর ও পেশাগত যোগ্যতাসম্পন্ন, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।
এম হুমায়ুন কবির.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক প রজন ম অবস থ ন ক টন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয় ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নিলেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান মামদানি। তিনি শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে তার এই জয় সহজে আসেনি। নির্বাচনী প্রচারের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তিনি নিজ দলের রিপাবলিকান প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। নিউইয়র্কবাসী জোহরান নয়, কুয়োমোকে ভোট দিতে বলেছেন।
আরো পড়ুন:
কে এই জোহরান মামদানি?
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, আপনার হাতে বিকল্প নেই। আপনাকে ভোট দিতেই হবে তাকে। আমি আশা করব সে দারুণ কাজ করবে। সে কাজের মানুষ, মামদানি নয়।”
তবে শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ডেমোক্র্যাট মামদানির জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি শেষমেশ। তিনি ৫০.৪ শতাংশ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেছেন নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ভোটে জিতে নিজের বিজয় ভাষণেই ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন জোহরান মামদানি। তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি যত দূর জানি, আপনি দেখছেন। আমি আপনাকে চারটি শব্দ বলব: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)।”
ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে মামদানি আরো বলেন, “আমাদের মধ্যে কারো কাছে আপনি পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি বলেন, “যদি কেউ এই জাতিকে দেখাতে পারে কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো যায়, তবে সেটি সেই শহরই, যেখানে ট্রাম্পের উত্থান ঘটেছিল। রাজনীতির এই অন্ধকার সময়ে নিউইয়র্ক হবে আলোর প্রতীক।”
ব্রুকলিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শ্রমজীবী মানুষকে ধনী ও ক্ষমতাবানরা বোঝাতে চেয়েছে যে ক্ষমতা তাদের হাতে নয়। কিন্তু গত এক বছরে আপনারা প্রমাণ করেছেন, আপনাদের হাতেই সেই ক্ষমতা। আজকের এই জয় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”
মার্কিন রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত মামদানি। আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় জন্ম হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র। তার পিতা উগান্ডার বিখ্যাত লেখক মাহমুদ মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানি নিউ ইয়র্কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাকে নানাভাবে নিশানা করে আসছিলেন ট্রাম্প। তাকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী মামদানি ভোটে জিতলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, “যদি নিউ ইয়র্ক একটি কমিউনিস্ট মেয়র বেছে নেয়, তা হলে আমি ওই শহরের জন্য ফেডারেল অর্থবরাদ্দ বন্ধ করে দেব, যতক্ষণ না আইন আমাকে তা দিতে বাধ্য করছে।”
তবে ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক আক্রমণের পরেও নিউ ইয়র্কের মেয়র পদের জন্য নির্বাচিত হলেন মামদানি। প্রায় এক বছর আগে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা মামদানির জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় উত্থান। একজন তুলনামূলক অখ্যাত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছে গেলেন তিনি।
ঢাকা/ফিরোজ