রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বেড়াতে এসে এক তরুণী (২০) ও এক কিশোরী (১৫) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা। আজ শুক্রবার গোয়ালন্দ থানায় হওয়া মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।

দুজনকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার বিল মামুদপুর গ্রামের ফয়সাল শেখ (২২), গোয়ালন্দ উপজেলার পূর্ব উজানচর দরাপের ডাঙ্গী গ্রামের রাকিব মোল্লা (২১) ও উজানচর গণি শেখের পাড়ার সজীব মোল্লা (২৪)। আজ বিকেলে তিন আসামিকে ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী তরুণী ফরিদপুরের একটি সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আগামী রোববার তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। আর কিশোরী শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাঁরা সম্পর্কে খালা ও ভাগ্নি।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরুণী কলেজে যাতায়াতকালে ফয়সাল তাঁকে উত্ত্যক্ত করতেন। কয়েক মাস আগে তরুণীর বাবা ফয়সালের বাবার কাছে বিচার দেন। এতে ফয়সাল আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময় ফয়সাল অন্যত্র বিয়ে করেন। বিয়ের পরও মাঝেমধ্যে তরুণীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। ফয়সাল গোয়ালন্দের গোধূলি পার্কসংলগ্ন একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে ফয়সাল ওই তরুণীকে ফোন করে গোধূলি পার্কে বেড়াতে আসার প্রস্তাব দেন। ওই তরুণী তাঁর প্রতিবেশী ভাগ্নি ও এক বন্ধুকে নিয়ে বিকেলে গোধূলি পার্কে আসেন। সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজন তরুণ এসে এই তিনজনকে পার্কের ভেতর স্থানীয় এক বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের দুটি মুঠোফোন এবং পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। সন্ধ্যার পর ফয়সাল তাঁদের এগিয়ে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে দেরি করাতে থাকেন। পরে রাত ৯টার দিকে উজানচর রিয়াজ উদ্দিনপাড়ার একটি কাঁচা রাস্তায় নিয়ে যান। সেখানে ফয়সালের সহযোগিতায় অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে ওই তরুণী ও কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এ কথা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে তরুণীরা দৌড়ে স্থানীয় এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন।

আজ দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান মোল্লার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কান্না করতে করতে দুটি মেয়ে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় দৌড়ে তাঁর বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। তাঁদের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর ওই তরুণীর বাবাকে জানানো হয়। তিনি দিবাগত রাত ১২টার দিকে এসে তাঁদের নিয়ে যান।

এদিকে ঘটনার দুই দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে উজানচর আবুলের দোকান নামক এলাকায় ফয়সালের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজন ধর্ষণে অভিযুক্ত রাকিব ও সবুজকে ধরে মারপিট করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাকিব ও সবুজ এবং পাশে পালিয়ে থাকা ফয়সালকেও গ্রেপ্তার করে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, তরুণীর বাবা বাদী হয়ে আজ গ্রেপ্তার তিনজনসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। তিন আসামিকে বেলা তিনটার দিকে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে জবানবন্দি প্রদানের জন্য ভুক্তভোগী ব্যক্তিদেরও আদালতে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল শনিবার তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তর ণ র ব ব ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

ওই বিবৃতিতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ-সহিংসতা ও গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত ও ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন বলে জানান বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বাহিনী আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

নাগরিক সমাজের ৯ দফা দাবিগুলো হলো:

১. খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগী কিশোরী এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহায়তা দিতে হবে।

২. সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মদদের অভিযোগের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

৩. সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন, তাঁদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. নিহত ও আহতদের পরিবারকে সুরক্ষা, যথার্থ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. পাহাড়ে দীর্ঘদিনের সামরিকীকরণ নীতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ, রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে হবে।

৬. পাহাড়ে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্প্রীতিনির্ভর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যেন কাঠামোগত নিপীড়ন চালানো না হয় এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা যেন আরও হয়রানি, গ্রেপ্তার ও আইনি নিপীড়নের শিকার না হয়—রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. পাহাড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর দমন না হয় এবং জনগণ সত্য জানতে পারে।

৯. নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতায় প্রাণহানির কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি আসকের২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আসিফ শাহান, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, তাসনীম মাহবুব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানজুর আল মতিন, কাজী জাহেদ ইকবাল, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সংগীতশিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদসহ ৪১ বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এইচআরএফবির২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে তিনজনকে হত্যার প্রতিবাদে সিপিবির বিক্ষোভ
  • খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগের তদন্তসহ ৯ দফা দাবি