ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে বের করতে আলোচনার জন্য ১৫ আগস্ট শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ সেনাদের ইউক্রেন আক্রমণের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন—নির্বাচনী প্রচারের সময় এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক মাসে ইউক্রেনে একটি শান্তিচুক্তির জন্য চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু একাধিক দফায় শান্তি আলোচনা, ফোনে আলোচনা ও কূটনৈতিক সফরের পরও এখন পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।

ট্রাম্প শুরুতে পুতিনকে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মধ্যমে একটি শান্তিচুক্তির জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে অগ্রগতি না হওয়ায় এখন অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে পুতিনকে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করতে বাধ্য করতে চাইছেন।

‘ইউক্রেন ও রাশিয়া—উভয়ের মঙ্গলের জন্য কিছু এলাকা অদলবদল করা হবে।’ এ নিয়ে বিস্তারিত আর কোনো কিছু তিনি বলেননিডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের এই চাপ প্রয়োগের মধ্যেই দুই নেতার বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথে বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য কেন আলাস্কা বেছে নেওয়া হয়েছে, ওই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সশরীর উপস্থিত থাকবেন কি না, বা তাঁকে ফোনে যুক্ত করা হবে কি না, এসব নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে।

কখন ও কোথায়

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর আসন্ন বৈঠক হবে ১৫ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সুদূর উত্তরাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আলাস্কায়।

পরে ক্রেমলিন থেকেও বৈঠকের খবর নিশ্চিত করা হয়।

কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষ থেকে আগামী সপ্তাহে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক হওয়া নিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। এবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল।

গতকাল শুক্রবার ক্রেমলিন আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে একে ‘একেবারেই যৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে।

ট্রাম্প শুরুতে পুতিনকে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মধ্যমে একটি শান্তিচুক্তির জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে অগ্রগতি না হওয়ায় এখন অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে পুতিনকে ইউক্রেনে আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করতে চাইছেন।

এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁরা আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন, এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে আমার পক্ষে যা সম্ভব, তার সবই আমি করব।’

এখানে ‘তাঁরা’ বলতে ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কথা বুঝিয়েছেন।

বৈঠকের বিষয়ে গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া—উভয়ের মঙ্গলের জন্য কিছু এলাকা অদলবদল করা হবে।’ এ নিয়ে বিস্তারিত আর কোনো কিছু তিনি বলেননি।

কেন আলাস্কা

ট্রাম্প-পুতিন আসন্ন বৈঠকটি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হবে। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। অঙ্গরাজ্যটির পশ্চিম প্রান্ত থেকে রাশিয়ার পূর্বতম অংশ খুব বেশি দূরে নয়, মাঝে শুধু বেরিং প্রণালি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র ইউরি উশাকভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আলাস্কা ও আর্কটিক এমন অঞ্চল, যেখানে আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে এবং বড় পরিসরে পারস্পরিকভাবে লাভজনক প্রকল্পের সম্ভাবনাও আছে।’

তবে এবারের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ অধিক মনযোগ পাবে বলে জানান উশাকভ।

উশাকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্টরা অবশ্যই সন্দেহাতীতভাবে এবার ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে আলোচনায় মনোযোগ দেবেন।’

দুই প্রেসিডেন্টের পরবর্তী সাক্ষাৎ রাশিয়ার মাটিতে হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন উশাকভ। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এরই মধ্যে সে অনুযায়ী আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে।

আলাস্কা ও আর্কটিক এমন অঞ্চল, যেখানে আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে এবং বড় পরিসরে পারস্পরিকভাবে লাভজনক প্রকল্পের সম্ভাবনাও আছেইউরি উশাকভ, ক্রেমলিনের সহযোগী

পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এ কারণে পুতিন আইসিসির সদস্যদেশগুলোতে গেলে তারা পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে। স্বাভাবিকভাবেই তাই ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের স্থান ঠিক করতে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্যরাষ্ট্র নয়।

পুতিন আগে বৈঠকের সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আর গণমাধ্যম বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন করেছিল, সম্ভাব্য স্থান হতে পারে তুরস্ক, চীন বা এমনকি ভারতও।

জেলেনস্কি কি থাকবেন

জেলেনস্কি এই বৈঠককে ত্রিপক্ষীয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি বারবার বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাই শান্তির পথে অগ্রগতির একমাত্র উপায়।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহের শুরুর দিকে রাশিয়া সফরে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্ভবত নাকচ করে দিয়েছেন বলেই মনে হয়েছে।

পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এ কারণে পুতিন আইসিসির সদস্যদেশগুলোতে গেলে তারা পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে।

গত জুনে ইস্তাম্বুলে আলোচনার সময় রুশ আলোচকেরা স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পুতিন-জেলেনস্কি সাক্ষাৎ কেবল আলোচনার ‘শেষ ধাপে’ হতে পারে, যখন উভয় পক্ষ শান্তিচুক্তির শর্তে একমত হবে।

শীর্ষ বৈঠকের শর্ত হিসেবে পুতিনকে কি অবশ্যই জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে হবে, গতকাল ট্রাম্পকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘না, তাঁকে করতে হবে না।’

আরও পড়ুন১৫ আগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বসবেন ট্রাম্প, ইঙ্গিত দিলেন অঞ্চল বিনিময়ের৫ ঘণ্টা আগে

শেষ কবে ট্রাম্প-পুতিন সাক্ষাৎ হয়েছিল

ট্রাম্প ও পুতিন সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০১৯ সালে জাপানে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তাঁরা কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন।

পুতিন তার আগে ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন। সে সময় ট্রাম্প প্রকাশ্যে পুতিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে হওয়ায় সমালোচনা হয়েছিল।

রাশিয়া ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত জুনে ইস্তাম্বুলে আলোচনার সময় রুশ আলোচকেরা স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পুতিন-জেলেনস্কি সাক্ষাৎ কেবল আলোচনার ‘শেষ ধাপে’ হতে পারে, যখন উভয় পক্ষ শান্তিচুক্তির শর্তে একমত হবে।

আলোচনা কী অবস্থায় আছে

কূটনৈতিক তৎপরতা ও একাধিক দফায় শান্তি আলোচনার পরও ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে কোনো সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। যে আহ্বান তিনি এখন পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন।

গত জুনে যে আলোচনা হয়েছিল সেখানে রাশিয়া দাবি করেছিল, রাশিয়া ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলের দখল নিয়েছে, সেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে, কিয়েভকে ওই অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে হবে, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদান করতে পারবে না।

আর কিয়েভ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চায়। তারা বলেছে, নিজেদের সার্বভৌম ভূখণ্ডের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ তারা কখনো স্বীকার করবে না। তবে তারা এটা স্বীকার করেছে, রাশিয়ার দখলকৃত ভূমি ফেরত পেতে হলে তাদের যুদ্ধ করে নয়, বরং কূটনৈতিক পথেই এগোতে হবে।

কিয়েভ পশ্চিমা সমর্থকদের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে, যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে বিদেশি সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি চুক্তির পরই পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক সম্ভব: রাশিয়া১৭ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন য দ ধ য দ ধ বন ধ ইউক র ন ও ইউক র ন র আল স ক য় ক টন ত ক ক প রক কর ছ ল হয় ছ ল বন ধ ক র জন য আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যাচ মিসই টার্নিং পয়েন্ট হয়েছে, মনে করেন জাকেরও

একটা ক্যাচই কি তাহলে ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিল!

তানজিম হাসানের বলে অভিষেক শর্মা ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের নাগালও পেয়েছিলেন জাকের আলী। তবে বলটা তিনি গ্লাভসে জমাতে পারেননি। তখনো অভিষেকের রান ৭ বলে ৭। জীবন পাওয়ার পর থেকেই বিধ্বংসী হতে শুরু করেন ভারতের বাঁহাতি ওপেনার।

২৫ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর থ্রোতে রান আউট হয়ে ফেরার আগে করে যান ৩৭ বলে ৭৫ রান। জাকের ক্যাচ ছাড়ার পর অভিষেকের ব্যাট থেকে এসেছে আরও ৬৮ রান। শেষ পর্যন্ত ভারত ৬ উইকেটে ১৬৮ রান করার পর দুবাইয়ে কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে ৪১ রানে।

জাকেরের ওই ক্যাচ মিসই কি তাহলে বদলে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা জাকের বলেছেন, ‘আপনি বলতে পারেন। কারণ সে এরপর দ্রুত রান তুলেছে।’ ক্যাচটা তাঁর ধরা উচিত ছিল বলেও মনে করেন জাকের, ‘আসলে এটা রেগুলেশন ক্যাচ ছিল। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে এটা ধরা উচিত। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু বলটা পড়ে গেছে।’

রানআউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় জাকের আলীকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ