১৫০ বর্গফুটের ঘরে ৮০ ভোটার, তাহলে কি ইসির বিরুদ্ধে রাহুলের কারচুপির অভিযোগ সত্য
Published: 9th, August 2025 GMT
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ যে নিছকই মনগড়া নয়, ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে সেটি উঠে এসেছে। লোকসভার বিরোধী নেতার অভিযোগ সরেজমিন যাচাই করতে গিয়ে ওই গণমাধ্যমের সাংবাদিক দেখেন, কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের একটি ঠিকানায় ১৫০ বর্গফুটের এক ঘরে সত্যি সত্যিই ৮০ জন ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা রয়েছে।
গত বৃহস্পতি নয়াদিল্লিতে প্রথমে কংগ্রেস সদর দপ্তর, তারপর নিজের বাসভবনে ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের নৈশভোজের আসর এবং গতকাল শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ‘ভোটচুরি’র প্রমাণ দাখিল করেন রাহুল। অভিযোগ করেন, বিজেপিকে জেতাতে ইসির কর্তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট চুরি করে চলেছেন।
অবশ্য ইসি রাহুলের সেই সব অভিযোগ ‘পুরোনো বোতলে নতুন মদ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা রাহুলকে বলেছে, শপথ গ্রহণ করে হলফনামা দিয়ে ইসির কাছে অভিযোগ জানাতে, না হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে। রাহুলের প্রত্যুত্তর, তিনি সংসদে সংবিধান ছুঁয়ে শপথ নিয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রমাণ দাখিল করেছেন। ইসির উচিত তা তদন্ত করা।
সেই তদন্ত ইসি নয়, করল ইন্ডিয়া টুডে টিভি। গতকাল শুক্রবার রাতে ওই নিউজ চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের ৪৭০ নম্বর বুথের মুন্নি রেড্ডি গার্ডেনের ৩৫ নম্বর ঠিকানায় সত্যি সত্যিই ৮০ জন ভোটারের নাম নথিবদ্ধ করা রয়েছে। কিন্তু ভোটারদের কেউই সেখানে থাকেন না।
মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে নথিভুক্ত ভোটারদের মধ্যে ১ লাখ ২৫০ জন ভুয়া বলে দাবি করেছিলেন রাহুল। বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনের সাত বিধানসভা এলাকার মধ্যে ছয়টিতে হারলেও বিজেপি মহাদেবপুরায় এক লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল। ফলে লোকসভা আসনটিতে তারা ৩২ হাজার ভোটে জিতে যায়।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, বিজেপিকে জেতাতে ইসি এভাবেই বেছে বেছে ভোটচুরি করে চলেছে।
ইন্ডিয়া টুডে টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ওই ১৫০ বর্গফুট ঠিকানার বর্তমান বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিক। নাম দীপংকর। তিনি খাবার ডেলিভারির কাজ করেন। এক মাস আগে ওই ঠিকানায় থাকতে এসেছেন। দীপংকর বলেন, তাঁর নাম ভোটার তালিকায় ওঠেনি। ওই ঠিকানায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কাউকে তিনি চেনেনও না।
ওই ঠিকানার মালিকের সঙ্গেও কথা বলেছে ইন্ডিয়া টুডে টেলিভিশন। তাঁর নাম জয়রাম রেড্ডি। তিনি প্রথমে নিজেকে বিজেপির কর্মী হিসেবে দাবি করেছিলেন। পরে বলেন, তিনি বিজেপির সমর্থক ও ভোটার, দলীয় কর্মী নন।
জয়রাম স্বীকার করেন, বহু ভাড়াটে ওখানে থাকেন। ভোটার কার্ডে নাম তোলেন। তারপর অন্যত্র চলে যান। তবে ভোটের সময় অনেকেই চলে আসেন। ভোটও দেন। জয়রাম স্বীকার করেন, এসব ঘটনার কথা তিনি এত দিন নির্বাচন আধিকারিকদের জানাননি। তবে এবার জানাবেন।
জয়রাম রেড্ডি এ কথাও স্বীকার করেন, রাহুলের অভিযোগ অসত্য নয়। ভোটার তালিকায় ওই ঠিকানায় ৮০ জনের নাম থাকার অভিযোগটি সত্যি। তাঁর কথায়, তাঁদের অনেকেই ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, বিহার বা অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ কেউ এখনো ভোটের সময় আসেন। ভোট দেন। তারপর চলেও যান।
মহাদেবপুরার ওই এলাকা আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) করিডর হিসেবে পরিচিত। সেখানকার বুথ পর্যায়ের অফিসার বা ‘বিএলও’ মুনিরত্নাও কংগ্রেস নেতার ওই অভিযোগ সঠিক বলে মেনে নিয়েছেন।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদককে মুনিরত্না বলেন, বহু কর্মী ওখানে কাজ খুঁজতে আসেন। এ ধরনের ছোট ছোট ঘরে ভাড়া থাকেন। ভাড়ার রসিদ দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। ভোটার কার্ড পান। তাঁদের অনেকেই পরে অন্যত্র চলে যান। কেউ কেউ থাকেন। তাঁরা প্রাইভেট নিরাপত্তা রক্ষী অথবা ঘর–গৃহস্থালির কাজ করেন।
প্রতিবেদককে মুনিরত্না বলেন, ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য ইসিতে পাঠানো হলেও পদ্ধতিগত কারণে এখনো বাদ যায়নি। অনেকে নাম বাদ দিতে চান না। নির্বাচনের সময় এসে ভোট দিয়ে যান।
রাহুলের অভিযোগ ছিল, মহাদেবপুরার মোট সাড়ে ছয় লাখ ভোটারের মধ্যে এক লাখই ভুয়া। এসব ভুয়া ভোট বিজেপির পক্ষে গেছে। নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি এভাবে ভোট চুরি করে দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলেছে।
রাহুল বলেছিলেন, মহাদেবপুরা শুধু একটা ‘টেস্ট কেস’ বা নমুনামাত্র। ইসি প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে এমন বহু কারচুপি প্রমাণিত হবে।
কিন্তু ইসি সহযোগিতায় প্রস্তুত নয়। গত শুক্রবার রাহুল তাই রাজ্যের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে বলেছেন, অভিযোগ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে। রাহুল প্রকাশ্যেই বলেছেন, দোষীদের কেউ পার পাবেন না। অবসরে গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ঠ ক ন ব ধ নসভ ইন ড য় আসন র জয়র ম ল কসভ
এছাড়াও পড়ুন:
যে সিনেমা বাঁচিয়েছিলো ছয় জনের প্রাণ
পপ সংস্কৃতিতে পালানোর গল্পগুলো অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। সেটা হোক গল্প, উপন্যাস, নাটক কিংবা সিনেমা। পলায়নের গল্পগুলো রোমাঞ্চ, সাহস এবং সিনেমাটিক স্বাধীনতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়ে থাকে। এসব গল্প মানুষকে উৎসাহিত করে। আর সেই পলায়নের গল্পে যদি বাস্তব জীবনের উপাদান থাকে, তাহলে গল্পটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
দিনটি ছিলো ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর। অর্থাৎ ৪৬ বছর আগে, ইরানের উত্তেজিত জনতা তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিললেন। প্রচুর ভাঙচুর চালিয়েছিলেন এবং কূটনীতিক ও বেসামরিক নাগরিকসহ ৬৬ জন আমেরিকানকে জিম্মি করেছিলো। ওইদিন আতঙ্কিত আমেরিকানরা গোপন সরকারি নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলে, প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করেছিলেন। আর ইরানের রাস্তাঘাটে অবস্থান নিয়েছিলেন বিপ্লবীরা। তারা আমেরিকানদের খুঁজছিলেন। যাকে পাচ্ছিলেন তাকেই গুলি করে হত্যা করছিলেন।
আরো পড়ুন:
বিকেলের নাস্তায় থাকুক ‘মিষ্টি কুমড়ার স্যুপ’
মৃত্যুর প্রতীক ‘পপি ফুল’
দূতাবাসে যারা আটকে পড়েন তাদের মধ্যে ছ’জন ভবনের পিছনের দরজা দিয়ে পালাতে সক্ষম হন। পরে এ রবার্ট অ্যান্ডার্স নামের এক কূটনীতিক কানাডার কূটনীতিক জন শিয়ারডাউনকে সাহায্যের জন্য ফোন করেন। পালিয়ে আসা দলটির মধ্যে চার জন শিয়ারডাউনের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকেন। বাকি দু’জনকে কানাডার রাষ্ট্রদূত কেনেথ টেলরের বাসভবনে রাখা হয়েছিলএই খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছোনোর পর ইরানে পণবন্দি মার্কিন কূটনীতিবিদদের মুক্ত করতে বিপজ্জনক অপারেশন চালায় সিআইএ। তবে তারাও মার্কিন নাগরিকদের বার করে আনার ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী ছিল না। ইতিহাসে এই উদ্ধার অভিযান ‘ইরান হস্টেজ ক্রাইসিস’ হিসাবে পরিচিত।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রতিনিধি এবং তেহরানে থাকা অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা পণবন্দিদের মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল রামসে ক্লার্কের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও আলোচনায় বসতে চেয়েছিল। ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল। তাকেও ইরানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
শেষে দূতাবাস আক্রমণের দিন যে ছয় জন প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদেরও নিরাপদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইএ-কে। শেষতক কূটনীতিবিদদের উদ্ধার করতে জীবন বাজি রেখে অগ্নিগর্ভ তেহরানে ঝাঁপ দেন সিআইয়ের গোপন উদ্ধার অভিযানের বিশেষজ্ঞ টনি।
সিনেমার শুটিংয়ের আড়ালে টনি উদ্ধার করেছিলেন সহ-নাগরিকদের। সিআইয়ের সদর দফতরে বসে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের টনি ছকে ফেলেন অভিনব পরিকল্পনা।এই অপারেশনের সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘কানাডিয়ান ক্যাপার’।
দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে ছয়জনকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলে। ১৯৮০ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল সেই দিন। সকালে, তারা তেহরান বিমানবন্দরে পৌঁছান। সামনে ইরানি নিরাপত্তার কঠোর তল্লাশি, শেষ মুহূর্তে এক অফিসার প্রশ্ন করেন, ‘সিনেমার নাম কী?’ টনি হেসে জবাব দেন, ‘আর্গো’। তেহরানের বিমানবন্দরে শেষ মুহূর্তের ছাড়পত্র পান টনি মেন্ডেজ এবং ছয় কূটনীতিক। কানাডিয়ান সরকারের সহায়তায় ইরান থেকে পালিয়ে আসতে সমর্থ হন তারা। ভুয়া কানাডিয়ান পাসপোর্টকে হাতিয়ার করে নির্বিঘ্নে শত্রুশিবির ত্যাগ করেন টনি-সহ ছয় কূটনীতিক।
সূত্র: এনডিটিভি
ঢাকা/লিপি