একসময় প্রযুক্তি জগতে সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন সফটওয়্যার উন্নয়নের মূলধারায় প্রবেশ করেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ডেভেলপাররা প্রোগ্রামিং সংকেত (কোড) লেখার কাজে দ্রুত এআই–নির্ভর হয়ে উঠছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৮২ শতাংশ ডেভেলপার নিয়মিত ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন। ৪৪ শতাংশ ডেভেলপার ব্যবহার করছেন গিটহাব কোপাইলট এবং ২২ শতাংশ ব্যবহার করছেন গুগল জেমিনি।

তবে এআই এখন কেবল কোড কি লেখা যায় সে পর্যায়ে নেই। এর পরিধি বাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে এআই এজেন্ট। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার উন্নয়নের নানা ধাপ সম্পন্ন করতে পারে। নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, কোডের ত্রুটি শনাক্ত ও সমাধান, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত, এমনকি সিআই/সিডি প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণসহ প্রায় প্রতিটি ধাপেই এখন এআই এজেন্ট ডেভেলপারদের সহায়তা দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গুগল নিয়ে এসেছে উন্নত মানের একটি এআই কোডিং সহকারী জুলস। এজেন্টটি কোড বুঝে ডেভেলপারের উদ্দেশ্যও অনুধাবন করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করে। গিটহাবের সঙ্গে সরাসরি একীভূত এ টুলটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গুগল ল্যাবস প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত মে মাসে আই/ও ডেভেলপার সম্মেলনে বেটা সংস্করণ উন্মুক্ত করা হয়। পরীক্ষামূলক ধাপ শেষে এখন জুলস সবার জন্য উন্মুক্ত।

জুলস গুগলের জেমিনি ২.

৫ প্রো মডেল দিয়ে পরিচালিত হয়। গিটহাব সংযুক্ত গুগল ক্লাউড ভার্চ্যুয়াল মেশিনে ডেভেলপাররা একে নির্দিষ্ট কাজ দিতে পারেন। রিপোজিটরি যুক্ত করার পর জুলস সেটি নিরাপদ ক্লাউড পরিবেশে ক্লোন করে, পুরো প্রকল্পের কাঠামো বিশ্লেষণ করে, বাগ শনাক্ত ও সমাধান করে, ইউনিট টেস্ট তৈরি করে, প্রয়োজনীয় ফিচার যোগ করে এবং সব কাজ সম্পন্ন করে অ্যাসিঙ্ক্রোনাস পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ডেভেলপার অন্য কাজে মন দিলেও জুলস নিজে থেকে কাজ শেষ করে রিভিউয়ের জন্য প্রস্তুত পুল রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়। কোড সাজেস্ট করা ছাড়াও জুলস কাজের পরিকল্পনা তৈরি করে, কোড সম্পাদনা করে, প্রতিটি পরিবর্তনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে এবং অডিও আকারে পরিবর্তনের সারসংক্ষেপও সরবরাহ করে।

জুলস সরাসরি রিপোজিটরিতে কাজ করে এবং জটিল, বহু ফাইলের প্রকল্প কাঠামো ও লজিক বুঝতে সক্ষম। ডেভেলপার শুধু নির্দেশনা দেন, বাকি কাজ ক্লাউডে সম্পন্ন হয় এবং ফলাফল আসে রিভিউযোগ্য পুল রিকোয়েস্ট হিসেবে। জেমিনি ২.৫ প্রো মডেলের উন্নত বিশ্লেষণ ক্ষমতার ফলে জুলস জটিল ফিচার বাস্তবায়ন ও কোড রিফ্যাক্টরিংয়ের মতো কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। টেক্সট আকারে পরিবর্তনের বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি কথায়ও তা জানাতে পারে।

ফ্রন্টএন্ড ইউআই, ব্যাকএন্ড এপিআই, এআই মডেল কিংবা এন্ড-টু-এন্ড সিস্টেম সব ক্ষেত্রেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। জুলস একই ধরনের কোড বারবার লেখার প্রয়োজন দূর করতে পারে, ইউনিট টেস্ট লিখে দিতে পারে এবং আধুনিক ডিপেনডেন্সি আপডেটের পরামর্শ দিতে পারে।

গুগল জানিয়েছে, পাবলিক রিপোজিটরির তথ্য এআই প্রশিক্ষণে ব্যবহার হতে পারে, তবে প্রাইভেট রিপোজিটরির তথ্য ব্যবহার করা হবে না। বেটা পর্যায়ে হাজারো ডেভেলপার জুলস ব্যবহার করেছেন, যার ফলে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি পাবলিক কোড উন্নত হয়েছে। বেটা পর্ব শেষে গুগল জুলসের একটি ফ্রি প্ল্যান চালু করেছে। এতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫টি কাজ বিনা খরচে সম্পন্ন করা যাবে। পরীক্ষামূলক সময়ে জুলসের ওয়েবসাইটে ২৩ লাখের বেশি ভিজিট রেকর্ড হয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ