আজ ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার ৬০তম বার্ষিকী। এই ঐতিহাসিক দিনে বাংলাদেশে বসবাসরত সিঙ্গাপুরবাসী এবং আমার বাংলাদেশি বন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

সিঙ্গাপুরের ৬০তম জন্মদিনে আমাদের আজকের অবস্থানে কীভাবে পৌঁছেছি, তা ফিরে দেখার একটি সুযোগ। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের গত ছয় দশকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে বহু সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ। এই লেখায় আমি ছয়টি বিষয় তুলে ধরব।

প্রথমত, আমি উল্লেখ করতে চাই, ১৯৬১ সালে সিঙ্গাপুরের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (ইডিবি) প্রতিষ্ঠার কথা, যা মালয়েশিয়া থেকে বিচ্ছেদের চার বছর আগেই গঠিত হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং সিঙ্গাপুরবাসীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই ইডিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

গত ছয় দশকে ইডিবি শুধু ধারাবাহিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করেই নয়, বরং সিঙ্গাপুরের কর্মজীবী জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ সমন্বয়ের মাধ্যমেও দেশের সাফল্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আজকের দিনে ইডিবি এমন সব বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানকে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে, যেমন হুন্দাই, যারা সিঙ্গাপুরেই বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করছে; এবং ডাইসন, যারা নিত্যনতুন গৃহস্থালি পণ্য তৈরি করে।

দ্বিতীয়ত, যে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের কথা আমি উল্লেখ করতে চাই, তা হলো-১৯৭০-এর দশকে আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর একটি সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তে তিনি শহরের কেন্দ্র থেকে বেসামরিক বিমানবন্দর সিঙ্গাপুরের চাঙ্গিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন। এটি ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। কারণ, এতে সমুদ্র থেকে ভূমিগ্রহণসহ বিপুল ব্যয় জড়িত ছিল। এ ছাড়া বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেরও বিপরীতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা শহরের কেন্দ্রেই ওই বিমানবন্দর সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজ চাঙ্গি বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত।

তৃতীয় উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলো, সিঙ্গাপুরের ‘টোটাল ডিফেন্স’ (সামগ্রিক প্রতিরক্ষা) নীতির বাস্তবায়ন, যেখানে জাতীয় প্রতিরক্ষাকে পাঁচটি ক্ষেত্রে লড়াই হিসেবে ধরা হয়: অর্থনৈতিক, বেসামরিক (পুলিশ, হাসপাতাল), সামাজিক, মানসিক ও সামরিক। ‘টোটাল ডিফেন্স’ নীতি বিপদের সময় দায়িত্ববোধ, সামাজিক সংহতি এবং সহনশীলতা গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

চতুর্থ উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলো ১৯৯০ সালে ধর্মীয় সম্প্রীতির রক্ষা আইন কার্যকর করা; যা সরকারকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়েছে। সিঙ্গাপুর বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় সমাজ হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। এই সম্প্রীতির মূল চাবিকাঠি হলো আমাদের বৈচিত্র্যময় জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার অবিরাম প্রচেষ্টা।

পঞ্চম মাইলফলক হলো চলতি শতাব্দীর শুরুর দশকে সিঙ্গাপুরের মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি (এফটিএ) গ্রহণের উদ্যমী উদ্যোগ। সিঙ্গাপুরের এই এফটিএ কৌশল ছিল একটি বৈচিত্র্যময়, স্থিতিশীল এবং বিশ্বমানের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালনা করা। এখন আমাদের ২৮টি এফটিএ রয়েছে, যা সিঙ্গাপুরকে ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে আরও শক্তিশালী করেছে।

ষষ্ঠ মাইলফলক হলো ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া; যা সিঙ্গাপুরের দৃষ্টিভঙ্গির একটি নিদর্শন এবং আমাদের সার্বিক সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রতীক।

এটি আমাকে নিয়ে আসে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথায়। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী সম্পর্ক উপভোগ করে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী ও কর্মরত বহু বাংলাদেশি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছে এবং এখন তা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শক্তি, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দরের ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত।

সিঙ্গাপুরের ৬০তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর হাইকমিশন বাংলাদেশে এই উপলক্ষটি অর্থবহভাবে স্মরণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আমরা বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভ ও গ্রন্থাগারে ৬০টি বই দান করেছি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য সিঙ্গাপুরি রান্নার একটি কর্মশালাও পরিচালনা করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং মে মাসে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য লেকচারে অংশগ্রহণ করেছি। এই বছরের বাকি সময়ের জন্য পরিকল্পনায় রয়েছে সিঙ্গাপুরের দুটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী এবং সিঙ্গাপুরের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের আয়োজিত একটি শিল্প প্রদর্শনী। আমি আশা করি, বাংলাদেশিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করবেন।

শেষে, আমি এই সুযোগে আমাদের ৫৩ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আগামী দিনে আমরা আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব। নতুন নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারের মাধ্যমে দুই দেশকে আরও উচ্চ শিখরে নিয়ে যাব।

মিচেল লি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, সিঙ্গাপুর হাইকমিশন, বাংলাদেশ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উল ল খ আম দ র র জন য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা শাহরুখ

ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি বছরের শীর্ষ পাঁচটি জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে নিয়েছে আইএমডিবি।  

বিশ্বের ৯.১ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর দেওয়া রেটিংয়ের ভিত্তিতে গবেষণাটি চালানো হয়। এতে দেখা যায়, এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ২০টিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান।  

আরো পড়ুন:

শাহরুখ পুত্রের ওয়েব সিরিজ: সেই ওয়াংখেড়ের মামলা

তারকাখচিত প্রিমিয়ারে শাহরুখ পুত্রের বিদেশি প্রেমিকা

এ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছেন হৃতিক রোশান ও আমির খান। তারা দুজনেই জনপ্রিয় ১৩০টি সিনেমার মধ্যে ১১টি করে সিনেমায় কাজ করেছেন। এরপর রয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন (১০টি সিনেমা), অজয় দেবগন (৭টি সিনেমা)। তাছাড়া অমিতাভ বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও রানী মুখার্জি ৬টি করে সিনেমায় অভিনয় করেছেন। 

‘ভারতীয় সিনেমার ২৫ বছর’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়। এটি শাহরুখ খানের কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং ভারতীয় তারকাদের নিয়ে বদলে যাওয়া ধারার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত। 

আইএমডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহরুখ খান ২০০০-২০০৪ সালের মধ্যে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেন। এই সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার মধ্যে ৮টির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। যে বছরগুলোতে শাহরুখ খানের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি, সে সময়েও তিনি আইএমডিবির ‘জনপ্রিয় ভারতীয় তারকা’-এর তালিকার শীর্ষ দশে নিয়মিত জায়গা করে নেন। 

এই সময়ে ভারতীয় তারকাদের গুরুত্বের ব্যাপারটি পরিবর্তিত হয়েছে। মিলেনিয়ামের প্রথম পাঁচ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ১৩ জন পুরুষ অভিনেতা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে, যেখানে শুধু প্রভাস, আল্লু অর্জুন, সুরিয়া ও বিজয় একাধিকবার জায়গা পান বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়। 

আইএমডিবি ইন্ডিয়ার প্রধান ইয়ামিনি পাতোদিয়া বলেন, “ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সবসময়ই চক্রাকারে এগিয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে এই পঁচিশ বছরের মাইলফলক ভালো একটি দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। এই বিবর্তন আগামী দিনে গল্প ও গল্পকারদের জন্য নতুন অর্থ নিয়ে আসবে।” 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেলেও চলতি বছরে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, ডেকান ক্রনিকল

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের সবচেয়ে সফল অভিনেতা শাহরুখ