ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী শুক্রবার বৈঠকে বসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে গত শুক্রবার চীন, ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি।

ইউক্রেনে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনায় বসতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পুতিনকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অন্যথায় রাশিয়া ও দেশটির কাছ থেকে জ্বালানি তেল কেনা দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে জেলেনস্কি বললেন, তাঁরা কিছুই অর্জন করতে পারবেন না৩ ঘণ্টা আগে

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টেলিফোনে কথা বলার সময় পুতিনকে বলেন, ইউক্রেন সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নত করার প্রচেষ্টা দেখে চীন সন্তুষ্ট। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বিভেদের সময় চীন তাদের বড় সমর্থক ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগামী মাসে চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে পুতিনের।

রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনার ‘দণ্ড’ হিসেবে গত সপ্তাহে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর কয়েক দিন পর মোদির সঙ্গে পুতিন টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টেলিফোনে আলাপ হয়েছে।

আরও পড়ুন১৫ আগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বসবেন ট্রাম্প, ইঙ্গিত দিলেন অঞ্চল বিনিময়ের১৬ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে মোদি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আমরা বন্ধু পুতিনের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দর ও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করায় আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’ এর আগে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে পুতিন টেলিফোনে আলাপ করেছেন। রামাফোসা জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে এমন শান্তির উদ্যোগে তিনি পূর্ণ সমর্থন জানান।

এদিকে শুক্রবার দীর্ঘদিনের মিত্র ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন পুতিন। এ ছাড়া কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফের সফর নিয়ে কথা বলেন পুতিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ