কুমিল্লায় সাবেক বিএনপি নেতাকে আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
Published: 10th, August 2025 GMT
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। এ হত্যা মামলায় ইসতিয়াক সরকার ওরফে বিপু নামের এক বিএনপি নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ভাই কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।
ইসতিয়াক সরকারের পরিবারের দাবি, সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সে কারণে দলের আরেকটি পক্ষ এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে তাঁকে ওই আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসতিয়াককে হত্যার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইসতিয়াকের বড় ভাই ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।
ইসতিয়াক সরকার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক।
সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ সরকার দাবি করেন, ইসতিয়াক সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কিছুদিন আগে তিনি মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার পর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং বিএনপির ভেতরের বিরোধী মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই দিন বিকেলে নগরের প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি নানা সহিংসতা চলে। সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। পরে তাঁরা মাগরিবের নামাজের জন্য নগরের মোগলটুলী এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এ ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ আগস্ট বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় হওয়া মামলায় ইসতিয়াক সরকারের নাম নেই। তবে প্রায় সাত মাস আগে অনিক নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ বলেন, ওই আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে ইসতিয়াক বিজয় মিছিল নিয়ে পূবালী চত্বরে যান এবং বিকেলে পুলিশের অনুরোধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে সেখানেই অবস্থান করেন। থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে বিষয়টি প্রমাণিত হলেও অনিক নামের এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। দলের আরেকটি পক্ষ তাঁর ভাইকে এ মামলায় জড়িয়েছে যেন তিনি নির্বাচন করতে না পারেন। এ ছাড়া ওই হত্যা মামলার বাদীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওতে জানিয়েছেন যে তিনি ইসতিয়াক সরকার নামের কাউকে চেনেন না।
আইনজীবী হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে ইমতিয়াজ সরকার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হয়রানির অবসান চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেনসহ স্থানীয় ও মহানগর বিএনপির নেতা–কর্মীরা।
আজ বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে যা পেয়েছে, সেটাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে। ওই ৩৫ জনের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম রয়েছে। এখন বাকিটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়। আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমত য় জ সরক র ব এনপ র স আইনজ ব র জন ত অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।
বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’
গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’
আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’
গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।
সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।