গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। এ হত্যা মামলায় ইসতিয়াক সরকার ওরফে বিপু নামের এক বিএনপি নেতাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ভাই কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।

ইসতিয়াক সরকারের পরিবারের দাবি, সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সে কারণে দলের আরেকটি পক্ষ এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে তাঁকে ওই আইনজীবী হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসতিয়াককে হত্যার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন কুমিল্লা মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইসতিয়াকের বড় ভাই ইমতিয়াজ সরকার ওরফে নিপু।

ইসতিয়াক সরকার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক।

সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ সরকার দাবি করেন, ইসতিয়াক সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কিছুদিন আগে তিনি মহানগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার পর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং বিএনপির ভেতরের বিরোধী মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই দিন বিকেলে নগরের প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি নানা সহিংসতা চলে। সেদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। পরে তাঁরা মাগরিবের নামাজের জন্য নগরের মোগলটুলী এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এ ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ আগস্ট বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় হওয়া মামলায় ইসতিয়াক সরকারের নাম নেই। তবে প্রায় সাত মাস আগে অনিক নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইমতিয়াজ বলেন, ওই আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে ইসতিয়াক বিজয় মিছিল নিয়ে পূবালী চত্বরে যান এবং বিকেলে পুলিশের অনুরোধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে সেখানেই অবস্থান করেন। থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে বিষয়টি প্রমাণিত হলেও অনিক নামের এক আসামির জবানবন্দির মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। দলের আরেকটি পক্ষ তাঁর ভাইকে এ মামলায় জড়িয়েছে যেন তিনি নির্বাচন করতে না পারেন। এ ছাড়া ওই হত্যা মামলার বাদীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওতে জানিয়েছেন যে তিনি ইসতিয়াক সরকার নামের কাউকে চেনেন না।

আইনজীবী হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে ইমতিয়াজ সরকার বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হয়রানির অবসান চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেনসহ স্থানীয় ও মহানগর বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

আজ বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এতে মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে যা পেয়েছে, সেটাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে। ওই ৩৫ জনের মধ্যে ইসতিয়াক সরকারের নাম রয়েছে। এখন বাকিটা বিজ্ঞ আদালতের বিষয়। আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমত য় জ সরক র ব এনপ র স আইনজ ব র জন ত অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। 

এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল। 

পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”

তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”

ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ আদায়ে লাগবে ৩৩৩ বছর
  • ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ