ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল
Published: 10th, August 2025 GMT
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবীকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রয়েছে। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার এ আদেশ দেন।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।
২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। বিচারাধীন আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফারাবী। এর ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা এদিন চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। তার মানে হাইকোর্ট ফারাবীকে যে জামিন দিয়েছিলেন, তা বহাল। ফারাবী ১৬৪ ধারায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কেউই ফারাবীর নাম উল্লেখ করেননি। ফারাবী প্ররোচনা দিয়েছেন—কোনো সাক্ষী তা বলেনি। এমনকি তাঁর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। ফারাবীর জামিনের পক্ষে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
আরও পড়ুনব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন৩০ জুলাই ২০২৫এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামিকে (শফিউর রহমান ফারাবী) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মামুন হত্যা মামলায় চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে, অস্ত্র মামলায় ইউসুফের দায় স্বীকার
রাজধানীর পুরান ঢাকায় আদালত এলাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাঈদ মামুন হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনকে আজ রোববার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে এ মামলায় তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান এ আদেশ দেন।
অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মো. ফারুক হোসেন ফয়সাল (৩৮), রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস (২৫), মো. রুবেল (৩৪), শামীম আহম্মেদ (২২) ও মো. ইউসুফ জীবন (৪২)। তাঁদের মধ্যে ইউসুফ আজ দায় স্বীকার করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
এ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে আসামি ইউসুফ জীবনের বাসার ওয়ার্ডরোবের নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের গুলির উদ্ধার করা হয়। ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন পুলিশ। পরে সেদিনই এই মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ফটকের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে ১০ নভেম্বর সকালে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুনকে। তিনি মামলার হাজিরা দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন। নিকটস্থ সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করছেন।
এ ঘটনায় আজ গতকাল শনিবার ১৫ নভেম্বর সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার। তবে মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক আবু বকর জানান, আজ মামুন হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আগের অস্ত্র মামলার চার দিনের রিমান্ডে সব তথ্য বেরিয়েছে। পুলিশও মিডিয়াকে সব জানিয়েছে। হত্যার ঘটনা কেন হয়েছে? কে কী করেছে। সে ক্ষেত্রে আর রিমান্ডে যৌক্তিকতা নেই। বিচারক বলেন, ওটা তো অন্য মামলায়। আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আর কে কে আছেন, সেটা জানা দরকার। শুধু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নয়, এখানে আরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিডিয়াতে এসেছে, রনি জড়িত। এ ছাড়া হত্যা মামলায় আসামি সব অজ্ঞাতনামা। বিচারক তখন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি কে কে, তা জানতে চান। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি। বাদী চেয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে আসামি বের হোক। সে জন্য অজ্ঞাতনামা দিয়েছেন। বাদী ন্যায়বিচার চান।
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, এ আসামিদের প্রতি বাদীর (হত্যা মামলা) কোনো সন্দেহ নেই। তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ দিন আগে। তিনি মামলা করেছেন গতকাল শনিবার। কাউকে তিনি সন্দেহ করেননি। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এঁরাই গুলি করছেন। মামলাটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।