গাজীপুরের সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার স্বাধীনের (২৮) আসল নাম সেলিম। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তিনি নিজের বাবার নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন নুর মোহাম্মদ। তার আসল নাম জামাল উদ্দিন। নাম পরিবর্তন করেননি মায়ের। 

সেলিম ওরফে স্বাধীনের বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের সোনাহারা গ্রামে। এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজিবুর রহমান সরকার মজনু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জামাল উদ্দিনের দুই ছেল। তাদের মধ্যে বড় সেলিম ওরফে স্বাধীন। ছোট ছেলে সোহেল পড়ালেখা শেষে ঢাকায় চাকরি করেন। ছোটবেলা থেকেই এলাকায় বখাটে ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন স্বাধীন। চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তবে, থানায় কোনো মামলা নেই। স্বাধীন চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত  পড়ালেখা করেছেন।

আরো পড়ুন:

মুরগির ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলতেই খুন হন জসীম

রাজশাহীতে হত্যা মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

স্বাধীনের বাবা জামাল উদ্দিন ভ্যানরিকশা চালাতেন। ১৫ বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় সন্তানদের ছেড়ে চলে যান তিনি। পরে দুই ছেলেকে নিয়ে নানা আব্দুস সামাদ প্রামানিকের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন স্বাধীনের মা। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি চলে যান।

তারা জানান, কয়েক বছর পর স্বাধীন গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।  মাঝে মধ্যে এলাকায় গিয়ে কয়েকদিন থেকে আবারো ঢাকায় ফিরে যেতেন তিনি। 

এলাকাবাসীর ধারণা, ঢাকায় অপরাধ করে নিজেকে আড়াল করতে কিছুদিন এলাকায় এসে থাকতেন স্বাধীন। তিনি ঢাকার কোথায় থাকতেন, কী করতেন তা এলাকাবাসীর জানা নেই।

বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজিবুর রহমান সরকার মজনু বলেন, “সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা জানতে পারি সে ঢাকার গাজীপুরে থাকতো। তার নামতো স্বাধীন নয়। তার আসল নাম সেলিম। আর বাবার নাম নুর মোহাম্মদ নয়। তার আসল নাম জামাল উদ্দিন।”

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িত পাবনার আরেক যুবক ফয়সাল হাসান (২৩)। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন ওরফে রমজান জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়াম উদ্দিনের ছেলে। তার তিন ছেলের মধ্যে ফয়সাল সবার বড়।

পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিন্না সরকার বলেন, “কিয়াম উদ্দিন গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ৩০ বছর আগে তিনি জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান। কিয়াম উদ্দিন গাজীপুরেই বিয়ে করে বসবাস করতে শুরু করেন। তার এলাকায় কোনো বাড়ি নেই। এলাকায় বেড়াতে আসলে ছোট ভাই আবু হানিফের বাড়িতে থাকেন।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্ত ফয়সাল কখনো গ্রামে গেলে মাদকাসক্ত যুবকদের সঙ্গে চলাফেরা করেন। এর বাইরে ফয়সাল সম্পর্কে বেশি কিছু জানাতে পারেনি তারা।

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে। 

ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

তুহিন হত্যা মামলায় গাজীপুর পুলিশ সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে তাদের গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক মো.

আলমগীর আল মামুন প্রত্যেক আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আস ম ত হ ন হত য এল ক ব স আসল ন ম এল ক য় আস ম র ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ