জাতিসংঘে তীব্র সমালোচনার মুখে ইসরায়েল, গাজা–পরিকল্পনার পক্ষে সাফাই নেতানিয়াহুর
Published: 11th, August 2025 GMT
ফিলিস্তিনির গাজা সিটির ‘নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার’ ইসরায়েলি পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা।
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, এ পরিকল্পনাই যুদ্ধ শেষ করার ‘সবচেয়ে ভালো উপায়’।
এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, পরিকল্পিত সামরিক অভিযান দ্রুত শুরু করা হবে। হামাসের হাত থেকে গাজাকে মুক্ত করা হবে।
ইসরায়েল গাজাবাসীকে অনাহারে রেখেছে—এ অভিযোগ অস্বীকার করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, বরং গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদেরই ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে’ রাখা হচ্ছে।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে ইসরায়েল তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অন্য দেশ সতর্ক করে বলে, ইসরায়েলের পরিকল্পনাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ‘লঙ্ঘনের ঝুঁকি’ তৈরি করছে।
পরিকল্পনাটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া। দেশগুলো বলেছে, এ পরিকল্পনা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা করবে না; বরং তাঁদের জীবনকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীন বলেছে, গাজার জনগণের ওপর ‘সমষ্টিগত শাস্তি’ অগ্রহণযোগ্য। আর রাশিয়া বিচার-বিবেচনাহীনভাবে সংঘাত বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা বৈঠকে বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজায় নতুন একটি বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে। আরও বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হবে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা রমেশ রাজাসিংহাম বলেন, গাজার খাদ্যসংকট এখন আর শুধু হুমকি নয়, এটি সরাসরি অনাহারে রূপ নিয়েছে।
তবে বৈঠকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিরলসভাবে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধের অবসানে কাজ করছে। এ বৈঠক সেই প্রচেষ্টাকে অবমূল্যায়ন করছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, হামাস যদি জিম্মিদের ছেড়ে দেয়, তাহলে যুদ্ধ আজই শেষ হতে পারে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তারা এ বৈঠককে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি গণহত্যার বিষয়টিকে স্পষ্টত মিথ্যা বলে দাবি করেন।
গতকাল রোববার নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তিনি পরিকল্পনাটি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন।
আরও পড়ুনগাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা ০৮ আগস্ট ২০২৫অন্যদিকে ইসরায়েলজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ পরিকল্পনা জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে গাজা সিটির অবশিষ্ট দুটি হামাস ঘাঁটি ও আল-মাওয়াসি এলাকার ঘাঁটি ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি গাজায় সাহায্য বাড়াতে তিন দফা পরিকল্পনার কথা জানান নেতানিয়াহু। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ করিডর স্থাপন, আকাশপথে সাহায্য পাঠানো বৃদ্ধি এবং বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো।
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘ জানায়, মে মাসের শেষ দিকে গাজায় জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র স্থাপনের পর ত্রাণ নিতে গিয়ে ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাজা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বাদ দিন: জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান০৮ আগস্ট ২০২৫গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। ফলে অনাহারে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৭।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাজা সিটি ‘ছেড়ে যাব না’, ইসরায়েলি হুমকির মুখে বলছেন বাসিন্দারা০৯ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর অন হ র আরও প
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান
ইসরায়েলের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌযান আটককে ‘জলদস্যুর কাজ’ আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। নিজের দল একে পার্টির এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ধরনের পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এই গণহত্যাকারীরা গাজায় নিজেদের অপরাধ ঢাকতে পাগল হয়ে গেছে।
এরদোয়ান আরও বলেন, ‘গণহত্যাকারী (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহু সরকার শান্তির ন্যূনতম সুযোগ আসুক, সেটাও সহ্য করতে পারে না। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আবারও বিশ্ববাসীর সামনে গাজায় নির্মমতা ও ইসরায়েলের খুনি চেহারা তুলে ধরেছে। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের ছেড়ে যাব না। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা আমাদের সব ক্ষমতা দিয়ে কাজ করে যাব।’
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান অংশ নেয়। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষ যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।
গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে ছেড়ে আসা এই নৌবহর বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে গাজার কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছায়। ২০০৭ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরের ওই জলসীমা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল মাধ্যরাতে নৌবহরের জাহাজে জাহাজে উঠে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা অধিকারকর্মীদের আটক করে নিজেদের দেশের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি সেনারা।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল৩ ঘণ্টা আগেইতিমধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে বাকি সব জাহাজ আটক করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করা বা আইনসম্মত নৌ অবরোধ লঙ্ঘন করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার ২৪ জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে, একটি গাজার জলসীমায়: দেখুন লাইভ ট্র্যাকারে৮ ঘণ্টা আগে