পাবনায় গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ভেজাল দুধ পাওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত: প্রাণ– আরএফএল
Published: 11th, August 2025 GMT
পাবনার চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়নের প্রাণ ডেইরির গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পায় স্থানীয় প্রশাসন। গত ২১ জুলাই এই ঘটনায় প্রাণের তিন কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করছে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ।
প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের দুধ সরবরাহে ব্যর্থ হওয়া স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই ঘটনার জন্য দায়ী। চক্রটি সেখানকার কয়েকজন কর্মীকে হাত করে ডিটারজেন্ট–মিশ্রিত দুধ গ্রামীণ সংগ্রহ কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে প্রাণ ডেইরির সুনাম নষ্ট করে।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর বাড্ডায় প্রাণ ডেইরির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা, প্রাণ ডেইরির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তৌহিদুজ্জামান, প্রাণ ডেইরির বিপণনপ্রধান সৈয়দ মুস্তায়িন কাদেরসহ প্রাণ ডেইরির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, পাবনার এই ঘটনার পরপরই ওই দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রাণ ডেইরিকে দুধ সরবরাহকারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাঁচজন খামারির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে; তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, গত এক বছরে দুধের নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিয়ে দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রাণ ডেইরির ২৭ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ২৮৩ জন দুধ সরবরাহকারী খামারির কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয় প্রাণ। দুধের গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ থাকায় খামারিদের কাছ থেকে সংগৃহীত প্রায় ২৭ লাখ লিটার দুধ গত এক বছরে বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর প্রধান সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে বাতিল করা হয়েছে ৪২ হাজার লিটার দুধ।
প্রাণ ডেইরি সব সময় নিবন্ধিত সরবরাহকারীর কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে বলে জানান কামরুজ্জামান কামাল। প্রক্রিয়াজাত করার আগে চার ধাপে দুধের গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। ফলে নিম্নমানের দুধ প্রধান প্রক্রিয়াজাতকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ নেই। সম্প্রতি পাবনায় যা ঘটেছে, তা একেবারে প্রাথমিক ধাপে গ্রামীণ দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রের ঘটনা। দুধ সংগ্রহ প্রক্রিয়া আরও কঠোর করতে প্রাথমিক ধাপে পরীক্ষার অবকাঠামো উন্নয়ন, মাঠপর্যায়ে মনিটরিং জোরদার, গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন আর খামারি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করেছে প্রাণ।
প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘আমরা প্রায় ১৬ হাজার খামারির সঙ্গে সরাসরি কাজ করি। তাঁদের অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে গোখাদ্য ও টিকা সরবরাহ করা হয়। এরপর তাঁদের কাছ থেকে আমরা দুধ সংগ্রহ করি। এর মধ্যে কিছু মধ্যস্বত্বভোগীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছি। সে জন্য তাঁরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’
ইলিয়াছ মৃধা আরও বলেন, ‘আমরা শুধু বাংলাদেশে মানুষের জন্য নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্যও পণ্য তৈরি করছি। ফলে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়, তা শুধু জাতির ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ক্ষতিকর। আমরা কোনোভাবে এই অপপ্রচারে পিছপা হব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ণ আরএফএল গ র প দ ধ স গ রহ ক ন দ র ন কর মকর ত এই ঘটন সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমার্কেট থেকে ১১০০ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৯
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার কয়েকটি দোকান ও গুদামে শনিবার অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এসব অস্ত্র বিক্রি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ আর্মি ক্যাম্পে শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক বিগ্রেডের ডেয়ারিং টাইগার্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি এই আইটেমগুলো (ধারালো অস্ত্র) কোনো একটা জায়গা থেকে সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে হচ্ছে এবং গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে, এমনকি ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু সময় ফ্রি ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে, হোম ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ঢাকার কোনো একটি জায়গা থেকে এই আইটেমগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে দেওয়া হয়।’
নাজিম বলেন,‘আমাদের কাছে গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীরা স্বীকার করেছে, একটা স্থান থেকে তারা এই সামুরাইগুলো সাপ্লাই পাচ্ছে। এরপর আমরা আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করি। গত কয়েক দিন ধরে আমাদের গোয়েন্দারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খোঁজ নেয় এবং নিশ্চিত হয় যে, কোন কোন স্থানগুলোতে এই ধারালো অস্ত্রগুলো পাওয়া যাবে। এর ভিত্তিতে আমরা আজ (শনিবার) নিউমার্কেটে গিয়ে তিন থেকে চারটি দোকানে তল্লাশি চালিয়ে এই ধারালো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আজ আমরা এই কাজে জড়িত হিসেবে নয়জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। মোট তিনটি দোকান থেকে মূল এই আইটেমগুলো পাওয়া যায়। আমরা গত কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করেছি, সন্ত্রাসীরা এই ধরনের দেশি অস্ত্রই বেশি ব্যবহার করে। গত তিন-চার মাস ধরে এগুলো বিশাল আকারে মজুত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের হাতে দেখা যাচ্ছে।’