ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফোন দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের ‘দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ’ অবসানে নিজের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুই নেতার মধ্যে এ ফোনালাপ হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আগামী শুক্রবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগেই জেলেনস্কিকে ফোন দিলেন মোদি। গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গেও কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তখনো তিনি সংঘাতের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ আহ্বান জানান।

মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা অংশীদারত্বের পরও সেই সম্পর্ক টিকে আছে। এই অবস্থানে ভারসাম্য ধরে রাখতে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার নিন্দা জানায়নি নয়াদিল্লি। বরং যুদ্ধ থামানোর জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।

সোমবার জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের পর মোদি বলেন, ‘এই সংঘাতের দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভারত যে অবিচল অবস্থানে রয়েছে, তা আমি (জেলেনস্কিকে) জানিয়েছি। এ ক্ষেত্রে সব রকমের ভূমিকা রাখার জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে ভারতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এই যুদ্ধ থামাতে চলতি বছরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। তবে কোনো অগ্রগতি আসেনি। শুক্রবার ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের জেরে যুদ্ধ থামবে কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণদের ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

সিলেটের খাসিয়া সম্প্রদায়ের ২০ বছর বয়সী মিং সাং নতুন জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পান, যখন তিনি ট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। আজ তাঁর গ্রামে তিনি হোম–স্টে পর্যটনকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করছেন, অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন, গর্বের সঙ্গে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরছেন এবং একই সঙ্গে উপার্জনও করছেন।

২৭ বছর বয়সী আইনুল হক জুবেল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিক সংকটের কারণে একসময় জীবনকে অচল মনে করতেন। নিজেকে বোঝা মনে হতো—যতক্ষণ না একটি স্বল্পমেয়াদি গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ তাঁর জন্য নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে।

আজ জুবেল সচেতনতামূলক প্রচারে নিজের জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী তরুণদের অভিভাবকদের সঙ্গে। তাঁর বার্তা সহজ, কিন্তু শক্তিশালী—‘হাল ছেড়ো না, দক্ষতা জীবন বদলে দিতে পারে’।

আজ ১২ আগস্ট, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৫—তরুণদের শক্তি, সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতি উদ্‌যাপনের দিন। এ বছর দিবসটির গুরুত্ব আরও বেড়েছে, কারণ, আমরা উদ্‌যাপন করছি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর দশম বার্ষিকী—একটি ন্যায্য, সমৃদ্ধ ও পরিবেশ সংরক্ষণকারী বিশ্ব তৈরির প্রচেষ্টায়।

তবে এই স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়িত হবে, যদি তরুণদের জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা যায়।

গত এক দশকে, বাংলাদেশি তরুণেরা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসংকট, জলবায়ু বিপর্যয় ও ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে টিকে থাকার অসীম সম্ভাবনা দেখিয়েছে। তাঁদের সৃজনশীলতা ও দৃঢ়তা আমাদের আশা জোগায়। কিন্তু কেবল আশা যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে থাকতে হবে বিনিয়োগ, নীতিগত প্রতিশ্রুতি ও সহায়ক পরিবেশের সৃষ্টি। কারণ, তরুণেরা সমৃদ্ধ হলে সমৃদ্ধ হয় পুরো জাতি।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। উদ্বেগের বিষয়, তাঁদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৯% তরুণ শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের বাইরে (সূত্র: এনইইটি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের ১২% বেকার (সূত্র: বিবিএস)। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন, যাঁদের অনেকেই উচ্চ বেকারত্ব, মানসম্মত দক্ষতা প্রশিক্ষণের সীমিত সুযোগ, শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যে অসামঞ্জস্য এবং শোভন কাজের অভাবের মতো স্থায়ী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিশ্বের শ্রমবিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা হিসেবে তরুণদের এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রমে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা সরকারের অর্থায়নে, আইএলও তরুণদের জন্য দক্ষতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং পরিসর দিয়ে সহায়তা করছে, যা তাঁদের ক্রমবর্ধমান কর্মজগতে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে।

আমাদের কাজ শুধু শ্রেণিকক্ষের প্রশিক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়। আইএলও বাস্তবায়িত কর্মসূচিগুলো চাহিদাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যৎমুখী দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা থেকে শুরু করে এর বিস্তার ডিজিটাল জ্ঞান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, শিল্প খাতের সঙ্গে পরিচিতি এবং জীবনব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন পর্যন্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে তরুণদের অভিযোজন, উদ্ভাবন ও নেতৃত্বের জন্য এগুলো অপরিহার্য।

তবে তরুণেরা কেবল সুবিধাভোগী নন, তাঁরা নিজেরাই পরিবর্তনসাধক, উদ্ভাবক ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এ জন্য আমরা তাঁদের নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করি, যেমন যুব পরামর্শ, স্কিলস ফেয়ার, ক্যাম্পেইন ও উদ্ভাবনী ল্যাবের মাধ্যমে। আমরা তাঁদের নেতৃত্বকে উৎসাহিত করি, উদ্যোক্তা হিসেবে ও সচেতন কর্মী হিসেবে যাঁরা নিজেদের অধিকার বোঝে ও রক্ষা করে।

বিশেষ করে তরুণ নারীদের জন্য শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থানে যাত্রার পথটি মসৃণ হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা। আইএলও মানসম্পন্ন শিক্ষানবিশ ও শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করে, যা তত্ত্ব ও তার বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে ব্যবধান কমায়। এসব সহযোগিতা তরুণদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে এবং আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার সঙ্গে কর্মজগতে প্রবেশের প্রস্তুতি দেয়।

তবু বিপুলসংখ্যক তরুণ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করেন, যেখানে কাজ অনিরাপদ, কম বেতনের এবং শ্রম সুরক্ষার বাইরে। এসব কাজকে আনুষ্ঠানিক করা এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রসারিত করা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সংগত ও টেকসই অর্থনীতি গঠনের জন্য অপরিহার্য। তরুণদের জন্য শোভন কাজ কেবল অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়।

গত এক দশকে, বাংলাদেশি তরুণেরা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসংকট, জলবায়ু বিপর্যয় ও ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে টিকে থাকার অসীম সম্ভাবনা দেখিয়েছে। তাঁদের সৃজনশীলতা ও দৃঢ়তা আমাদের আশা জোগায়। কিন্তু কেবল আশা যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে থাকতে হবে বিনিয়োগ, নীতিগত প্রতিশ্রুতি ও সহায়ক পরিবেশের সৃষ্টি। কারণ, তরুণেরা সমৃদ্ধ হলে সমৃদ্ধ হয় পুরো জাতি।

ফারহানা আলম, যোগাযোগ কর্মকর্তা, স্কিলস প্রোগ্রাম, আইএলও বাংলাদেশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ