দাম বাড়ছে পেঁয়াজের, কী বলছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা
Published: 12th, August 2025 GMT
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে, যা খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও মজুত সংকটের কারণে সরবরাহ সীমিত হওয়ায় দাম বাড়ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী সজিব হোসেন বলেন, “আমাদের এখানে গত সপ্তাহে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
সবজি, পেঁয়াজ, মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে
পাবনায় পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৬০০ টাকা
বৃষ্টির ক্ষতি, সংরক্ষণে ঘাটতি
পাইকারি ব্যবসায়ী সজিব হোসেন বলেন, “পাবনার সাঁথিয়া ও আশপাশের অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে মাঠে রাখা পেঁয়াজের বড় অংশ নষ্ট হয়েছে। সেখানকার আড়তদাররা জানিয়েছেন, গত বছর তুলনায় এই বছর বৃষ্টির কারণে অনেক চাষি যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারেননি, ফলে পেঁয়াজের মজুত কমে গেছে।”
যাত্রাবাড়ীতে কথা হয় পাবনার চাষি রতন পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার চারশ মণ মজুতের প্রায় অর্ধেক পচে গেছে, সরবরাহ কম হওয়ায় দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে।”
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ হলেও মজুত ও স্থানীয় বাজারজাতকরণে ত্রুটির কারণে তা সঠিকভাবে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়নি। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারী উদ্যোগের অভাব প্রকট হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাজারে পেঁয়াজের দাম স্বল্পদিনে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়ায় ভোক্তাদের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে। টিসিবি পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও আমদানির অনুমতি সীমিত থাকায় বিদেশি পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে আসছে না।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, “দাম লাফিয়ে ওঠায় প্রতিদিনের রান্নাবান্নায় সমস্যায় পড়ছি। রেস্তোরাঁগুলোও খাদ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। আমদানির পথে কোনো বাধা থাকবে না, যেখান থেকে সস্তায় পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমদানি করা হবে। কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থ আমাদের অগ্রাধিকার।”
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, স্বল্পমেয়াদে টিসিবির স্টক থেকে সরবরাহ বাড়ানো হবে এবং আমদানির শর্ত শিথিল করার বিষয়ে কাজ চলছে। দীর্ঘমেয়াদে কৃষকদের আধুনিক স্টোরেজ সুবিধা, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ ও ঝুঁকি বিমা নিশ্চিত করতে হবে। বাজার মনিটরিং জোরদার করে সিন্ডিকেট ও মজুতদারি রোধ করা হবে।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন র সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।