‘আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু’
Published: 12th, August 2025 GMT
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামছুল ইসলাম এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের উদ্দেশে আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু। আপনার কইলজাও খুলমু।’
আব্দুল গফুর ভূঁইয়া ২০০১ সালে কুমিল্লা-১১ আসনের (নাঙ্গলকোট) সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নাঙ্গলকোটের সঙ্গে কুমিল্লা আদর্শ সদর ও লালমাই উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-১০ আসন গঠিত হয়। মঙ্গলবার তাঁর কথোপকথনের অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওটি প্রায় তিন মাস আগের বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি পদ নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানকে হুমকি দেন আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির পদে আছেন আব্দুল গফুর।
তবে আব্দুল গফুর ভূঁইয়া দাবি করেছেন, এটি তাঁর কল রেকর্ড নয়। এডিট করে রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। এর পর থেকেই তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ। তবে মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে ভোলাইন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবে সুপারিশ করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক। পরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে পাঠান। এর পরপরই আব্দুল গফুর ভূঁইয়া কল করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা হুমকি দেন। ঘটনার পর চেয়ারম্যানের অনুরোধে মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর আব্দুল গফুর ভূঁইয়া প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হন।
ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে উত্তেজিত অবস্থায় বলতে শোনা যায়, ‘মিডিয়া সেলের সদস্য এখন নাই, এখন নাই সে।’ এ সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সে আমার কাছে এসে পরিচয় দিয়েছে।’ এরপর গফুর ভূঁইয়া বলে ওঠেন, ‘পরিচয় দেক, পরিচয় দিলেও একজন সংসদ সদস্যকে আপনি অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে আসি, আপনাকে অপমান করব। আপনার কত বড় কইলজা হইছে, আমি দেখমু আপনারে। আপনারে কে এখানে বসাইছে, আমি তাঁর কইলজা খুলিয়ালামু। আপনার কইলজাও খুলমু। বেয়াদবির একটা সীমা আছে। একটা টোকাইর ইয়া নিয়েছেন আপনে। সে একজন কো-অর্ডিনেটর, সে চাকরি করে এখানে, টোকাই।’
এ সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, ‘উনি পরিচয় দিয়েছেন আমাকে উনি খালেদা জিয়ার প্রেস.
জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় তিন মাস আগের। আজকে কীভাবে কল রেকর্ডটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, আমি বলতে পারব না। এ ছাড়া এ নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কল রেকর্ডটি শুনেছি কিছুটা। এটা দলীয় কোনো বিষয় না। বিষয়টি একান্তই গফুর ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত। তবে বিষয়টি দুঃখজনক।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ঙ গলক ট আপন র ক আপন ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবন মানে একজন আরেকজনের মধ্যে শান্তি খোঁজা, একে অপরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো। সম্মান, বোঝাপড়া, সহানুভূতি—এই গুণগুলো ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে না।
নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪এক দম্পতির স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী প্রতিটি বিষয়কে ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ বলে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো শুধু আল্লাহর সামনে দায়িত্ব পালন করছি, তুমি মানো বা না মানো, সেটা তোমার ব্যাপার।’
কিন্তু স্ত্রী এতে আহত হন, কারণ এতে তিনি বোঝেন—স্বামী আসলে তাঁর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইসলাম শিক্ষা দেয়—পরামর্শ যেন হয় কোমল ভাষায়, স্নেহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪)
অন্য হাদিসে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫)
আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫পরামর্শ ও সমাধান কী হতে পারে?এমন পরিস্থিতি প্রায় দম্পতির মধ্যেই হয়। তাই একে জটিল করে দেখা উচিত নয়। পারস্পরিক কল্যাণ ভাবনার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার:
আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’১. আলোচনার পথ খোলা রাখা
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতভেদ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় যখন একপক্ষ সবসময় আদেশ করে আর অন্য পক্ষ কথা বলার সুযোগই পায় না। ভালোবাসার সম্পর্কে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’ আর যদি স্বামী হন, তাহলে বুঝুন—আপনার স্ত্রীর মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন আছে। আপনি তাঁর মালিক নন, বরং তাঁর সঙ্গী।
২. ‘পরামর্শ’ আর ‘নিয়ন্ত্রণ’ এক নয়
অনেকে পরামর্শের নামে স্ত্রীকে চাপে ফেলেন। সেটা ঠিক না। পরামর্শ তখনই কাজে আসে, যখন তা ভালোবাসা আর সম্মানের সঙ্গে দেওয়া হয়। কাউকে সম্মান করা মানে এই নয় যে তাঁর সব কথা মানতেই হবে। ইসলাম আমাদের চিন্তা ও বিচারবোধ দিয়েই সম্মানিত করেছে।
৩. বড় সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিন
বিয়ের আগে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না—যেমন: পোশাক, হিজাব বা নিকাব নিয়ে মতভেদ, সন্তান পালনের পদ্ধতি, সামাজিক আচার ইত্যাদি। এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। একসাথে বসে ঠিক করুন—কোন বিষয়গুলো তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলোতে একে অপরকে ছাড় দেওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন২৫ জুন ২০২৫৪. সমঝোতা ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন
আপনার স্বামী যদি বলে, ‘আমি তো দায়িত্ব পালন করে দিচ্ছি, তুমি মানো বা না মানো সেটা তোমার ব্যাপার’, তখন আপনি বলতে পারেন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই চিন্তা করি। আসুন আমরা একসাথে বুঝে নেই কী করলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন, আর আমাদের সম্পর্কটাও সুন্দর থাকবে।’
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫৫. একান্ত প্রয়োজনে পারিবারিক পরামর্শ নিন
দাম্পত্যে কিছু সমস্যা এমন হয় যা বাইরের একজন বোঝাতে পারলে দুজনেই স্বস্তি পায়। একজন বিশ্বস্ত ইসলামিক কাউন্সেলর বা বুঝদার অভিভাবকের সহায়তা নিতে পারেন। বিয়ে মানে শুধু দায়িত্ব নয়, বরং একে অপরের অন্তরকে জানার, বোঝার এবং নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার সম্পর্ক।
মতভেদ থাকবেই। কিন্তু সেটা যেন ভালোবাসা ও সম্মানের ভিতরে থেকে সমাধান হয়। কারও মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে নিচু দেখিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একসাথে বসে কথা বলুন, ভুল বুঝলে ক্ষমা চান, একজন আরেকজনের হৃদয় খোলার সুযোগ তৈরি করুন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শান্তিপূর্ণ, ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবন গঠনের তাওফিক দিন।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪