গাজায় গণহত্যা ও দুর্ক্ষিভের মধ্যে ইসরায়েলের কাছ থেকে গ্যাস কিনতে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের ইতিহাসে বৃহত্তম চুক্তি এটি, যা সম্প্রসারণবাদী দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করবে এবং ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্নের প্রশ্নে অর্থের যোগান নিশ্চিত করবে।

সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’ লিখেছে, চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র থেকে মিশরের গ্যাস আমদানির পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রপ্তানি চুক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

আরো পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে ‘স্বীকৃতি দেবে’

গাজা দখলের পাঁচ দফা পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি জ্বালানি কোম্পানি নিউমেডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় ২০৪০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রতীরবর্তী লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৩০ বিলিয়ন ঘনমিটার (বিসিএম) গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মিশরে সরবরাহ করা হবে।

লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রের তিন মালিকের একটি নিউমেড; অন্য দুই মালিক হলো ইসরায়েলের রেশিও কোম্পানি ও শেভরন। নিউমেডের মালিকানা ৪৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

নতুন চুক্তিটি ২০১৮ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির একটি বড় সম্প্রসারণ। বিদ্যমান চুক্তির আওতায় প্রতিবছর ৪.

৫ বিসিএম গ্যাস মিশরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যদিও ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল একাধিকবার গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ চলতি দশকের শেষে শেষ হওয়ার কথা।

নতুন চুক্তি ইসরায়েলের ওপর মিশরের জ্বালানিনির্ভরতা আরো গভীর করবে; কারণ গত তিন বছরে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন ধসে পড়ায় ক্রমবর্ধমান দেশীয় চাহিদা মেটাতে কায়রো আমদানি বাড়াচ্ছে।

গত দুই গ্রীষ্মে মিশরের তীব্র জ্বালানি ঘাটতির কারণে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক লোডশেডিং হয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এই ঘাটতি মেটাতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে মিশর সরকার, যার বাজারমূল্য ২০২৫ সালে বেড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে এই বাজারমূল্য ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার।

জয়েন্ট অর্গানাইজেশনস ডেটা ইনিশিয়েটিভ নামে প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল বর্তমানে মিশরের মোট চাহিদার ১৫-২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে।

নিউমেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়োসি আবু এই চুক্তিকে ‘উইন-উইন ডিল’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, চুক্তিটি এলএনজি আমদানির তুলনায় মিশরের ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ সাশ্রয় করবে।

গ্যাস সরবরাহ করা পাইপলাইনের মাধ্যমে, যা এলএনজি আমদানির তুলনায় সস্তা। কারণ এলএনজি পরিবহনের জন্য তরল আকারে আনার আগে ‘অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায়’ ঠান্ডা করতে হয়।

মিশরের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘মাদা মাসর’-এর তথ্য অনুযায়ী, নতুন চুক্তির আওতায় প্রতি বিসিএম গ্যাসের জন্য প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার বেশি দেবে মিশর, যা আগের চুক্তির তুলনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

মিশরের সাবেক পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এবং সরকারের এক সূত্র মাদা মাসরকে গত বছর জানিয়েছিলেন, দুই দেশ মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েলি গ্যাসের প্রবাহ মিশরে বাড়ানোর আলোচনা করেছে।

তারা বলেছিলেন, ইসরায়েলি গ্যাস মিশরের জন্য সরবরাহ ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে সস্তা বিকল্প হওয়ায় মিশর আমদানির জন্য বেশি মূল্য দিতে রাজি হতে পারে।

‘শর্ত পূরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই’
তবে চুক্তি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে পাইপলাইন ও অতিরিক্ত রপ্তানি অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করার ওপর।

চুক্তির প্রথম ধাপে ২০২৬ সালের শুরুর দিকে মিশরে ২০ বিসিএম গ্যাস সরবরাহ করা হবে, যা নির্ভর করছে লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রে একটি নতুন পাইপলাইন নির্মাণ এবং ইসরায়েলের বন্দর নগরী আশদোদ ও আশকেলনের মধ্যে চলমান পাইপলাইনের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হওয়ার ওপর; যে প্রকল্পটি গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে স্থগিত রয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট ১১০ বিসিএম গ্যাস মিশরে সরবরাহের বিষয়টি নির্ভর করছে রপ্তানি অবকাঠামো সম্প্রসারণের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল থেকে মিশরের সীমান্তবর্তী নিটজানা পর্যন্ত একটি নতুন স্থলভিত্তিক পাইপলাইন নির্মাণ, যার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

নিউমেড এক বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলেছে, এসব শর্ত পূরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েলের অবরোধে কায়রোর কথিত সহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে মিশরে জনঅসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গাজায় ইসরায়েল আরোপিত অনাহারে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।

গত জুলাইয়ে গাজায় জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ প্রবেশের জন্য রাফাহ সীমান্ত খুলে দিতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদে কায়রোর মা’আসারা থানায় হামলা চালানো দুই ব্যক্তিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়।

এর ঠিক আগে রাফাহ সীমান্ত বন্ধের প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসে অ্যাক্টিভিস্ট আনাস হাবিবের নেতৃত্বে প্রতীকীভাবে দূতাবাসের ফটক বন্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাজধানীগুলোর মিশরীয় দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই সপ্তাহে কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে ‘সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মূল্যবোধের ঘাটতির’ নিন্দা জানান তিনি। গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় (যেখানে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন) মিশরের সহযোগিতার অভিযোগকে ‘আজব কথা’ বলে উড়িয়ে দেন।

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল গ য স সরবর হ ব স এম গ য স ইসর য় ল র আমদ ন র র জন য র ওপর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো