আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে আমরা এক আলোকবর্ষ হিসেবে গণনা করি। এই হিসাবে এক আলোকবর্ষ মানে ৬ ট্রিলিয়ন মাইল। এবার পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ৩৭ আলোকবর্ষ দূরে থাকা সম্ভাব্য একটি গ্রহ শনাক্ত করেছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। গ্রহটি সূর্যের মতো নক্ষত্র ‘আলফা সেন্টোরি এ’-কে প্রদক্ষিণ করছে। গ্রহটি গ্যাসীয় হওয়ায় জীবনধারণের জন্য উপযুক্ত নয়। নতুন এ আবিষ্কারকে বিজ্ঞানীরা আপাতত গ্রহ বললেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হবে।

আলফা সেন্টোরি এ তিন তারকাবিশিষ্ট একটি তারকা সিস্টেম। আলফা সেন্টোরি এ ছাড়াও আলফা সেন্টোরি বি ও লাল বামন প্রক্সিমা সেন্টোরি রয়েছে সেখানে। এরই মধ্যে প্রক্সিমার দুটি নিশ্চিত গ্রহ সম্পর্কে জানা গেছে। বাসযোগ্য হিসেবে প্রক্সিমা বি অবস্থান করছে সেখানে। আলফা সেন্টোরিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ রয়েছে। আমাদের সূর্যের সঙ্গে মিল আছে। আলফা সেন্টোরি এ নক্ষত্রকে ঘিরে নতুন গ্রহের আবিষ্কার বেশ সাড়া ফেলেছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, আলফা সেন্টোরি নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে এই গ্রহের অবস্থান। হোস্ট নক্ষত্র থেকে দুই জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরত্বে এদের অবস্থান। গ্যাসীয় গ্রহটি এমন এলাকায় অবস্থিত, যেখানে তরল পানি থাকতে পারে। গ্যাসীয় গ্রহ হওয়ার কারণে সেখানে জীবন ধারণ করার সম্ভাবনা কম। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আলফা সেন্টোরি এ থেকে আসা অপ্রতিরোধ্য আলোকে দমন করার জন্য তার মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট ও করোনাগ্রাফিক মাস্ক ব্যবহার করেছে। সেখান থেকেই গ্রহের ক্ষীণ নমুনা স্বাক্ষর টের পাওয়া যায়।

গ্রহটি তার হোস্ট নক্ষত্রের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার গুণ বেশি ক্ষীণ। টেলিস্কোপ বেশ সংবেদনশীল বলে টের পাওয়া গেছে গ্রহটির অস্তিত্ব। নাসার এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের চার্লস বেইচম্যান বলেন, আলফা সেন্টোরি এ থেকে নিকটবর্তী হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে গ্রহটি নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ আছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহ র গ রহট অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান

মার্কিন গায়িকা ম্যাডোনা পোপ লিওর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় গিয়ে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’ গত সোমবার সন্ধ্যায় ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, ‘পবিত্র পিতা, দয়া করে গাজায় যান এবং দেরি হওয়ার আগে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’

ম্যাডোনা যোগ করেন, একজন মা হিসেবে তিনি তাদের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না।

ম্যাডোনা বলেন, ‘দুনিয়ার সব শিশু সবারই সন্তান। আপনি আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে গাজায় ঢুকতে বাধা দেওয়া যাবে না।’

গত মাসে গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক থিওফিলস তৃতীয়র সঙ্গে জেরুজালেমের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজাবাল্লা গাজায় এক বিরল সফরে যান।

গাজা সিটির হলি ফ্যামিলি চার্চে ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই এ সফর হয়েছিল। এটি গাজার শেষ ক্যাথলিক চার্চ, যেখানে ওই হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েকজন আহত হন।

পোপ লিও ওই হামলার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও ইসরায়েলকে দায়ী করেননি। ফলে এ নিয়ে সমালোচনা হয় ও পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়। আগের পোপ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধের নিন্দা করেছিলেন। পরে পোপ লিও বলেন, হামলাটি ইসরায়েলি সেনারা চালিয়েছেন।

গাজা অবরোধ ভাঙতে এবং সেখানে জরুরি মিশন পরিচালনা করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যে দাবি উঠেছে, এ আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তার সঙ্গে এবার ম্যাডোনা যোগ দিলেন।

যাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের বাঁচানো যায়, সে জন্য মার্কিন এই গায়িকা গাজায় ‘মানবিক সাহায্যের দরজা পুরোপুরি খুলে দেওয়ার’ আহ্বান জানান।

গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ওপর প্রায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে, ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।

মে মাসের শেষ দিক থেকে মার্কিন ও ইসরায়েল–সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। তবে তারা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য সহায়তা দিয়েছে। বিতর্কিত সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, এর মধ্যে ১০১টি শিশু।

পোপদের সঙ্গে ম্যাডোনা বিরোধ

ম্যাডোনার বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সরাসরি সমালোচনা ছিল না।

ম্যাডোনা বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, পক্ষ নিচ্ছি না। সবাই কষ্ট পাচ্ছে, জিম্মিদের মায়েরাও। আমি তাদের মুক্তির জন্যও প্রার্থনা করছি। আমি শুধু চেষ্টা করছি, যাতে এই শিশুরা অনাহারে মারা না যায়।’

ম্যাডোনার মতে, রাজনীতি নয়, কেবল সচেতনতা পারে পরিবর্তন আনতে। এ কারণেই তিনি ‘ঈশ্বরের একজন মানুষ’-এর কাছে আবেদন করছেন।

ম্যাডোনা রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী হিসেবে বড় হয়েছেন এবং প্রায়ই তাঁর গান ও মিউজিক ভিডিওতে ক্যাথলিক প্রতীক ব্যবহার করে থাকেন।

ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ম্যাডোনার উসকানিমূলক উপস্থাপনা, যেমন জ্বলন্ত ক্রস, পোল-ড্যান্স করা সন্ন্যাসিনী ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দশকের পর দশক ধরে তাঁকে ক্যাথলিক চার্চ ও পোপদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে।

১৯৯০ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় ম্যাডোনার ব্লন্ড অ্যাম্বিশন ট্যুরকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শয়তানি শোগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

২০০৬ সালে ম্যাডোনার কনফেশনস ট্যুরকে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের অনুমোদনে কার্ডিনাল এরসিলিও টোনিনি ‘ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে চরম চ্যালেঞ্জ ও ক্রসের অপমান’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। টোনিনি তখন বলেন, তাঁকে ক্যাথলিক সমাজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।

গত বছর ম্যাডোনা এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়ান। যেখানে দেখা যায়, পোপ ফ্রান্সিস তাঁর কোমরে হাত রেখেছেন।

চলতি বছরের জুনে নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ম্যাডোনা ও পোপ লিও ছয় প্রজন্ম আগে একই পূর্বপুরুষের বংশধর ছিলেন। সেই হিসাবে তাঁরা নবম স্তরের প্রজন্মে চাচাতো ভাই–বোন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ