বন্দরে পাথর ভাঙ্গা ফ্যাক্টরী ভিতর থেকে লুন্ঠিত সাড়ে ১১ টন রড উদ্ধারসহ ৩ ডাকাতকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট)  সকালে সজিব  বিশ্বাস ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি সুপারভাইজার নবীর হোসেন বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত ৩ ডাকাতসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ্য করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২২(৮)২৫।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি বাতেনপাড়া এলাকার আউয়াল প্রধানের ছেলে ফারুক  ওরফে জামাই ফারুক (৩৫) সুদূর পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার মাধবখালী এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে সাদ্দাম (২৯) ও নরসিংদী জেলার বেলাবর থানার দক্ষিদূর এলাকার গোলাব মিয়ার ছেলে জাবেদ হোসেন (২১)।

পলাতক আসামীরা হলো সোনাচড়া এলাকার মৃত আকবর ডাকাতের ছেলে মামুন ডাকাত (৪৫) ধামগড় ইউনিয়নের মনারবাড়ি এলাকার আসলাম (৩৫) রামনগর এলাকার শান্ত (২৭) ও খোকন (৪০)।

গ্রেপ্তারকৃতদের বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৩টায় সময় বন্দর থানাধীন জাঙ্গালস্থ বি এস আর এম স্টিল ফ্যাক্টরী হইতে ১৬ টন রড যাহার সর্বমোট মূল্য ১৫,০০,০০০/- (পনেরো লক্ষ) টাকা নিয়ে ট্রাক যাহার রেজিঃ নং-ঢাকা  মেট্রো-ট-২৪-২০৬৪, যোগে  বন্দর থানাধীন তালতলাস্থ এসি আই ময়দা ফ্যাক্টরীর উদ্দেশ্যে রওনা করে সাড়ে ৩টায় সময়  বন্দর থানাধীন তালতলা এসি আই ময়দা ফ্যাক্টরী সংলগ্ন ৪০০ (চারশত) গজ উত্তর পাশে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্র দুইটি মোটরসাইকেল ট্রাকের সামনে আসিয়া বেরিকেড দিলে ড্রাইভার মোঃ সজিব (২৫) ট্রাক থামায়।  

সাথে সাথে বেরিকেড দেওয়া মোটরসাইকেল হইতে এবং রাস্তার পাশে থাকা ১০/১১ জনের  একটি ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রের মুখে  সজিব (২৫), রবিন (২৬), আল-আমিন (৪৮), কাশেম  (৩৫) দের জিম্মি করিয়া ট্রাকের দুই পাশের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে এবং সাক্ষীদের টানা হেচাড়া করিয়া গাড়ি হইতে নামিয়ে বেধড়ক মারপিট করে।

অজ্ঞাতনামা ০৫ জন ডাকাত আমাদের ট্রাক যাহার রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-ট-২৪-২০৬৪, মূল্য ১৫,০০,০০০/- (পনেরো লক্ষ) টাকা সহ গাড়ীতে থাকা ১৬ টন রড যাহার সর্বমোট মূল্য ১৫,০০,০০০/- (পনেরো লক্ষ) টাকা ডাকাতি করে মদনপুর স্ট্যান্ডের দিকে চলে যায়।

বাকি ডাকাতদল সাক্ষীদের টানা হেচড়া করিয়া পার্শ্ববর্তী মাঠের মধ্যে নিয়ে  সজিবের নিকটে থাকা একটি ইনফিনিক্স হট ৪০ মোবাইল ফোন, মূল্য ১৩,৫০০/- টাকা, নগদ ৮০০/- টাকা, ০১টি এনআইডি কার্ড, একটি গাড়ীর ড্রাইভিং লাইসেন্স  রবিনের কাছ  থেকে  একটি ঙচচঙ মোবাইল ফোন যাহার মূল্য ১৯,৫০০/- টাকা লুন্ঠন করিয়া নিয়ে  মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে  ২ ডাকাত তাহাদের মোটরসাইকেল যোগে মদনপুর স্ট্যান্ডের দিকে চলে যায়।

বাকী ডাকাতরা পায়ে হেটে উত্তর দিকে চলে যায়। ওই সময়  আল-আমিন  বিষয়টি জরুরী সেবা-৯৯৯ এ ফোন করিয়া পুলিশকে জানালে বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বন্দর থানার মনারবাড়ীস্থ এ্যাডভোকেট কাউছারুল ইসলাম এর পাথর ভাঙ্গার ফ্যাক্টরী ভিতর থেকে  লুণ্ঠনকৃত ১১,৫০০/- (এগারো হাজার পাঁচশত) কেজি রড উদ্ধার করে।

পুলিশ আটক আসামীদের নিকট পলাতক আসামীর নাম ঠিকানাসহ বাকী লোহার রড, ট্রাকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা উপরোক্ত পলাতক আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং লুন্ঠনকৃত ট্রাক এবং বাকী লোহার রড বন্দর ধানাধীন মুরাদপুর সাকিনস্থ বন্দর বি এস আর এনস্টীল গোডাউন এর সামনে ঢাকা চট্টগ্রাম গামী মহাসড়কের উপর আছে।

পুলিশ আটক আসামীদের সাথে নিয়ে বন্দর বি এস আর এনস্টীল গোডাউন এর সামনে ঢাকা চট্টগ্রাম গামী মহাসড়কের উপর পৌছাইয়া আসামীদের স্বীকারউক্তি ও দেখানো মতে লুন্ঠনকৃত ট্রাক এবং বাকী চার হাজার পাঁচশত কেজি রড উদ্ধার করিয়া আটক আসামীদের সহ উদ্ধারকৃত মালামাল নিয়ে থানায় আসে। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আস ম দ র এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিভৃতচারী কৃষকের আর্তনাদ কি আমরা শুনছি

কৃষি এবং কৃষকই এ দেশের প্রাণ—এই ধ্রুব সত্যটি নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলো, মধ্যস্বত্বভোগী ও কপট ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকের স্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত। নীতিনির্ধারক ও মূলধারার রাজনীতিবিদদের নীরবতা এবং কৃষকের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যকে ‘ট্রল’ করার মতো দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা আমাদের জাতীয় সংবেদনশীলতার অভাবকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে।

করোনাকালীন ভয়াবহ সংকটে কৃষি যেভাবে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে, তা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। অথচ এত কমিশন গঠিত হলেও, কৃষি কমিশন গঠন করা হয়নি। এর মূল কারণ সম্ভবত নিভৃতে কাজ করে যাওয়া কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের মূল্য এই সমাজে অনেক সস্তা।

বর্তমানে কৃষি খাত নিয়ে যত আলোচনা—তা সবই যেন নিরাপদ কৃষি, বাণিজ্যিক কৃষি, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, ভ্যালু চেইন ও উৎপাদন বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। প্রধান স্টেকহোল্ডার কৃষক ও তাঁর জীবন-জীবিকার স্বার্থ প্রায়শই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কৃষকের কোনো সক্রিয় সংগঠন নেই। চাষাবাদ ফেলে ঢাকা শহরে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব, কারণ তাতে তাঁদের পেটে ভাত জুটবে না।

অথচ কৃষকেরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশায় কৃষক! মাস্ক, গ্লাভস বা রাবারের জুতা চোখে না দেখা, ছেঁড়া গামছা মুখে পেঁচিয়ে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করা ভূমিহীন মানুষটা আমাদের কাছে হয়তো ‘কৃষিশ্রমিক’, ‘কৃষক’ নন; কিন্তু খাদ্য উৎপাদনচক্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে মৌলিক এবং তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকিও সবচেয়ে বেশি।

সমাজের চোখে ‘কৃষক’ বলতে যখন বিঘার পর বিঘা জমির মালিক, শিক্ষিত বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদের বোঝানো হচ্ছে, তখন প্রান্তিক, নিরক্ষর মানুষগুলোর অস্তিত্ব ও সংগ্রাম প্রায় অস্বীকৃত থেকে যাচ্ছে।

আবার কৃষক ও কৃষির সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত নয়, এর শিকড় প্রোথিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাণিজ্যিক কৃষিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষায় কৃষির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো প্রায় উপেক্ষিত।

কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।

আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা বা গবেষণা নেই। কীভাবে নারীর হাত দিয়ে কৃষির সূচনা হয়েছিল—ফসলের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বপন ও পরিচর্যার প্রথম ধাপগুলোয় নারীর যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল, সেই গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিকগুলো পড়ানো হয় না বললেই চলে।

বাংলার কৃষিকাজে লোকায়ত জ্ঞানের অন্যতম ধারক খনার বচন প্রাসঙ্গিক হলেও আবহাওয়া, ফসল রোপণের সময়, মাটির গুণাগুণ–সম্পর্কিত হাজার বছরের পরীক্ষিত প্রথাগত প্রজ্ঞা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে স্থান পায় না। এর বদলে শুধু স্থান পায় আধুনিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিকীকরণের তত্ত্ব।

ধান লাগানো থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, বীজ সংরক্ষণ, ফসল মাড়াই ও ঝাড়াইয়ের মতো অনেক ধাপে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ বাংলাদেশের কৃষিতে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিভিন্ন গবেষণায় এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। অথচ এই বিশাল শ্রমশক্তি ও তাঁদের সমস্যা নিয়ে মূলধারার একাডেমিক আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদিও সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে।

কৃষকের নিবিড় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রায়শই অন্ধকারে থাকছে। গান গাইতে গাইতে ধান কাটা, ধান লাগানো বা নবান্ন উৎসব—এসব প্রথা ও রীতিনীতি কেবল সংস্কৃতি নয়, কৃষকের জীবনের আনন্দ, দুঃখ ও শ্রমের প্রকাশ। পাঠ্যক্রমে এসবের অনুপস্থিতি কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে নাগরিকসচেতনতা বৃদ্ধির পথে এক বড় বাধা।

কৃষির এই বহুমুখী সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু যান্ত্রিকীকরণ আর উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই চলবে না। প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতিগত পরিবর্তন।

যা করা যেতে পারে:

ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার সরকারি উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমাতে শক্তিশালী ‘ভ্যালু চেইন’ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ: প্রান্তিক কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের জন্য বিনা মূল্যে মানসম্পন্ন কীটনাশকপ্রতিরোধী মাস্ক, গ্লাভস এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।

শিক্ষায় কৃষির সাংস্কৃতিক পাঠ অন্তর্ভুক্তিকরণ: উচ্চশিক্ষা ও স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে কৃষির উৎপত্তি, নৃতত্ত্ব, নারীর ভূমিকা, লোকায়ত জ্ঞান (যেমন খনার বচন) এবং কৃষকের জীবন ও সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

কৃষিশ্রমিকের স্বীকৃতি: নারীর কৃষিভিত্তিক শ্রমের স্বীকৃতি প্রদান করা। কৃষিশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ও স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় আলাদা বরাদ্দ রাখা।

সর্বোপরি নীতিগত সদিচ্ছা এবং কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিই পারে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার মূল ভিত্তি—নিভৃতচারী কৃষককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে। কৃষি ও কৃষক সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

মো. জুবায়ের ইবনে কামাল অফিসার, জনতা ব্যাংক পিএলসি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ