যশোরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
Published: 14th, August 2025 GMT
যশোরে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরকে (টিপু) বুকসমান বালুতে পুঁতে অস্ত্রের মুখে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলার মূল আসামি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) আসাদুজ্জামান জনিকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার রোজ গার্ডেন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় আসাদুজ্জামানের সহযোগী তুহিন শেখ (৩৫) নামের একজনকে আটক করা হয়। তুহিন শেখ অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও বিএনপি কর্মী। তিনি উপজেলার কোটা গ্রামের মাহমুদ শেখের ছেলে।
যৌথবাহিনী ওই দুজনকে নিয়ে আসাদুজ্জামানের কনা ইকো পার্ক, গুড়হাটা এলাকার বাড়ি ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অভিযান চালাচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বেলা দুইটা পর্যন্ত অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানায়।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরকে নির্যাতন করে চার কোটি টাকা হাতিয়া নেওয়ার মামলায় আসাদুজ্জামান জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর সঙ্গে থাকা তুহিন শেখ নামের অপর একজনকে আটক করা হয়েছে। আসাদুজ্জামানের ইকো পার্ক ও ব্যক্তিগত অফিসে চর্চার সেল (নির্যাতনের বিশেষ জায়গা) আছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে।
নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজের স্ত্রী আসমা খাতুন বাদী হয়ে ছয়জনের নাম–পরিচয় উল্লেখ করে অভয়নগর থানায় চাঁদাবাজির একটি মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি করা হয় আসাদুজ্জামানকে। এ ছাড়া আসাদুজ্জামানের বাবা মো.
মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দীন দপ্তরী (সাময়িক বহিষ্কৃত), আসাদুজ্জামানের সহযোগী সৈকত হোসেন হিরা প্রমুখ।
ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আসমা খাতুন ঘটনার সুস্থ বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই অভয়নগরের রাজঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে অভয়নগর থানায় চাদাবাজির মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরকে সুকৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির স্থগিত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন (হিরা) নামের এক ব্যক্তি। এ সময় আসাদুজ্জামান তাঁকে মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এরপর বাদী (আসমা) সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে স্থানান্তর করেন। টাকা পেয়ে ওই দিন শাহনেওয়াজকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনযশোরে ব্যবসায়ীকে বুকসমান বালুতে পুঁতে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা, একজন গ্রেপ্তার০৪ আগস্ট ২০২৫এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে নওয়াপাড়া বাজারে যাচ্ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পার হলে সৈকত হোসেন আবার তাঁর গতিরোধ করেন। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত তাঁর মুঠোফোনটা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাদী (আসমা) জানতে পারেন তাঁর স্বামীকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামানের কনা ইকো পার্কে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁকে (আসমা) মারধর করেন। এরপর বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে শাহনেওয়াজকে বালু চাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা চাদা দাবি করেন। এ সময় শাহনেওয়াজ বাধ্য হয়ে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। সাংবাদিক মফিজের হিসাব নম্বরে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় মফিজ জোর করে আরও এক কোটি টাকার চেক দেন। পাশাপাশি আসাদুজ্জামানের নামে কেনা তিনটি ও দিলীপ সাহার নামে কেনা তিনটি ১০০ টাকা মূল্যের ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেন।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে গত মঙ্গলবার আসাদুজ্জামানের বোন মানজারমিন ইলোরা যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, আসমা খাতুনের অভিযোগ মিথ্যা। মূলত অন্য ব্যবসায়ীরা শাহনেওয়াজের কাছে গম কেনাবেচার টাকা পেতেন। সেসব টাকা পরিশোধের বিষয়ে আমার ভাই আসাদুজ্জামান মধ্যস্ততা করেছেন। এ জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শাহনেওয়াজের স্ত্রী আসমা খাতুন টাকা আদায়ের মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় আস দ জ জ ম ন আস দ জ জ ম ন র ব যবস য় নওয় প ড় ব এনপ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বন্দরে বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও এল তরফদার ট্রেডার্স নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা হয়েছে, যাতে তাদের তিনজন কর্মচারী আহত হয়েছেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই হামলায় চালানো হয়।
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ডাকাত ধরতে গিয়ে হামলায় আহত র্যাব সদস্যরা
হিরো আলমের ওপর হামলা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নওয়াপাড়া রেলস্টেশন বাজারে বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অফিস লক্ষ্য করে দুটি ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একটি ককটেল প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও একটি বাইরে বিস্ফোরিত হয়। এতে মাসুম (৩২), শাওন(৩০) ও জাহাঙ্গীর (২৮) নামে তিন কর্মচারী আহত হন।
এর কিছুসময় পর নওয়াপাড়া ফেরিঘাট এলাকায় এল তরফদার টেড্রার্সের সামনে আরো একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অভয়নগর থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
এর আগে গত ১৮ জুলাই নওয়াপাড়া গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুফলা ভবনে বোমা হামলা হয়, ওই ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা যেন পিছুই ছাড়ছে না বন্দরশহর নওয়াপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার। হামলা, পাল্টা হামলা, গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা রয়েছে অভয়নগরে। এ ছাড়া বিএনপির আন্তর্কোন্দলেও গ্রুপি-ভিত্তিক সংঘাতের খবর রয়েছে।
ঢাকা/রিটন/রাসেল