রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত হওয়া ‘মুক্তির উৎসব’ কাল
Published: 14th, August 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশেষে ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামের কনসার্টটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি জানান, আগামীকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার–সংলগ্ন এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব বাস্তবায়ন কমিটি’। এর আগে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুনমিডিয়া ট্রায়ালের অভিযোগ সাবেক সমন্বয়কের, পেছাল ‘মুক্তির উৎসব’০১ আগস্ট ২০২৫ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি বছরের ৫ আগস্ট ‘জুলাই ৩৬: মুক্তির উৎসব’ নামের ওই কনসার্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক এস কে হৃদয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁরা ‘অর্গানাইজার-৩৬ জুলাই, মুক্তির উৎসব’ পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠান। তাঁদের এ আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। আবেদনের কয়েকটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে মিডিয়া ট্রায়ালের অভিযোগ তুলে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সামসাদ জাহান। তিনি বলেন, ‘নানা নাটকীয়তার কারণে নির্ধারিত সময় পরিবর্তন হলেও অবশেষে আয়োজনটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, সাবেক ও নবাগত ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ইভেন্টের টিকিট সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে বহিরাগত নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’
আরও পড়ুন‘মুক্তির উৎসব’ করতে আর্থিক অনুদান চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের চিঠি২৯ জুলাই ২০২৫সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘গত বছর বন্যার কারণে আমরা জুলাইয়ের বিজয় উৎসব করতে পারিনি। এবার সেই পরিকল্পনা থেকে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক অনুদান চাওয়ার আবেদনটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে কিছু অনুদান স্থগিত হওয়ায় অনেকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি থেকে সরে আসতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে কিছুদিনের জন্য প্রোগ্রামটি পেছাতে হয়।’
অনুষ্ঠানটির আরেক উদ্যোক্তা এস কে হৃদয় বলেন, ‘আগামীকালের অনুষ্ঠানে আর্টসেল ব্যান্ডের পাশাপাশি আমাদের ক্যাম্পাসের ব্যান্ড ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা, রাজশাহীর ব্যান্ড ত্রিমাত্রি গান পরিবেশন করবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড এবং নবাগত শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি ফরম দিয়ে ফটক দিয়ে ঢুকতে হবে। বেলা ৩টার দিকে ফটক খোলা হবে। স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে ছাত্র এবং বিজয়-২৪ হলের পাশের ফটক দিয়ে ছাত্রীরা প্রবেশ করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক সমন বয়ক ম ক ত র উৎসব অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।