সিলেটের ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারি থেকে সাদাপাথর উত্তোলন ও সরানোয় জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে ৬০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে উত্তোলন করা ও সরানো সাদাপাথর সিভিল প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে ভোলাগঞ্জের ওই কোয়ারিস্থলে যত দ্রুত সম্ভব সম্ভাব্য সাত দিনের মধ্যে পুনঃস্থাপন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার তারিখ রেখেছেন আদালত।

‘সিলেটের সাদাপাথর গায়েব: প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় নজিরবিহীন লুটপাট’ শিরোনামে গতকাল বুধবার একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে চার আইনজীবী আজ রিটটি করেন। সাড়ে ১২টার দিকে রিটের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রুল ও অন্তর্বর্তী আদেশ দেন।

আদেশে হাইকোর্ট ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে সাদাপাথর উত্তোলন ও সরানোয় আর্থিক এবং প্রতিবেশ ও পরিবেশের ক্ষতি নিরূপণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপককে নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবেশসচিব ও খনিজ সম্পদ সচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকা থেকে সাদাপাথর যাতে কেউ উত্তোলন ও সরাতে না পারে, সে জন্য সার্বক্ষণিক (দিনে ও রাতে) তদারকির জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মনিটরিং টিম (তদারক দল) গঠন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) রিপোর্ট দাখিল করতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিবাদীদের বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ; তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহা.

এরশাদুল বারী খন্দকার।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর উত্তোলন ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ওই সাদাপাথর এলাকা সংরক্ষণের জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই এলাকাকে পরিবেশ আইনের ৫ ধারা অনুসারে ‘ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ ঘোষণার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পরিবেশের ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়ের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান মনজিল মোরসেদ।

আরও পড়ুনপাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে ৭ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। 

এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল। 

পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”

তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”

ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ আদায়ে লাগবে ৩৩৩ বছর
  • ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ