চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। গত দেড় মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় প্রায় পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল পাঠানো হয়েছে পাইপলাইনে। জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই তেল সরবরাহ করেছে। আগামী ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে পাইপলাইনে তেল সরবরাহের এ কার্যক্রম উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়েছে ৮৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলে পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।

বিপিসি সূত্র জানায়, গত ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে পাইপে ডিজেল সরবরাহের কাজ শুরু হয়। ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪ কোটি ৮২ লাখ লিটার ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে তেমন ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ফলে ১৬ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সরবরাহ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন—এমনটাই কথা রয়েছে।

* প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে শেষ হয় গত মার্চে।
* শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
* শেষ পর্যন্ত প্রকল্পে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
* দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন।
* সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয় ৬৭ লাখ টন।
* ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৮ লাখ টন। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার মতো খরচ হচ্ছে। পাইপলাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে তেল সরবরাহ শুরু হলে পরিবহন খরচ কমে আসবে।

প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। তাতে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগ উঠে আসবে ১৬ বছরের মধ্যে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো.

আমিনুল হক বলেন, বর্তমানে নৌ ও সড়কপথে ডিজেল পরিবহনে বছরে খরচ হচ্ছে বছরে ৩২৬ কোটি টাকা। পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন শুরু হলে এই খরচ আর লাগবে না। তবে পাইপলাইনটির রক্ষণাবেক্ষণে বছরে খরচ হবে ৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা।

নথিপত্র অনুযায়ী, পাইপলাইনের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশটি গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত। পাইপলাইন ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বুস্টার পাম্প, ৯টি জেনারেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুরু থেকে প্রকল্পটি নিয়ে বেকায়দায় ছিল বিপিসি। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ যেমন শেষ করা যায়নি, তেমনি বাড়াতে হয়েছে ব্যয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। বিপিসির এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

বিপিসি সূত্র জানায়, শুরুতেই প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন এসেছিল। এসব পরিবর্তন সংযোজন করে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। এরপর ওই বছর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ ছিল। অন্যদিকে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ সরঞ্জাম এসেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল। ফলে ডলার ও সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্পটির বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে শিগগিরই পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহপ্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে সহজে, নিরাপদে ও সাশ্রয়ীভাবে তেল সরবরাহ করা যাবে। অপচয়ও কমবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল সরবর হ প রকল প র ল পর বহন পর ক ষ ম হয় ছ ল ল খ টন

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো