লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত রূপালী ইলিশের দেখা মিলছে না। দিনের পর দিন নদীতে জাল ফেলেও বেশিরভাগ জেলে ফিরছেন খালি হাতে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন জেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জেলে পরিবার। ক্ষতির মুখে পড়েছেন আড়ৎদার ও মাছ ব্যবসায়ীরাও।

ইলিশের আশায় ভোরের আলো ফুটতেই জাল কাঁধে নিয়ে নদীতে নামছেন জেলার মেঘনাপাড়ের জেলেরা। তবে দীর্ঘ সময় নদীতে কাটিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। গত দুই মাস ধরেই চলছে এমন পরিস্থিতি। মেঘনার ২৫টি মাছঘাটে প্রতিদিন যেখানে গড়ে বেচাবিক্রি হতো প্রায় সাড়ে তিন টন ইলিশ, সেখানে এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একেবারেই নেই। 

গত অর্থবছরে লক্ষ্মীপুরে ২৩ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হলেও এবার ভিন্ন চিত্র। সামান্য পরিমাণে যে ইলিশ উঠছে, তার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে জেলে পরিবার থেকে শুরু করে আড়ৎদার, সবার মুখে এখন একটাই কথা, ‘ইলিশ গেলো কই?’

জেলে আব্দুর রহমান, রবিন হোসেন, ইলিয়াস, মোস্তফা ও জুলফিকাররা বলছেন- বর্ষা মৌসুমে যেখানে প্রতিদিন ৮-১০ কেজি ইলিশ ধরা পড়তো, সেখানে এখন জাল তুলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে ধারদেনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আগে দিনে ১০-১৫ কেজি মিলতো, এখন ২-৩ কেজিও পাওয়া যায় না। ঘরে চাল নাই, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চিন্তিত এসব জেলেরা।

ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় আড়ৎদার ও মাছ ব্যবসায়ীরাও। আড়ৎদার নিজাম উদ্দিন বলেন, “মাছ না থাকলে আড়ৎ চালানো দায়। এখন তো আড়ৎ বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া উপায় দেখছি না। গত তিনদিনে অল্প কিছু মাছ জেলেদের জালে উঠলেও হতাশা কাটছে না।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ রপ্তানি করা আব্দুল হক ব্যাপারী বলেন, “প্রতি মৌসুমে যেখানে ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ বাজারজাত হতো, এখন দিনে ১-২ মণ ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু মাছ পাই, দাম এত বেশি যে মানুষ কিনতেই পারছে না। ব্যবসায় আমরাও ক্ষতিতে আছি।”

মৎস্য বিভাগ বলছে, নদীতে লবণাক্ততা কমে যাওয়া, পানির প্রবাহে পরিবর্তন এবং জলবায়ু প্রভাবের কারণে ইলিশের প্রজনন ও আগমন ব্যাহত হচ্ছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “ইলিশের মাইগ্রেশনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রাকৃতিক প্রভাব ও পরিবেশগত কারণে মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে গত কয়েকদিনে কিছুটা ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।”

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।

এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।

আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে কফি–সংস্কৃতি প্রসারে ‘আমা কফি’
  • রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা
  • চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি