ভারতকে দূরে ঠেলে এশিয়ায় কি নীতি বদল করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 15th, August 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আজ শুক্রবার আলাস্কায় হতে যাওয়া বৈঠকটির দিকে যে শুধু ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোই তাকিয়ে আছে, তা নয়। বৈঠকের জায়গা থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের নয়াদিল্লিতেও এ নিয়ে বেশ কৌতূহল আছে।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে শক্তপোক্ত সম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। পাশাপাশি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক ক্রমাগত মজবুত করেছে তারা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ এবং জো বাইডেনের মেয়াদকালেও সে ধারা বজায় থাকতে দেখা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার মূল কারণ হলো চীনের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিকে নিজেদের ছায়াশক্তি হিসেবে ব্যবহার করা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত শক্তি বেড়ে যাওয়ায় এমনটা পদক্ষেপ নেয় তারা।
সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজম শেষ হওয়ার পর কৌশলগত বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে সামাল দিতে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার দিকে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এর জন্য তারা গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কোয়াড জোট গঠন করে।
ওবামা এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘সেরা সহযোগী।’
তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ট্রাম্প ভারতের কিছু পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। যেসব দেশের পণ্যে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার একটি ভারত। ৫০ শতাংশ শুল্কের মধ্যে অর্ধেকই আরোপ করা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘জরিমানা’ হিসেবে।
অথচ বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে একসময় বাইডেন প্রশাসনই ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে উৎসাহিত করেছে।
এদিকে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের চেয়ে বেশি তেল কেনে। অথচ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক থেকে সাময়িকভাবে রেহাই পেয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্প চীনের প্রতি এক রকম আর ভারতের প্রতি অন্য রকম আচরণ দেখানোর কারণে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া অঞ্চলে কৌশল বদলাচ্ছে কি না।
২০০০-এর দশকের শুরু থেকে নয়াদিল্লিতে যত সরকার এসেছে, তাদের সবাইকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতে কৌশলগত সহযোগী হয়ে উঠছিল ভারত। ট্রাম্প এ সম্পর্ককে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। মোদির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
ট্রাম্প ভারতের কিছু পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। যেসব দেশের পণ্যে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার একটি ভারত। ৫০ শতাংশ শুল্কের মধ্যে অর্ধেকই আরোপ করা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে। অথচ বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে একসময় বাইডেন প্রশাসনই ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতে উৎসাহিত করেছে।ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি দুটি সমাবেশে মোদির সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কয়েকবারই একে অপরকে আন্তরিকভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখা গেছে। তাঁরা একে অপরকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তবু ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক থেকে নয়াদিল্লি রক্ষা পায়নি। ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা ব্রাজিলের শুল্কের সমতুল্য।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়া–বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক মিলান বৈষ্ণব বলেন, শুল্কজনিত পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কয়েক দশকের সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় চিড় ধরিয়েছে।
ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর কয়েক মাস ধরে নয়াদিল্লি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল। তারা বাক্যুদ্ধে জড়াতে চাইছিল না।
তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। ভারত অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিমুখী আচরণ করছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে এবং আগে তারাই চেয়েছিল, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কিনুক।
আল-জাজিরাকে বৈষ্ণব বলেন, একটা বিষয় পরিষ্কার: সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা অনেক কমে গেছে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রাভীন দোন্থির মতে, মোদি ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়েছে।
এর আগেও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে পড়েছিল। ভারত মস্কো থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার পর এ হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে প্রস্তাবিত সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে ভারতকে ছাড় দেয় বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডানে) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র নয় দ ল ল ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে গভীর নলকূপের লাইনম্যানের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
জয়পুরহাটে গভীর নলকূপের এক লাইনম্যানের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ক্ষেতলাল উপজেলার বরাইল ইউনিয়নের কলিঙ্গা গ্রামের একটি ফসলি জমি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আবু সাইদ (৬৫) ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই গভীর নলকূপের লাইনম্যান ও পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পুলিশ বলছে, নিহতের হাত-পা বাঁধা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’
কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার
পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে আবু সাইদ নলকূপ পাহারা দেওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। তবে, শুক্রবার সকালে তিনি বাড়িতে ফেরেননি। পরে পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলে ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগ করে না পেয়ে নলকূপের ঘরে গিয়ে তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/আব্দুল্লাহ/রাজীব