‘মাঠ ও পার্কের দখলদারির কোনো পরিবর্তন আসেনি’
Published: 16th, August 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মাঠ ও পার্ক রক্ষায় আন্দোলনকারীদের বড় একটা প্রত্যাশা ছিল। হয়তো এবার অন্তত পরিবেশ, তথা মাঠ ও পার্ক দখলমুক্ত হবে, জনগণের জন্য উন্মুক্ত হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা এখন হতাশায় পরিণত হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরও মাঠ ও পার্কের দখলদারির কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে ময়মনসিংহ রোডে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ক্লাবের মাঠ-পার্ক দখল বন্ধে সরকারের করণীয়: নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। মাঠ, পার্ক ও জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পরিবেশ আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সরকারি সংস্থাগুলো দখলদার সরাতে ব্যর্থ হচ্ছে। নয়তো তারা অনৈতিক যোগসাজশে দখলদারদের সহযোগিতা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে খিলগাঁও আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ আন্দোলনে, মাঠ-পার্ক রক্ষার আন্দোলনে যুক্তদের জন্য সব মিলিয়ে একটা হতাশার পরিবেশ চলছে। আন্দোলন হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে, কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কিছু করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তারা অনেক শক্তিশালী। তাই যখন আমরা শক্তি প্রদর্শন করতে পারব, সম্মিলিতভাবে যখন একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে পারব, তখনই এই বিষয়গুলো আমাদের জন্য সহজ হবে।’
সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করার মতো পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বলে জানান হাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, উত্তর সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টারের দখল র্যাব ১৭ বছর পর ছেড়েছে। তবে খিলগাঁও থানার পুলিশ নতুন থানা ভবন নির্মাণের অজুহাতে ওই জায়গা দখল করতে চাইছে।
সংবিধান সংস্কার কমিটির সদস্য লেখক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর দেখলাম, মাঠগুলোর দখলদারির বিন্দুমাত্র কোনো পরিবর্তন আসেনি। শেখ জামাল, আর শেখ কামালের নামে, যে নামেই মাঠ দখল করা হোক, এই মাঠ দখলের পর সরকার বদলাল, জনগণ স্বৈরশাসককে উৎখাত করল, সেই মাঠ তো আমরা ফেরত পাইনি এখনো।’ মাঠ ও পার্ক রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ইয়ুথ ক্লাব নাকি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এখন তাদের সরানো যাবে না। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।’
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবের দাবি, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় অবস্থানের সময় তাঁদের ওপর হামলা চালানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। এ প্রতিষ্ঠান বর্তমান ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের। ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক এখন নব্য সিন্ডিকেটবাজি করছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তিনি দায়িত্ব নিয়ে অত্যন্ত গর্ব করে বলেছিলেন, সব মাঠ-পার্ক জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কোথায় উন্মুক্ত করা হয়েছে?’
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশার এই সরকার বারবার আমাদের আহতই করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠের বিরুদ্ধে আবার মামলা হয়েছে। মনে হলো যুদ্ধটা আবার শুরু হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নিশাত মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন জনস্বাস্থ্য ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং সেভ ধানমন্ডি প্লেগ্রাউন্ডসের সংগঠক সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদ।
প্রবন্ধে মাঠ ও পার্ক রক্ষায় স্বল্প মেয়াদে ১০টি দাবি ও দীর্ঘ মেয়াদে ৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মাঠ-পার্ক সংরক্ষণ, নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার, ক্লাবের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও কৃত্রিম স্থাপনা অপসারণ, কমিউনিটি সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল গঠন। একই সঙ্গে সমন্বিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন, উন্মুক্ত মাঠকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, আইন ও নীতিমালা সংস্কার, মাঠ-পার্কের তালিকা প্রণয়ন, স্কুল-কলেজ মাঠ উন্মুক্তকরণ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ক রক ষ য় উন ম ক ত সরক র র দখলদ র পর ব শ র জন য র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না: চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘‘বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের মানুষ আর চলতে চায় না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাই মানুষ ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এজন্য দেশপ্রেমিক ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীতে ইসলামের পক্ষে ভোটের বাক্স হবে একটি। আমরা ইসলামী দলগুলো আর কোনো চাঁদাবাজ দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না।’’
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, ‘‘একটি দল আছে, যারা পূর্বে ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে একাধিকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজিসহ নানা অপরাধ করেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীও করছে। আবারো ক্ষমতায় যেতে ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে ফ্যাসিস্ট বিদায় করেছে পুরনো বন্দোবস্তর জন্য নয়। নতুন সিস্টেম ও নতুন কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কারণ দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ক্ষমতা দেখেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের মানুষ পুরনো সিস্টেম আর দেখতে চায় না। পুরনো বউকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে এনে জনগণের সামনে উপস্থাপন করলে জনগণ আর মেনে নেবে না। তাই নির্বাচনের পূর্বে গণভোট দিতে হবে। পিআর কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নির্বাচনের পূর্বেই দিতে হবে। বিদেশি অথবা দেশের কোনো অপশক্তির ইশারায় যদি এগুলো কার্যকর করা না হয়। তাহলে, ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’’
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/রাজীব