মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশাল আয়োজন করে সাড়ম্বরে স্বাগত জানালেন। অন্য কোনো বিশ্বনেতাকে এমনভাবে অভ্যর্থনা জানাননি ট্রাম্প। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম তাঁরা মুখোমুখি বৈঠক করলেন। আর শুরু থেকেই দুজনের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের প্রকাশ দেখা গেছে।

নিজেকে ‘চুক্তির কারিগর’ বলতে পছন্দ করেন ট্রাম্প। আলাস্কার এক বিমানঘাঁটিতে তিনি পুতিনের জন্য লালগালিচা বিছিয়ে দিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর গতকাল শুক্রবারই প্রথম পশ্চিমা মাটিতে পা রাখলেন পুতিন।

ট্রাম্প বিমানঘাঁটির টারম্যাকে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে তাঁর ‘বন্ধু’ পুতিনের অপেক্ষা করলেন। পুতিন এগিয়ে আসতেই ট্রাম্প হাততালি দিতে থাকলেন। এরপর উষ্ণ করমর্দন ও হাসিমুখে একে অপরকে স্বাগত জানালেন।

তবে যে দেশের মানুষ ট্রাম্পের কাছ থেকে শান্তির আশা করছিলেন, সেই ইউক্রেন থেকে ট্রাম্প–পুতিনের বৈঠকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, পুতিনের প্রেসিডেনশিয়াল বিমান থেকে নামার সিঁড়ির নিচে মার্কিন সেনারা হাঁটু গেড়ে বসে লালগালিচা ঠিক করছেন।

ইউক্রেনের অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্থার সাবেক প্রধান মুস্তাফা নায়েম ছবিটি শেয়ার করে ব্যঙ্গ করে লিখলেন—‘মেক নিইলিং গ্রেট অ্যাগেইন’ (হাঁটু গেড়ে বসাকে আবার মহৎ করো)।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক

ট্রাম্প–পুতিনের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো বড় অগ্রগতি হয়নি। তবে তাঁরা কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন এবং পুরোনো বন্ধুত্ব আবারও ঝালিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি।

তিন ঘণ্টা শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প ও পুতিন শুধু উষ্ণ মন্তব্য করলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নিলেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কিনা মিডিয়া পছন্দ করেন, তাঁর ক্ষেত্রে এটি বিরল ঘটনা।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল, অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘খুব অল্প কিছু বিষয় রয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখনই সে বিষয়ে বিস্তারিত বলব না।’

ট্রাম্প পরে ফক্স নিউজকে বলেন, এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দায়িত্ব। তাঁকে এই আলাস্কা বৈঠককে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার তিন বছরের আক্রমণ শেষ করার মতো কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষায়, ‘এখন এটা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দায়িত্ব। ইউরোপীয় দেশগুলোকেও কিছুটা ভূমিকা রাখতে হবে। তবে মূলত জেলেনস্কির হাতেই বিষয়টা।’

ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি এই বৈঠককে দশের মধ্যে দশ দিয়েই মূল্যায়ন করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধে প্রশাসন নীতিগতভাবে একমত: ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রশাসন নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ দাবি করেন।

সম্প্রতি উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং দেশের ২৩টি ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে বেশির ভাগ সংগঠন ক্যাম্পাসে গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়। শুধু ছাত্র অধিকার পরিষদ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

ওই বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয় ক্যাম্পাস, আবাসিক হল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে কীভাবে ছাত্ররাজনীতি চলবে এবং এর ধরন কী হবে, সে বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে।

আজকের বৈঠকে ছাত্রদলের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ওই রূপরেখা প্রণয়নের অগ্রগতি, গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটার তালিকায় ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের’ অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এবং নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক ডাকসু ভোটার তালিকায় ১৫০ জনের বেশি ছাত্রলীগের ‘সক্রিয় সন্ত্রাসীর’ নাম রয়েছে। এর মধ্যে কারাগারে থাকা এসএম হল ছাত্রলীগ সভাপতির নামও আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর ধরে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে; কিন্তু তারা তা করেনি। ফলে তারাই ভোটার তালিকায় রয়ে গেছে।’

নাছির উদ্দিন আরও বলেন, ছাত্রদলের ঘোষিত হল কমিটিতে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপমানজনকভাবে হয়রানি ও বুলিং করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, ফেসবুকের দুটি গ্রুপ—‘শিক্ষার্থী সংসদ ১’ এবং ‘শিক্ষার্থী সংসদ ২’ ব্যবহার করে ছাত্রদল ও এর নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে ‘শিক্ষার্থী সংসদ ১’ গ্রুপের প্রশাসক হলেন ‘অতীতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত’ জুলিয়াস সিজার, যিনি ডাকসুর ভোটার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত।

নাছির উদ্দিনের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কেউ এসব সংগঠনের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। কিন্তু সম্প্রতি এসব সংগঠনে ‘গুপ্ত শিবির’ পরিচয় গোপন করে অনুপ্রবেশ করছে এবং দখলদারত্ব কায়েম করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণসহ উপাচার্যের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি।’

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যেটি ক্যাম্পাস, হল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে ছাত্ররাজনীতির ধরন ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় উপাচার্য ও অন্য শিক্ষকেরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যাগুলোর পেছনে গুপ্ত রাজনীতি জড়িত।’

রাকিবুল ইসলাম দাবি করেন, উপাচার্য গুপ্ত রাজনীতির একটি সংজ্ঞা ও কয়েকটি মানদণ্ডও তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো যেকোনো ছাত্রসংগঠনকে তাদের প্রাথমিক সদস্যদের তালিকা প্রকাশ্যে জানাতে হবে, যাতে গোপন পরিচয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না থাকে।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বৈঠকে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উপাচার্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বুলিংয়ে জড়িত সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে অপসংস্কৃতি বন্ধে কঠোর নজরদারি চালানো হবে। এ ছাড়া কমিটি দ্রুত কাজ শেষ করে রূপরেখা প্রণয়ন করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতও অন্তর্ভুক্ত করবে।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়েও ছাত্রদল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চাই, কিন্তু প্রশাসন এক বছরের প্রস্তুতিতেও ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বাদ দিতে পারেনি। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রলীগের জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা প্রধান দাবি ছিল। এ বিষয়ে প্রশাসনের গাফিলতির জন্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশাসন কাজ করছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।

এদিকে ছাত্রদলের ঘোষিত হল কমিটিগুলো থাকবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই, এটা তো স্যাররাই বলেছেন হল কমিটি থাকবে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে ৮ আগস্ট মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদের মুখে হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ।

আরও পড়ুনঢাবির হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে, প্রক্টরের আশ্বাসে বিক্ষোভ থামালেন শিক্ষার্থীরা০৮ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধে প্রশাসন নীতিগতভাবে একমত: ছাত্রদল