কেন বাংলাদেশের ‘বিপদের বন্ধু’ মোস্তাফিজ
Published: 21st, September 2025 GMT
কথা খুব কম বলেন। মৃদু ভাষী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের কাছেও আরাধ্য। যে কয়েকবার তিনি তাঁদের মুখোমুখি হয়েছেন—তাঁর কাছে যাওয়া প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর ছিল ছোট। কখনো এক বাক্যে, কখনো এক-দুই শব্দেই থমকে গেছেন মোস্তাফিজ।
অথচ জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তাঁদের দলের সবচেয়ে বেশি মজা করেন কে? সবার তালিকারই ওপরের একটা জায়গা থাকবে মোস্তাফিজের জন্য। ক্রিকেটারদের মুখের সেই কথা বিশ্বাস করা কঠিনই হওয়ার কথা বাইরের অন্যদের জন্য।
তবে একটা দৃশ্যের বর্ণনায় হয়তো কিছুটা বোঝানো যাবে মাঠের বাইরের মোস্তাফিজকে।
আরও দিন তিনেক আগে আবুধাবি থেকে দুবাইয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সবার লাগেজ গুছিয়ে তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন টিম বাসে। মোস্তাফিজ এলেন শেষের দিকে, এসে হোটেলের গেট নয়— তিনি ছুটে গেলেন পেস বোলিং কোচ টেইটের দিকে।
মোস্তাফিজ তাঁর লাগেজটা একবার টেইটের গা ছুঁইয়ে দেন, তিনি তাকালেই আবার সরিয়ে নেন। মিনিট কয়েকের সেই দুষ্টামিতে দুজনের কারও মুখেই কথা নেই, তবে মুখে ছিল চওড়া হাসি। শ্রীলঙ্কা বিপক্ষের ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে টেইট বলে গেছেন এটাই নাকি তাঁর কাজ।
‘এটা’ মানে মোস্তাফিজকে খুশি রাখা—তাতে দলের মঙ্গল বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই পেসার। টেইটের মুখে কথাটা ছিল এমন, ‘আমার কাজ হচ্ছে তাঁকে খুশি ও আত্মবিশ্বাসী রাখা। বাকিটা সে নিজেই করে ফেলবে।’
সেই কাজটা মোস্তাফিজ কতটা ভালো করতে পারেন, তা দেখা গেছে একদিন পরই। গতকাল রাতে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে তাসকিন আহমেদ শ্রীলঙ্কার পাওয়ার প্লেতে একটা উইকেট নিতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলে ফেলেছিল ৫৩ রান।
তখন দল চাপে। অধিনায়ক লিটন দাস বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজকে। ৩ রান দিয়ে ওভারটা তিনি শেষ করেন। পরের ওভারে এসে মেহেদী তুলে নেন পাওয়ার প্লে জুড়ে আক্রমণাত্মক থাকা কুশল মেন্ডিসের উইকেট।
১৪তম ওভার। উইকেটে থিতু হয়ে গেছে দাসুন শানাকা আর কুশল পেরেরার জুটি। বোলিংয়ে আবার এলেন মোস্তাফিজ। তৃতীয় বলে চার হজম করলেন। অফ স্টাম্পের বাইরে নিচু হওয়া পরের বলটাই কুশল পেরেরার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় লিটন দাসের হাতে। ভাঙল জমে যাওয়া ২৭ বলে ৩২ রানের জুটি।
১৭তম ওভার। ততক্ষণে শানাকা বিধ্বংসী হয়ে গেছেন। তাঁকে চমৎকার সঙ্গ দিচ্ছেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা। বাংলাদেশ দল আবারও চাপে। আবার হাজির মোস্তাফিজ। প্রথম চার বলে বাউন্ডারি এল না। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিলেন শানাকা—কিন্তু ধরতে পারলে তো! কোনো বাউন্ডারি হজম না করেই মোস্তাফিজ শেষ করলেন ওভারটা।
এক ওভার পর আবার হাজির মোস্তাফিজ। তিনি ওভারটা শুরু করলেন এমন একটা পরিস্থিতিতে, যখন আগের দুটি বলেই ছক্কা খেয়েছেন শরীফুল ইসলাম। এবারও দল চাপে। শেষদিকে রান বাড়ার তাড়া ও উইকেট—দুটিই আছে শ্রীলঙ্কার হাতে।
প্রথম বলে ক্যাচ ছাড়লেন হৃদয়, তবে বলটাতে রান আউট হলেন আসালাঙ্কা। চতুর্থটিতে ক্যাচ দিলেন কামিন্দু মেন্ডিস, শেষটিতে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও। সব মিলিয়ে ওভার থেকে এল ৫ রান। আবার ত্রাতা মোস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৬৮ রান তুললেও চার ওভারে মোস্তাফিজ ২০ রান দিয়ে পেলেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত রানটা ৪ উইকেট আর ১ বল হাতে রেখে জিতেছে।
এ তো শুধু কালকের গল্প। মোস্তাফিজ বাংলাদেশের জন্য ত্রাতা হয়েছেন বারবারই। ডেথ ওভার, মানে ইনিংসের শেষ চার ওভারে তাঁর পরিসংখ্যানটাই দেখুন— আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই সময়ে ওভারপ্রতি ৭.
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৫৭) টি-টোয়েন্টি জয়ের সাক্ষীও মোস্তাফিজ। কিন্তু এই ম্যাচগুলোতে তাঁর অবদান কেমন? ওভারপ্রতি ৬.২০ গড়ে রান দিয়ে এই পেসার নিয়েছেন ১০৩ উইকেট। সামগ্রিক এই অবস্থাটা আরও বেশি করে পোক্ত হয়েছে এ বছর এসে।
কীভাবে তা বলার আগে একটা বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে রাখা জরুরি—বাংলাদেশ শুধু মোস্তাফিজের জন্যই জেতেনি। তবে তাঁকে ছাড়া খেলা এ বছর ৮ টি-টোয়েন্টির সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের খেলা ১১ টি-টোয়েন্টির যে একটি হার, তাও এবারের এই এশিয়া কাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
সুপার ফোরে এসে সেই শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জয়ের নায়ক হয়েছেন সাইফ হাসান। তবে সেই পথটা গড়ে দিতে মোস্তাফিজও ইট-বালু দিয়েছেন ঠিকঠাক। তাঁকে হয়তো সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে ম্যাচের শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলা সাইফের কথাটাই, ‘উনি যখনই বল করে, দল একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে থাকে। উনি বিপদের সময় বোলিংয়ে আসেন। বেশির ভাগ সময় ডেলিভারও করে।’
সত্যিই তো, মোস্তাফিজ তো বাংলাদেশের বিপদের বন্ধুই। ত্রাতা হন সংকটের সময়ে। তিনি ‘খুশি’ থাকলে জিতে যায় বাংলাদেশও!
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাড়া বাসায় রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ
পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কর্মরত এক রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে শহরের জিগাতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম কারপোভ ক্রিল (২৬)। তিনি রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএসকেএম কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আফজাল হোসেন বলেন, “কারপোভ ক্রিল জিগাতলা এলাকার চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনের বাড়ির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। গতকাল শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যরা রাশিয়া থেকে তার মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা বিষয়টি কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসারকে জানান।”
তিনি আরো বলেন, “সিকিউরিটি অফিসার দোভাষী আনোয়ারুল ইসলাম এবং পাশের ফ্ল্যাটে থাকা আরেক রাশিয়ান নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় ক্রিলকে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে রাশিয়ান চিকিৎসক মিখাইল এসে ক্রিলকে মৃত ঘোষণা করেন।”
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার বলেন, "প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাশিয়ান নাগরিক ব্রেন স্ট্রোকে মারা যেতে পারেন। কয়েক দিন আগে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।”
তিনি আরো বলেন, “মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ