নার্সিং এখন আন্তর্জাতিক মানের পেশা। আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তারদের পাশাপাশি নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মানুষের সেবা করার সুযোগ, দেশে–বিদেশে চাকরির নানা ক্ষেত্র, উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে এই সময়ে নার্সিংয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে তরুণদের জীবন।

একনজরে সুযোগগুলো দেখে নেওয়া যাক

সরকারি চাকরি: পাবলিক সার্ভিস কমিশন সম্প্রতি ৩ হাজার ৫১২ নার্সকে বিসিএস নার্সিং নন–ক্যাডারে নিয়োগ দিয়েছে।

বেসরকারি ক্ষেত্র: বেসরকারি হাসপাতাল, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রচুর কাজের সুযোগ আছে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র: বিদেশেও প্রচুর কর্মক্ষেত্র আছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নার্সরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন।

বিশেষায়িত নার্সিং: এটি দক্ষতার নতুন দিগন্ত। আজকের দিনে নার্সরা চাইলে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যেমন ইনটেনসিভ কেয়ার (নিবিড় পরিচর্যা), হৃদ্‌রোগ, শিশুস্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য, নারীর স্বাস্থ্য, কমিউনিটি হেলথ, নিউরোসায়েন্স, নার্সিং ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। বিশেষায়িত জ্ঞান থাকলে বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও মেলে বাড়তি সুবিধা।

আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জের এই বাড়ি স্থাপত্যের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে স্বর্ণপদক জিতেছে২২ ঘণ্টা আগেনার্সিং নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

১.

শুধুই ডাক্তারদের সহকারী

বাস্তবে নার্সরা গবেষণা, শিক্ষাদান, নীতি প্রণয়ন ও নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২. নার্সিং মানেই ‘বেডসাইড কেয়ার’

আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), অপারেশন থিয়েটার, স্কুল হেলথ, করপোরেট হেলথ প্রোগ্রাম—সবখানেই নার্সদের দায়িত্ব আছে।

৩. মেয়েদের পেশা

বর্তমানে প্রচুর ছেলে নার্সিংয়ে আসছে এবং ভালো করছে। বিদেশে পুরুষ নার্সদের চাহিদা বাড়ছে।

৪. ক্যারিয়ার গ্রোথ নেই

সরকারি চাকরি, বিদেশে উচ্চ বেতন, মাস্টার্স ও পিএইচডি—সব মিলিয়ে নার্সিংয়ে আপনার পেশাজীবনে উন্নতির অনেক সুযোগ আছে।

সারা বিশ্বে কেন নার্সিংয়ের চাহিদা বাড়ছে?

জনসংখ্যা বৃদ্ধি: স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বয়স্ক জনগোষ্ঠীর যত্ন: জেরিয়াট্রিক কেয়ার (বয়স্কদের সেবা) ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনায় নার্স অপরিহার্য।

মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা: মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে দক্ষ দাই ও নার্সের প্রয়োজন বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক নার্স–সংকট: সারা বিশ্বেই দক্ষ নার্সের সংকট আছে। তাই ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নার্সদের চাহিদা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের আধুনিকায়ন: টেলি হেলথ, রোবোটিক সার্জারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার টেকনোলজিতে দক্ষ নার্স অপরিহার্য।

আরও পড়ুনশবনম ফারিয়ার বিয়ের ১০টি ছবি২১ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক সুযোগ

অনেক নার্স এনসিএলইএক্স–আরএন (ন্যাশনাল কাউন্সিল লাইসেন্সার এক্সামিনেশন ফর রেজিস্টার্ড নার্সেস) পাস করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ বেতনে কাজ করছেন। ‘প্রোমেট্রিক’ পরীক্ষা দিয়ে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যেও কাজের সুযোগ আছে। কোরিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে ‘পিএইচডি ইন নার্সিং’ চালু হয়েছে, যা একাডেমিক ক্যারিয়ারে হতে পারে নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশি নার্সরা এখন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের নামী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা ও গবেষণায় যুক্ত আছেন।

আছে অনুপ্রেরণা

নার্সিংয়ে পড়াশোনা শুরুর পর থেকেই অনেক অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের গল্প শুনেছি। যেমন নাহিদা আক্তার। ঢাকা নার্সিং কলেজ থেকে ‘বিএসসি নার্সিং’ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানে নার্সিংয়ে ডক্টরেট করে একজন রেজিস্টার্ড নার্স হিসেবে এখন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মর্যাদায় কাজ করছেন। তাঁর অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের তরুণেরা চাইলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নার্সিংয়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

আরও আছেন সাদিয়া আইভি। সিলেট নার্সিং কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি নিয়ে পরে ডক্টরেট করেছেন। এখন জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা করছেন। তাঁর সাফল্য আমাদের দেখায়—নার্সিং শুধুই চাকরি নয়; বরং বৈশ্বিক একাডেমিক ক্যারিয়ার গড়ার প্ল্যাটফর্ম।

এ ছাড়া আশিকুর রহমান বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, কানাডায় গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। কানাডার ম্যাকমাস্টার্স ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন হুমায়ুন কবির।

উদ্যোক্তা হওয়ার পথ

নার্সরা শুধু চাকরিই নয়, চাইলে উদ্যোক্তা হওয়ার পথও বেছে নিতে পারেন। কী ধরনের প্রতিষ্ঠান তাঁরা চালু করতে পারেন? উদাহরণ—

বেসরকারি কেয়ার সেন্টার

শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার সেন্টার’

বয়স্কদের ‘হোম কেয়ার সার্ভিস’

বিশেষায়িত নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার

সাবরিনা মমতা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ক জ করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আয়ারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি: মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ

উচ্চশিক্ষার জন্য দারুণ সুযোগ নিয়ে এসেছে আয়ারল্যান্ড সরকার। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে Government of Ireland Postgraduate Scholarship প্রোগ্রামের আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। গবেষণায় আগ্রহী মেধাবী শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে এই বৃত্তি। আগ্রহীদের আবেদন করতে হবে অনলাইনে।

কেন এই বৃত্তি গুরুত্বপূর্ণ

আয়ারল্যান্ড সরকারের এই বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার অসাধারণ সুযোগ তৈরি করছে। এতে টিউশন ফি ও জীবনযাপনের খরচ কভার হবে, পাশাপাশি গবেষণা করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হবে। এটি শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগই নয়, বরং আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শক্ত ভিত তৈরি করবে।

আরও পড়ুননর্ডিক স্কলারশিপে সম্পূর্ণ অর্থায়নে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির সুযোগ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আবেদনের যোগ্যতা

এই বৃত্তিতে আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলো হলো—

* বয়স বা জাতীয়তার কোনো বাধা নেই, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন

* আবেদনপত্র ইংরেজি বা আইরিশ ভাষায় জমা দিতে হবে

* মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে

* পিএইচডির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে

* একই প্রোগ্রামে পূর্বে দুইবার আবেদন ব্যর্থ হলে তৃতীয়বার আবেদন করা যাবে না

* ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।

* পূর্বে Ireland Research scholarship পাওয়া থাকলে আবার আবেদন করা যাবে না।

* আবেদন করার আগে অবশ্যই একটি কুইজ (Eligibility Quiz) দিতে হবে।

* প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একজন সুপারভাইজার থাকতে হবে, যিনি গবেষণা পরিচালনায় সহযোগিতা করবেন।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫একই প্রোগ্রামে পূর্বে দুইবার আবেদন ব্যর্থ হলে তৃতীয়বার আবেদন করা যাবে না

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপসহ অক্সফোর্ডে পিএইচডির সুযোগ জাবি ছাত্রীর
  • আয়ারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি: মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ
  • পিএইচডি শেষে স্ত্রীকে নিয়ে দিলেন নুডলসের দোকান