রাজস্থানে গরু পাচারের সন্দেহে তরুণকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ গোরক্ষকদের দিকে
Published: 23rd, September 2025 GMT
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ভিলওয়াড়ায় গত সপ্তাহে গরু পাচারের সন্দেহে পিটিয়ে এক তরুণকে হত্যা করা হয়েছে। তথাকথিত গোরক্ষকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। ওই তরুণের নাম শেরু সুসাদিয়া (৩২)। তিনি মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর এলাকার বাসিন্দা।
ভিলওয়াড়া পুলিশ জানিয়েছে, তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, স্বেচ্ছায় আঘাত করা, বেআইনিভাবে আটকে রাখা, চাঁদাবাজি ও বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার (বিএনএস) ধারায় একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গরু পাচারের অভিযোগে আলাদা একটি মামলাও করা হয়েছে।
মামলার বাদী মনজুর পেমলা (৩৬) বলেন, তাঁর চাচাতো ভাই শেরু সুসাদিয়া ও মহসিন দোল (৩৪) ১৬ সেপ্টেম্বর ভিলওয়াড়ার লাম্বিয়া পশুর হাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছিলেন। তাঁরা ষাড়টি একটি ট্রাকে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। রাত প্রায় তিনটার দিকে রুপালি রঙের একটি ক্যাম্পার গাড়ি তাঁদের পিছু নেয়।
মনজুর বলেন, একপর্যায়ে গাড়িটি তাঁদের ট্রাকের সামনে গিয়ে পথ আটকে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটরসাইকেলে করে আরও কয়েক তরুণ সেখানে এসে পৌঁছান।
মনজুর অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তিরা তাঁদের দুজনকেই গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ‘তোরা গরু জবাই করিস’ বলে মারধর শুরু করেন। শেরু ও মহসিন তাঁদের বারবার বলছিলেন, তাঁরা হাট থেকে গৃহপালিত পশুটি কিনেছেন। কিন্তু হামলাকারীরা তাঁদের কোনো কথা শোনেননি।
বাদীর অভিযোগ, দেবা গুর্জর, কুনাল মালপুরা, প্রদীপ রাজপুরোহিত, নিতেশ সাইনিসহ অন্যরা দুজনকে মারধর করতে থাকেন। তবে মহসিন কোনোভাবে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন।
এফআইআরে মনজুর আরও অভিযোগ করেন, ‘হামলাকারীরা শেরুকে মারধর করেন এবং তাঁর কাছে থাকা ৩৬ হাজার রুপি ছিনিয়ে নেয়। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে কুনাল নামের একজন শেরুর ফোন থেকে আমার কাছে কল করেন। ওই ব্যক্তি বলেন, শেরুকে জীবিত দেখতে এবং পুলিশের ঝামেলা এড়াতে চাইলে ৫০ হাজার রুপি নিয়ে আসতে হবে। নতুবা কাউকে দিয়ে ওই অর্থ পাঠাতে হবে।’
একপর্যায়ে শেরুর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। সকালে তাঁর পরিবার শেরু ও ট্রাকটির সন্ধান করেও খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। মনজুর বলেন, ‘বেলা তিনটার দিকে বানেরা থানা থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয়, ভিলওয়াড়া হাসপাতালে শেরু ভর্তি। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই তাঁকে আবার জয়পুরে স্থানান্তর করা হয়।’
চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর গত শুক্রবার শেরু মারা যান। ভিলওয়াড়ার সরকারি হাসপাতাল থেকে জয়পুরের এসএমএস হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে শেরুকে স্থানান্তরের জন্য দেওয়া ছাড়পত্রে ‘মাথায় আঘাত’-এর কথা উল্লেখ করা ছিল।
শেরুর পরিবারে তাঁর স্ত্রী নাসিম এবং দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তাঁর এক আত্মীয় ফারুক বলেন, ‘পুলিশ যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেছে জানিয়েছে, তাঁরা আসল অপরাধী কি না, তা আমরা নিশ্চিত নই। আমরা সব অপরাধীর গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা তাঁর শিশু সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাই। তার ওপর নির্ভরশীল দুটি বোনও রয়েছে।’
ভিলওয়াড়া পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। গরু পাচারের অভিযোগে আরেকটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। দুটি মামলারই তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে জানতে পুলিশ সুপার (এসপি) ধর্মেন্দ্র সিংয়ের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুরান ঢাকায় মামুন হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার হননি ‘নির্দেশদাতা’ রনি
রাজধানীর পুরান ঢাকায় আদালত এলাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাঈদ মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শনিবার সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন তাঁর স্ত্রী বিলকিস আক্তার। তবে মামলায় আসামি হিসেবে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি। অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে নাম আসা রনি ওরফে ভাগনে রনি এখনো গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের ভাষ্য, রনির নির্দেশে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মামুনকে গুলি করে হত্যা করেন ফারুক ও রবিন।
আরও পড়ুনঅপরাধজগতের দ্বন্দ্বে মামুন খুন, দুই লাখ টাকার বিনিময়ে গুলি করেন দুজন: পুলিশ১২ নভেম্বর ২০২৫ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামুন হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পরদিনই ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক হোসেন ফয়সাল (৩৮), রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস (২৫), মো. রুবেল (৩৪), শামীম আহম্মেদ (২২) ও মো. ইউসুফ জীবন (৪২)। তাঁদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্র আইনে মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলায় তাঁরা এখন ডিবি পুলিশের চার দিনের রিমান্ডে আছেন। তাঁদের মধ্যে ফারুক ও রবিন ১০টি গুলি চালিয়ে মামুনকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আরও পড়ুনমামুন হত্যার পেছনে কি অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নাম আসছে যে কারণে১০ নভেম্বর ২০২৫গত সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ফটকের বিপরীতে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় মামুনকে। আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার সময় খুব কাছ থেকে দুই ব্যক্তি তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও শুটাররা পেছন থেকে গুলি ছোড়েন।
পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। মামুনকে হত্যার জন্য চুক্তি হয়েছিল মাত্র দুই লাখ টাকার।
আরও পড়ুনশীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যায় ‘দুই শুটার’সহ ৫ জন আটক১১ নভেম্বর ২০২৫