গতবারের তুলনায় এ বছর মানিকগঞ্জের ৪৩টি বেশি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজক কমিটি। জেলার সাত উপজেলায় মোট ৫৫৩টি মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য।

প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, র‌্যাবের টহল টিম নিয়মিতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় নজরদারি চালাবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভ্রাম্যমান আদালতের টিমও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে। 

আরো পড়ুন:

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ

সরেজমিন দেখা গেছে, মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মাটি শুকানোর পর প্রতিমার অঙ্গে দেওয়া হচ্ছে রঙের আঁচড়। কোনো কোনো মণ্ডপে কাজ শেষ হওয়ায় শাড়ি ও অলংকার পড়ানো হয়েছে প্রতিমাকে।

সদর উপজেলার শিববাড়ি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোপাল দেবনাথ বলেন, “এ জেলার মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।” 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ কুমার পাল বলেন, “এ বছর মানিকগঞ্জে ৫৫৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে মানিকগঞ্জ সদরে ৮৬টি, মানিকগঞ্জ পৌরসভায় ৩১টি, সাটুরিয়ায় ৭৯টি, সিংগাইর উপজেলায় ৬৩টি, সিংগাইর পৌরসভায় ১৪টি, হরিরামপুরে ৬৫টি, ঘিওরে ৮২টি, দৌলতপুরে ৪৬টি এবং শিবালয়ে ৮৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হতে যাচ্ছে।”

জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, “দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে মতবিনিময়  হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এবারো উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজামণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।”

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি পূজামণ্ডপে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন রাতে মোবাইল টহল ও হঠাৎ চেকিং চালানো হবে।”

জেলা পুলিশ সুপার মোছা.

ইয়াছমিন খাতুন জানান, “পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বসে মণ্ডপে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার, উচ্চস্বরে গান বাজনা পরিহারসহ নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ৭০০ সদস্য মাঠে নিয়োজিত থাকবেন।” 

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।

তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’

ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।

ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছে

এ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।

এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।

এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।

‘নো কিংস’

ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ