পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইন গ্রামে আছে ‘খানবাড়ি’। বাড়িটি এখন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘বকের বাড়ি’ নামে। কারণ, টানা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাড়ির আঙিনা ও গাছগাছালিতে বাস করছে হাজারো সাদা বক। শুধু বকই নয়, কয়েক বছর ধরে তাদের সঙ্গে এসেছে পানকৌড়িও। এ দুই প্রজাতির পাখি প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে এখানে দল বেঁধে আসে, বাসা বানায়, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়—সব মিলিয়ে বাড়িটি এখন তাদের অভয়ারণ্য।

গাছের ডালে শত শত বাসা

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, খানবাড়ির রেইনট্রি, গাব ও আমগাছের ডালে শত শত বাসা। সাদা বকগুলোকে ছোট ছোট ডাল সংগ্রহ করে বাসা বানাতে দেখা গেল। কোনো কোনো বাসায় ডিমে তা দিচ্ছে মা-পাখি, আবার কোথাও সদ্য ফোটা ছানাকে খাওয়াচ্ছে মা–পাখি। গাছের ডালে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা ধবধবে সাদা বক আর কালো পানকৌড়ির দৃশ্য পথচারীদের চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে।

আরও পড়ুনবিরল প্রজাতির ছোট পাখির সন্ধান২০ অক্টোবর ২০২৪

খানবাড়ির বাসিন্দা মাওলানা মো.

বশির উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বক পাখি বাস করছে। পাঁচ-সাত বছর আগে পানকৌড়িও যোগ দেয়। আমরা কখনো তাদের বিরক্ত করি না। পাখিরা নিরাপদে আছে বলেই প্রতিবছর ফিরে আসে।’

আরেক বাসিন্দা রাশেদ আজমি বলেন, তাঁর জন্মেরও আগে থেকে পাখিদের বসবাস চলছে। টিনের ছাউনি নষ্ট হওয়ায় ঘরসংলগ্ন কিছু গাছ কাটতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। ফলে পাখির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তাঁর দাদা আবদুল মজিদ খান তাঁদের পাখির সুরক্ষার বিষয়টি শিখিয়েছিলেন। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, প্রতিবছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বক ও পানকৌড়ি বাসা বাঁধে। প্রথম দফায় ডিম ফোটার পর ছানারা উড়তে শেখে। পরে শ্রাবণে আবার নতুন বাসা তৈরি হয় এবং দ্বিতীয় দফায় বাচ্চা ফোটে। আশ্বিন-কার্তিক নাগাদ সব পাখি একসঙ্গে চলে যায়। তবে প্রথম দফার বড় হয়ে ওঠা ছানারা তখনো থেকে যায়।

খানবাড়ির রেইনট্রি, গাব ও আমগাছের ডালে শত শত বাসা। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইন গ্রামে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ নব ড় ত বছর

এছাড়াও পড়ুন:

একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ বলকে স্থান–কালের বক্রতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিল। এর মাধ্যমে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায়। যখনই আপনি একটি কাপ ফেলে দেন বা নদীতে জোয়ার আসতে দেখেন, তখনই মহাকর্ষের প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার আপনার ওজন মাটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অনুভব করার বিষয়টি মহাকর্ষের অভিজ্ঞতা বলা যায়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন বলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলেও মহাকর্ষ বলকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা হয়। এই বল আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথে ধরে রাখে। বলা যায়, মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সির ভাগ্য নির্ধারণ করে এই বল।

প্রকৌশলীরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কক্ষপথের অবস্থান মঙ্গলে মিশন পরিকল্পনার সময় মহাকর্ষ বলের ওপর নির্ভর করেন। মাটির নিচের পানির ভান্ডার বা হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া শনাক্ত করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে মহাকর্ষ বলের তথ্য। অনেক আগে এই মহাকর্ষ বল সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। আইজ্যাক নিউটন বিজ্ঞানের অন্যতম গভীর এই বল সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত ধারণা প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম প্রশ্ন করেন, কোন বলের কারণে গাছের আপেল মাটিতে পড়ে? কোন শক্তির জোরে চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে অবস্থান করছে?

বিজ্ঞানী নিউটন ও আপেলগাছ নিয়ে বেশ জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। ১৬৬৬ সালের দিকে নিউটন লিংকনশায়ারে তাঁর পারিবারিক বাড়ির বাগানে অবস্থানের সময় স্বাভাবিক এক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি আপেলকে গাছ থেকে পড়তে দেখেন তিনি। সেই ঘটনা নিউটনকে নতুন ভাবনার সুযোগ করে দেয়। তিনি ভাবতে থাকেন, একটি আপেল যদি মাটিতে পড়ে তাহলে চাঁদও কি পড়ে যাচ্ছে? সেই চিন্তা থেকেই মহাকর্ষ বলের সর্বজনীন সূত্র আবিষ্কার করেন নিউটন। তাঁর ভাষ্যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অন্য প্রতিটি বস্তুকে এমন একটি বল দিয়ে আকর্ষণ করে যা তাদের ভরের সমানুপাতিক ও তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। বিজ্ঞানী নিউটন পৃথিবী ও মহাবিশ্বের গতি ব্যাখ্যা করেন এই সূত্রের মাধ্যমে।

আরও পড়ুনপৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বলে প্রমাণিত হয় যে ছবির কারণে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা দেন। তিনি যুক্তি দেন যে মহাকর্ষ বস্তুকে একসঙ্গে টেনে আনা কোনো বল নয়, বরং ভর ও শক্তি দ্বারা স্থান–কালের নিজস্ব বাঁক বা বক্রতা। বিভিন্ন গ্রহ চলছে মহাজাগতিক কাঠামোর বক্রতা অনুসরণ করে। এটি বোঝার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে স্থান–কালকে একটি টান টান কাপড়ের মতো কল্পনা করা। এর ওপর একটি ভারী টেনিস বল রাখলে কাপড়টি কিছুটা দেবে যায়। তখন কাছাকাছি থাকা সব ছোট বস্তুকে সেই দেবে যাওয়া অবস্থানের দিকে নেমে যাবে। ঠিক একইভাবে তারা ও গ্রহের মতো বিশাল বস্তুকে স্থান–কাল বাঁকিয়ে দেয়। এতে চারপাশের সবকিছু চলতে থাকে।

রহস্যময় মহাকর্ষ বল বেশ দুর্বলতম বল। এই বল সব পদার্থের ওপর, সব রকম দূরত্বজুড়ে কাজ করে। কখনোই বন্ধ হয় না। মহাজগৎকে শাসন করলেও মহাকর্ষ বল প্রকৃতির অন্যান্য বলের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল। একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রনের মধ্যেকার তড়িৎচৌম্বকীয় আকর্ষণ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৬ গুণ শক্তিশালী। এ কারণেই পরমাণু, অণু ও তাদের রসায়ন তড়িৎচৌম্বকত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুনমহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা১৩ জুলাই ২০২৫

নিউটনের সেই আপেলবাগান থেকে পাওয়া প্রশ্ন ও আইনস্টাইনের বক্র স্থান–কাল ধারণার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। মহাকর্ষ বল দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চরম মহাজাগতিক ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু শাসন করে। এই বল গ্রহকে আকার দেয়। ধূমকেতুকে পরিচালনা করে। বিভিন্ন গ্যালাক্সিকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। মহাজগতের সবচেয়ে ঘন কোণে এই বল নিউট্রন তারা ও ব্ল্যাকহোলের মতো বহিরাগত বস্তু তৈরি করে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনেক আগেই এসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান প্রসব প্রসূতির
  • একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন রেশমা
  • বিশ্বব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বাকি পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে
  • একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা
  • ব্যস্ত দম্পতিদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘মাইক্রো-ডেটিং’