দুর্নীতির অভিযোগে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ৩ কর্মচারী আটক
Published: 25th, September 2025 GMT
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে সেনাবাহিনী।
আটক ব্যক্তিরা হলেন হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডাটা এন্ট্রি অ্যান্ড কন্ট্রোল অপারেটর লতিফা বেগম, কর্মচারী উসমান গনি ও উমেশ পাল।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পাসপোর্ট–সংক্রান্ত কাজ করতে হলে টাকা দিতে হয়, এ ছাড়া ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সম্প্রতি ওই কার্যালয়ে দুই বার অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। তখন অনিয়মের বিষয়ে কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সতর্ক করা হয়। সর্বশেষ গতকাল দুপুরে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর একটি দল। এ সময় লোকজন নানা ভোগান্তি তুলে ধরেন। অভিযান চলাকালে লতিফা বেগম কার্যালয়ের একটি কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে বসে ছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চলে।
রাতেই আটক তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইকুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সাজার বিধান নেই। তাই তিনি হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন। পরে আটকদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে আইনি জটিলতার কারণে জেলা পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন শাহীন বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলার এখতিয়ার পুলিশের নেই; এ বিষয়ে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয় অফিসের সহকারী পরিচালক এরশাদ মিয়া বলেন, সেনাবাহিনী কোন আইন বা অপরাধে সরকারি কর্মচারীদের আটক করেছেন সে বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দুর্নীতির তথ্য–প্রমাণ পেয়ে সেনাবাহিনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায় এবং তিনজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন ও ট্যাগিংয়ের অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ট্যাগিং, পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়নসহ বিভিন্নভাবে মানসিক হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুল হালিম রানা ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
জকসু: সর্বকনিষ্ঠদের ‘তরুণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের মনোনয়ন সংগ্রহ
আ.লীগের পক্ষে পোস্ট দেওয়ায় ফের ইবি শিক্ষার্থীকে থানায় সোর্পদ
রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এসব অভিযোগ সম্বলিত লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে এমন ঘটনার ভুক্তভোগী আরো আট শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের কথা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, শুধু তিনি নন, একই ব্যাচ ও অন্যান্য ব্যাচের আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকের পক্ষপাতমূলক আচরণ, অপমানজনক বক্তব্য, এবং একাডেমিক অবিচারের শিকার হয়ে আসছেন।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দিয়ে থাকেন। একই ভুল থাকা সত্ত্বেও অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালেও বিশেষ কিছু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তিনি অন্যায়ভাবে নম্বর কেটে দেন। এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়ন না করে পূর্বের টিউটোরিয়ালে পাওয়া নম্বর পরবর্তী টিউটোরিয়ালে বসিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাখ্যা চাইলে তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেননি। উল্টো শিক্ষার্থীদের অপমান করেন।
তার অন্যায় আচরণের ভুক্তভোগী আরো কয়েক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সহযোগী অধ্যাপক হালিম রানা নিয়মিতভাবে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড বা পোশাক-পরিচ্ছদের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’, ‘জঙ্গি’ বা রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করে অপমান করেন। ভর্তি হওয়ার সময়ও তিনি বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। তাদের বাবা-মায়ের পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার আচরণ এতটাই অসম্মানজনক ছিল যে, ভুক্তভোগীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় বদলানোর কথাও ভেবেছেন।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হালিম রানার আচরণের কারণে কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর মানসিক চাপের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন।
বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দাবি, তার বহিষ্কারের জন্য সহযোগী অধ্যাপক রানা প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু তা প্রমাণিত হয়নি।
আরেকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, খাতায় সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন করলেও শিক্ষক পরবর্তীতে নিজের দেওয়া লেকচারের তথ্য অস্বীকার করে তার নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন।
শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, বিভাগীয় কার্যক্রমেও হালিম রানার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, ক্লাস প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠে এসেছে অভিযোগপত্রে।
শিক্ষক হিসেবে তিনি পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, সহযোগী অধ্যাপক হালিম রানার কর্মকাণ্ডে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছেন এবং খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে মানসিক হয়রানি এবং রাজনৈতিকভাবে ট্যাগিং করছেন। এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা বলেন, “এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। আমি খাতা দিয়েছি, কিন্তু অফিশিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নম্বর জমা দেইনি। আর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে ট্যাগিং করিনি। আটজন স্টেটমেন্ট দিয়েছে, কিন্তু আমার শিক্ষার্থী ৮০ জন। বাকিরা কেন দেয়নি?”
অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “একটি অভিযোগ এসেছে। এটা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী