অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে মনে করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি—এই দুটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছে।

একই সঙ্গে জিইডির পূর্বাভাস, সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে ভবিষ্যতে চালের দাম কমতে পারে। সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে জিইডি।

প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, টানা অস্থিরতার পর আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর যা সর্বনিম্ন।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ছিল দুই অঙ্কের ঘরে, অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জিইডি।

খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি টানা ৩ মাস ধরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে স্থিতিশীল আছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যা ছিল ১৪ শতাংশ, সেই তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে বলেই মনে করছে জিইডি।

সামষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশের অর্থনীতির যে পরিস্থিতি, তাতে বহিঃ খাতে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশি বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণ ও উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।

চালের ভূমিকা

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির হিসাবে, আগস্টের মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ফলে চালের দাম বেশি থাকলে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের প্রভাব অতটা টের পাওয়া যায় না। যদিও জিইডি মনে করছে, সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপর কারণে চালের দাম কমবে। সরকারের সেই পদক্ষেপগুলো হলো ১৭ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহ, শুল্কমুক্তভাবে ৫ লাখ টন আমদানি ও সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আওতায় সরবরাহ বাড়ানো।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে চালের সরবরাহ ভালো থাকলেও দাম কমছে না। এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে অনেক দিন ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সম্প্রতি কমলেও তা এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দারিদ্র্য। এই বাস্তবতায় দরিদ্র মানুষের শাক সবজি ও আমিষ খাওয়ার ক্ষমতা কমেছে। এর পরিণতি হলো, চাল, বিশেষ করে মোটা চালের ওপর নির্ভরশীলতা অব্যাহত থাকা, বা ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে যাওয়া।

এই পরিস্থিতিতে গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বাজারে আমন চাল আসা পর্যন্ত চালের দাম তেমন একটা কমবে, সেই সম্ভাবনা কম। তাঁর মত, মূল্যস্ফীতি কমলে মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকা বাড়বে এবং তখন চালের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। সেই পরিস্থিতিতে চালের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু থাকলে চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব কম পড়ে বলে তিনি মত দেন।

বহিঃ খাত

প্রতিবেদনে অর্থনীতির বহিঃ খাতের শক্তিশালী অবস্থানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে তা দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলার।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশি মুদ্রার বিনিময় হার ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে—২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার; ২০২৫ সালের আগস্টে যা দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। জিইডির মতে, এই পরিস্থিতিতে সরকার বাণিজ্যজনিত ধাক্কা ও ঋণ দায় মেটানোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানে আছে।

ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে

বহিঃ খাতের অবস্থান ভালো হলেও পাশাপাশি দেশি আর্থিক খাতে ঋণের চাহিদা কমছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমছে। ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ; এক বছর আগে যা ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ঋণের মধ্যে বড় ব্যবধান আছে।

জিইডি বলছে, আর্থিক চিত্রের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। চলতি বছরের জুনে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে কম বা ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে। এই পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম। বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের মোটেও ইচ্ছুক নয়। উচ্চ সুদের হার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা—এসব নানা কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এর বিপরীতে দেখা যায়, জুনে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, এক বছর আগে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মূলত সরকারের ব্যয় নির্বাহের চাপ ও রাজস্ব আহরণের ঘাটতির এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতার কারণে কার্যত বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে বলে মনে করছে জিইডি। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগের জায়গা কমে গেছে।

মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে বেশ কয়েকবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। মূলত ঋণ নেওয়া নিরুৎসাহিত করে সমাজে চাহিদা কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু জিইডি মনে করছে, এর জন্য বড় মূল্য দিতে হয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির মিশ্র ফল দেখা গেছে। সেটা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর আর্থিক নীতির কারণে একদিকে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠিত হয়েছে, অন্যদিকে এর বড় মূল্য দিতে হয়েছে বেসরকারি খাতকে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ঐতিহাসিক নিম্নগতি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও কর্মসংস্থানের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ বলে তারা মনে করছে।

আমানতে ধীরগতি

২০২৬ অর্থবছরের শুরুর দিকে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনের শেষে আমানতের বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এক বছর আগে একই সময়ে যা ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। যদিও ২০২৫ সালের মার্চে প্রবাসী আয়প্রবাহ শক্তিশালী হওয়া এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ফলে সাময়িকভাবে আমানতে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল, সেই গতি জুলাই ও আগস্টে পুরোপুরি বজায় থাকেনি বলে মনে করে জিইডি।

অর্থনীতির বহিঃ খাতে স্থিতিশীলতা দেখে বোঝা গেলেও অভ্যন্তরীণ খাতে ঝুঁকি রয়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ও রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং এডিপি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মধ্য মেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৫ স ল র জ চ ল র দ ম কম এই পর স থ ত প রব দ ধ র ই পর স থ ত র প রব দ ধ সরক র র ব সরক র পদক ষ প এক বছর আগস ট দশম ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধে ৬৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, ১ লাখ ৬৮ হাজার জন আহত এবং কয়েক হাজার শিশু অনাহারে মারা গেছে। সর্বশেষ গাজা সিটি দখল করতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলে।

এই নির্মম চক্র ‘ভাঙতে’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিও পোস্ট করে গাজাকে মার্কিন দখলে নিয়ে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর স্বপ্নের কথাও জানান দিয়েছিলেন তিনি।

নতুন করে আবারও তিনি ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। যেখানে হামাসকে উচ্ছেদ করে ‘টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠনের কথা রয়েছে। সেই কমিটিকে তদারক করার জন্য একটি ‘শান্তি পরিষদ’ গঠন করা হবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। তবে চেয়ারম্যান প্রধান থাকবেন ট্রাম্প নিজেই।

সোমবার হোয়াইট হাউস এই পরিকল্পনা প্রকাশের আগে চলমান জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি নেতানিয়াহুর সম্মতি গ্রহণ করেন এবং হামাসকে হুমকি দিয়েছেন, ‘মেনে নাও, নইলে যুদ্ধ চলবে।’

কিন্তু এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কি শান্তি আনবে, নাকি ফিলিস্তিনিদের জন্য এটা হবে একটা নতুন শৃঙ্খল? ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বিশ্লেষক ওমর বদ্দার এই পরিকল্পনাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘পয়জন পিল’ বলে। তিনি আল–জাজিরাকে বলেছেন, কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও এর মূল উপাদান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। গাজার বাসিন্দা ইবরাহিম জুদেহ বলেন, ‘এটি অবাস্তব—যুদ্ধ চলবে।’

বিষাক্ত স্বপ্নের সূচনা যেভাবে হয়

ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনা মূলত তার ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর ‘গাজা রিভিয়েরা’ প্রস্তাবেরই ছায়া। সে সময় তার ‘গাজা রিকনস্ট্রাকশন, ইকোনমিক অ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট (GREAT) প্রকল্পে গাজাকে দুবাই-স্টাইলের রিসোর্টে রূপান্তরের কল্পনা করা হয়, যেখানে থাকবে স্কাইস্ক্র্যাপার, কৃত্রিম দ্বীপ, ‘ট্রাম্প রিভিয়েরা’ এবং ‘ইলন মাস্ক স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জোন’।

৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে ৯ হাজার ডলারের ‘রিলোকেশন প্যাকেজ’ দিয়ে ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে সরানোর পরিকল্পনা ছিল। পরে আরব রাষ্ট্রনেতারা ও জাতিসংঘ এটিকে ‘পাগলামি’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। এমনটি ইসরায়েলে জনপ্রিয় দৈনিক হারেৎজ ‘ট্রাম্পিয়ান গেট-রিচ-কুইক স্কিম’ বলে উপহাস করে।

পরে প্রকাশ পায় যে, এই প্রস্তাবের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তদন্তে উঠে আসে, ব্লেয়ারের ‘টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ’ (টিবিআই) ইসরায়েলি ব্যবসায়ী ও বিসিজির সঙ্গে মিলে ‘গাজা ইকোনমিক ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করে এবং ইসরায়েল পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নিরাপত্তা প্রধান সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ফিল রিলে সে সময় ব্লেয়ারের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করে প্রজেক্ট পিচ করেন।

সেই ‘রিভিয়েরা’র ছায়াই ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনায় ফিরে এসেছে। ধারণা করা হয়, সে কারণেই বর্তমান পরিকল্পনায় ব্লেয়ার ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’র পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ২১ ঘণ্টা আগেব্লেয়ারের বিতর্কিত ভূমিকা

পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে গাজার শাসন একটি ‘অস্থায়ী টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’, যা ‘শান্তি পরিষদ’–এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। কিন্তু কমিটির সদস্য কে নির্বাচন করবে? প্রক্রিয়া কী? এর কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। ব্লেয়ারকে বলা হয় ২০০৩-এর ইরাক যুদ্ধের ‘স্থপতি’। চিলকট রিপোর্ট প্রমাণ করে, ব্লেয়ার শান্তিপূর্ণ বিকল্প চূড়ান্ত না করে যুদ্ধে যান, যা লাখ লাখ জীবন ধ্বংস করেছে।

ওমর বদ্দার বলেন, ‘ব্লেয়ার ও ট্রাম্পের রেকর্ড অপরাধমূলক। ব্লেয়ার ইরাক আক্রমণের মিথ্যার অজুহাতের নায়ক ছিলেন; আর ট্রাম্প হলো পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি স্থাপন, গোলান মালভূমি দখল, জেরুজালেম ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সমর্থক।’

জাতিসংঘের আবাসন বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণান রাজাগোপাল আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’ মাধ্যমে স্থায়ী বাফার জোন তৈরি গাজার ভূমি দখলের একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টামাত্র।’ অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ বলেছেন, ‘ব্লেয়ার গাজায় কেন, তার তো ইরাক যুদ্ধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় থাকা উচিত।’ লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের মতে, ‘ব্লেয়ার মধ্যপ্রাচ্যে থাকা উচিত নয়—তার ইরাক সিদ্ধান্ত হাজার হাজার জীবন কেড়েছে।’

২০০২ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে, বিশেষ করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে ‘কোয়ার্টেট অন দ্য মিডল ইস্ট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ গঠিত হয়েছিল। ব্লেয়ার ছিল এই গ্রুপের প্রতিনিধি। ব্লেয়ারের দায়িত্ব ছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়তা, অর্থনৈতিক প্রকল্প তত্ত্বাবধান এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনায় সহযোগিতা করা। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, তিনি তখন অবৈধ ইসরায়েলি বসতি রোধ করতে কোনো ভূমিকা রাখেননি, বরং ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন। এমনকি ২০১৪ সালে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালালেও ব্লেয়ার নীরব থাকেন।

হামাসকে নিরস্ত্র করা নাকি স্থায়ী দখলের চেষ্টা

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস অস্ত্র ছাড়লে ইসরায়েল ‘মান, অগ্রগতি ও সময়সীমা’ বিবেচনা করে সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু কোনো টাইমলাইন নেই। গাজা ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল একটা ‘নিরাপত্তাবেষ্টনী’ দিয়ে রাখবে। কিন্তু কে ঠিক করবে যে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ হয়েছে কি না?

ওমর বদ্দার বলেন, ‘ইসরায়েল অনির্দিষ্টকাল দখল চালাবে, প্রত্যাহারের কোনো গ্যারান্টি নেই। ফিলিস্তিনিরা বন্দি জীবন যাপন করবে।’ ফিলিস বেনিস বলেন, ‘কোনো নিশ্চয়তা নেই যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরায়েল জিম্মি ফিরিয়ে নিয়ে বলতে পারে, ‘সহযোগিতা পাচ্ছি না, যুদ্ধে ফিরব।’ হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, তৃতীয় ধাপে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ ধরে রাখবে।

একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী’ (আইএসএফ) নিরাপত্তা দেখবে। কিন্তু কোন দেশ? ম্যান্ডেট কী? ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো হাজার হাজার শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, আবার তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে শিগগিরই ইসরায়েলকে ইন্দোনেশিয়া ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন।

তা ছাড়া এই বাহিনীকে কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেওয়া হবে? সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিনকাস বলেন, ‘এটি একটি সিমুলেশন গেম—জটিল, বিতর্কিত। নেতানিয়াহু চুক্তি ব্যর্থ করতে সময় কিনবেন। হামাস ৭২ ঘণ্টায় বন্দী মুক্তি দেবে না।’

হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (৩ অক্টোবর ২০২৫)
  • সীমান্ত ব্যাংকে চাকরি, আবেদন অনলাইনে
  • পাঠকের ছবি (২ অক্টোবর ২০২৫)
  • দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২ অক্টোবর ২০২৫)
  • এভারকেয়ার হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ পালন
  • অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
  • একাদশে বিশেষ কোটায় ভর্তির সুযোগ পেলেন ৬০ শিক্ষার্থী
  • বেসরকারি ব্যাংক টেলার পদে নিয়োগ, স্নাতক পাসে আবেদন
  • গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’