‘একজন প্রকৃত আরব মাছি ধরতে ওস্তাদ’
Published: 25th, September 2025 GMT
নাওমি শিহাব নাই (জন্ম: ১২ মার্চ ১৯৫২) সমকালীন আমেরিকান কবিতার উল্লেখযোগ্য নাম। একই সঙ্গে নাওমি শিশুদের জন্য সাহিত্য রচনা করেন এবং কবিতার বই সম্পাদনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। পিতা ফিলিস্তিনের আর মা আমেরিকার। পিতার সূত্রে জীবনের একটি অংশ তিনি জেরুজালেমে কাটিয়েছেন। আর মায়ের সূত্রে কাটিয়েছেন টেক্সাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি থিতু হয়েছেন আমেরিকায়।
নাওমির কবিতার বৈশিষ্ট্য তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। পিতা-মাতার সূত্রে নির্বাসন ও অভিবাসন—এই দুই বিষয় নাওমির জীবনের ক্রূর বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় শুরু থেকেই তিনি দুই ভিন্ন সংস্কৃতির ভেতর বড় হয়েছেন। এ কারণে দুই দিক থেকে প্রাপ্ত জীবনবাস্তবতা, বহুসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতা নির্মিত বোধ, নির্বাসন আর অভিবাসনের বেদনা এবং মানবতার এক সর্বজনীন অভিব্যক্তি তাঁর কবিতায় লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া প্রাণী ও মানুষের বৈশিষ্ট্য এবং সম্পর্ক—এই দুইয়ের সমন্বয়ের বাস্তবতা কেমন হতে পারে, সে বিষয় নিয়েও নাওমি কবিতা লিখেছেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়াদিও তাঁর কবিতার বিষয় হয়েছে। নাওমি এই সব বিষয় তাঁর কবিতায় সম্পৃক্ত করেছেন অত্যন্ত সরল ভাষায়। তিনি মনে করেন, কবিতা কোনো জটিল শব্দের সমারোহ হতে পারে না। বরং আমাদের চারপাশের ঘটনা ও শব্দের মধ্যেই কবিতা লুকিয়ে থাকে। নাওমি তাঁর এই বক্তব্যকে নিজের কবিতায়ও বাস্তব করেছেন।
ফিলিস্তিন থেকে কম বয়সেই নাওমিকে অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় যেতে হয়েছে, ঘটে গেছে শেকড়চ্যুতি। আজীবন শেকড়চ্যুতির অভিজ্ঞতা তিনি ধারণ করে গেছেন তাঁর কবিতায়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন সময় সেখানে ঘটে যাওয়া ইসরায়েলের নানা দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। কিন্তু প্রতিবাদী উচ্চারণ সত্ত্বেও তাঁর কোনো কবিতায় ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়াননি। বরং একটি ভিন্ন আবেগ ও আমেজের ভেতর দিয়ে তা সংহতির বার্তা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
‘রক্ত’ কবিতাটি নাওমির ‘ওয়ার্ডস আন্ডার দ্য ওয়ার্ডস’ (১৯৯৫) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। কবিতাটি ফিলিস্তিনে প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে রচিত।
রক্ত‘একজন প্রকৃত আরব মাছি ধরতে ওস্তাদ’,
আমার আব্বা এ কথা বলতেন। আর অবিলম্বে তা করে দেখাতেন,
গুঞ্জনরত মাছিকে হাতের মুঠোয় ধরে ফেলতেন,
তখন সোয়াটার১ হাতে গৃহকর্তা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকত।
বসন্তে আমাদের করতল সাপের মতো খোসা ছাড়াত।
প্রকৃত আরব বিশ্বাস করে, তরমুজ পঞ্চাশটি রোগের দাওয়াই।
কিন্তু আমি সেসব বিশ্বাস অবস্থা অনুযায়ী ঘুরিয়েফিরিয়ে বর্ণনা করতাম।
বহু বছর আগে, এক মেয়ে দরজায় কড়া নাড়ল।
সে আদতে দেখতে চেয়েছিল কোনো আরবকে।
আমি বলেছিলাম, আমাদের ঘরে কেউ নেই।
তারপর, বাবা বললেন, কে তিনি—
‘শিহাব’—‘ঝলসানো তারা’—
একটি ভালো নাম, যা আকাশ থেকে ধার করা।
একদা আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমরা যখন মরে যাই, নামটা কি ফিরিয়ে দিই?’
তিনি উত্তরে বললেন, এটাই একজন খাঁটি আরবের কথা।
আজ সংবাদপত্রের শিরোনামে আমার রক্ত হিম হয়ে গেছে।
প্রথম পাতার ছবিতে এক ফিলিস্তিন শিশুর হাতে খেলনা গাড়ি ঝোলানো।
যেন গৃহহীন ডুমুরের মতো, এই ট্র্যাজেডির শিকড় ভয়ংকর,
আমাদের জন্য অসম্ভব ভারবাহী। আমরা তাহলে কেমন পতাকা ওড়াব?
আমি ওড়াই পাথর আর বীজের পতাকা,
নীল সুতোয় সেলাই করা একখানা টেবিলম্যাট।
আমি আব্বাকে ফোন করি। আমরা খবরটা ঘিরে কথা বলি।
তার পক্ষে এটি সহ্য করা খুব কঠিন,
এমনকি তাঁর দুই ভাষার কোনোটিই এই বেদনাকে ছুঁতে পারে না।
আমি গাড়ি চালিয়ে গ্রামমুখী হই, ভেড়া-গরু খুঁজি,
আকাশের কাছে প্রার্থনা করি।
কাকেই বা সভ্য বলা যায়?
ক্রন্দনরত হৃদয় কোথায় একটু শান্তি পায়?
একজন প্রকৃত আরব এখন কী করবে?
১.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স তবত আম দ র আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে