অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান
Published: 26th, September 2025 GMT
‘সাইবার সচেতন হোন, নিরাপদ থাকুন' প্রতিপাদ্য নিয়ে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর ২০২৫ ঘোষণা করা হয়।
আরো পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে সাময়িক অব্যাহতি
দিনে শিক্ষার্থী, সন্ধ্যায় দোকানী রুবেল
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর ২০২৫ উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা অনুষ্ঠানে সাইবার সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রোকৌশলী মো.
তিনি বলেন, “দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন কলসহ ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তরের তথ্য পেয়েছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। গত ২৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে এনটিএমসি জানিয়েছে, ২১টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, ৪৮টি টেলিগ্রাম এবং ৭২০টি ফেসবুক গ্রুপ ও পেইজ যাদের ৩২ লাখ সদস্য ও ফলোয়ার রয়েছে এমন সব গ্রুপে ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করা হয়েছে।”
প্রোকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, “পুলিশের সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) তথ্য অনুযায়ী সেখানে জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২৬ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত অভিযোগ করেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩০ জন ভুক্তভোগী। এর মধ্যে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ২৭৮৯, তার মধ্যে মামলা রেকর্ড হয়েছে ৪০টি মাত্র। অর্থাৎ অনেক ঘটনা পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে বাদ পড়ে যায়, যেখানে ভুক্তভোগীর অসচেতনতাও অন্যতম কারণ।”
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের (২০২৪) তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশের বয়সই ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্তদের প্রায় ৫৯ শতাংশই নারী। অপরাধের ধরনের মধ্যে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট বেদখলের (হ্যাকিং) শিকার হয়ে শীর্ষে রয়েছে। আর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে ‘পর্ণোগ্রাফি' অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পর্ণোগ্রাফিতে।
একইভাবে অপরাধের বহুমাত্রিকতাও যুক্ত হচ্ছে; যার প্রভাবে প্রতিবেদনে ‘অন্যান্য' ধরনের অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এই হারটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে। এক বছরে এই হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়রি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ১২.৫০ মন্তব্য করেননি। সন্তুষ্ট নন ৮৭.৫০ শতাংশ। এসব প্রতারণায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১ দশমিক ২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচে।
এই প্রেক্ষাপটে দশম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বিশ্বব্যাপী যেভাবে অক্টোবরকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস' হিসেবে পালন করা হয়, বাংলাদেশেও একই সময়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি ২০১৬ সাল থেকে আয়োজন করে আসছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স কর্তৃক এই ক্যাম্পেইনে অফিসিয়ালি যুক্ত হয়েছে আমাদের সংগঠন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর পাশাপাশি জনসচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উন্নতমানের ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন বা নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি থাকলেও সাধারণ ব্যবহারকারীরা সচেতন না হলে তা কার্যকর হয় না। পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, সফটওয়্যার আপডেট রাখা, সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক না করা-এসব মৌলিক নিয়ম মানা না হলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অক্টোবর মাসব্যাপী প্রচারণা এসব বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে পারে।
বৈশ্বিক কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর ২০২৫ এ মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন ৪টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে।
১) কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার।
২। আইডিতে বহুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার।
৩) নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করা এবং
৪) অনলাইন স্ক্যাম চিহ্নিত করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো।
মাসব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্যাম্পেইন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা/সেমিনার, কর্মশালা, অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, গণমাধ্যমে প্রচার জোরদারে অ্যাডভোকেসি, ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ এর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন সিসিএএফ এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, রবি অ্যাজিয়াটা পিএলসির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শফি উল্লাহ, ব্লাস্টের উপ-পরিচালক, ক্লায়েন্ট সাপোর্টও সালিশ তাপসী রাবেয়া, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি সহকারী পরিচালক এ এম সাকিফ ইসলাম ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম সব য প ক ত গত ব শ বব সরক র অপর ধ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধে ৬৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, ১ লাখ ৬৮ হাজার জন আহত এবং কয়েক হাজার শিশু অনাহারে মারা গেছে। সর্বশেষ গাজা সিটি দখল করতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলে।
এই নির্মম চক্র ‘ভাঙতে’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিও পোস্ট করে গাজাকে মার্কিন দখলে নিয়ে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর স্বপ্নের কথাও জানান দিয়েছিলেন তিনি।
নতুন করে আবারও তিনি ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। যেখানে হামাসকে উচ্ছেদ করে ‘টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠনের কথা রয়েছে। সেই কমিটিকে তদারক করার জন্য একটি ‘শান্তি পরিষদ’ গঠন করা হবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে। তবে চেয়ারম্যান প্রধান থাকবেন ট্রাম্প নিজেই।
সোমবার হোয়াইট হাউস এই পরিকল্পনা প্রকাশের আগে চলমান জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি নেতানিয়াহুর সম্মতি গ্রহণ করেন এবং হামাসকে হুমকি দিয়েছেন, ‘মেনে নাও, নইলে যুদ্ধ চলবে।’
কিন্তু এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কি শান্তি আনবে, নাকি ফিলিস্তিনিদের জন্য এটা হবে একটা নতুন শৃঙ্খল? ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বিশ্লেষক ওমর বদ্দার এই পরিকল্পনাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘পয়জন পিল’ বলে। তিনি আল–জাজিরাকে বলেছেন, কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও এর মূল উপাদান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। গাজার বাসিন্দা ইবরাহিম জুদেহ বলেন, ‘এটি অবাস্তব—যুদ্ধ চলবে।’
বিষাক্ত স্বপ্নের সূচনা যেভাবে হয়ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনা মূলত তার ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর ‘গাজা রিভিয়েরা’ প্রস্তাবেরই ছায়া। সে সময় তার ‘গাজা রিকনস্ট্রাকশন, ইকোনমিক অ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্ট (GREAT) প্রকল্পে গাজাকে দুবাই-স্টাইলের রিসোর্টে রূপান্তরের কল্পনা করা হয়, যেখানে থাকবে স্কাইস্ক্র্যাপার, কৃত্রিম দ্বীপ, ‘ট্রাম্প রিভিয়েরা’ এবং ‘ইলন মাস্ক স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জোন’।
৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে ৯ হাজার ডলারের ‘রিলোকেশন প্যাকেজ’ দিয়ে ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে সরানোর পরিকল্পনা ছিল। পরে আরব রাষ্ট্রনেতারা ও জাতিসংঘ এটিকে ‘পাগলামি’ বলে প্রত্যাখ্যান করে। এমনটি ইসরায়েলে জনপ্রিয় দৈনিক হারেৎজ ‘ট্রাম্পিয়ান গেট-রিচ-কুইক স্কিম’ বলে উপহাস করে।
পরে প্রকাশ পায় যে, এই প্রস্তাবের নেপথ্যে ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তদন্তে উঠে আসে, ব্লেয়ারের ‘টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ’ (টিবিআই) ইসরায়েলি ব্যবসায়ী ও বিসিজির সঙ্গে মিলে ‘গাজা ইকোনমিক ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করে এবং ইসরায়েল পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নিরাপত্তা প্রধান সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ফিল রিলে সে সময় ব্লেয়ারের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করে প্রজেক্ট পিচ করেন।
সেই ‘রিভিয়েরা’র ছায়াই ট্রাম্পের বর্তমান পরিকল্পনায় ফিরে এসেছে। ধারণা করা হয়, সে কারণেই বর্তমান পরিকল্পনায় ব্লেয়ার ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’র পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ২১ ঘণ্টা আগেব্লেয়ারের বিতর্কিত ভূমিকাপরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে গাজার শাসন একটি ‘অস্থায়ী টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি কমিটি’, যা ‘শান্তি পরিষদ’–এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। কিন্তু কমিটির সদস্য কে নির্বাচন করবে? প্রক্রিয়া কী? এর কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। ব্লেয়ারকে বলা হয় ২০০৩-এর ইরাক যুদ্ধের ‘স্থপতি’। চিলকট রিপোর্ট প্রমাণ করে, ব্লেয়ার শান্তিপূর্ণ বিকল্প চূড়ান্ত না করে যুদ্ধে যান, যা লাখ লাখ জীবন ধ্বংস করেছে।
ওমর বদ্দার বলেন, ‘ব্লেয়ার ও ট্রাম্পের রেকর্ড অপরাধমূলক। ব্লেয়ার ইরাক আক্রমণের মিথ্যার অজুহাতের নায়ক ছিলেন; আর ট্রাম্প হলো পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি স্থাপন, গোলান মালভূমি দখল, জেরুজালেম ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সমর্থক।’
জাতিসংঘের আবাসন বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণান রাজাগোপাল আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ব্লেয়ারের নেতৃত্বে ‘ট্রানজিশনাল অথরিটি’ মাধ্যমে স্থায়ী বাফার জোন তৈরি গাজার ভূমি দখলের একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টামাত্র।’ অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ বলেছেন, ‘ব্লেয়ার গাজায় কেন, তার তো ইরাক যুদ্ধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় থাকা উচিত।’ লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের মতে, ‘ব্লেয়ার মধ্যপ্রাচ্যে থাকা উচিত নয়—তার ইরাক সিদ্ধান্ত হাজার হাজার জীবন কেড়েছে।’
২০০২ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে, বিশেষ করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে ‘কোয়ার্টেট অন দ্য মিডল ইস্ট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ গঠিত হয়েছিল। ব্লেয়ার ছিল এই গ্রুপের প্রতিনিধি। ব্লেয়ারের দায়িত্ব ছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়তা, অর্থনৈতিক প্রকল্প তত্ত্বাবধান এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনায় সহযোগিতা করা। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, তিনি তখন অবৈধ ইসরায়েলি বসতি রোধ করতে কোনো ভূমিকা রাখেননি, বরং ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন। এমনকি ২০১৪ সালে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালালেও ব্লেয়ার নীরব থাকেন।
হামাসকে নিরস্ত্র করা নাকি স্থায়ী দখলের চেষ্টাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস অস্ত্র ছাড়লে ইসরায়েল ‘মান, অগ্রগতি ও সময়সীমা’ বিবেচনা করে সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু কোনো টাইমলাইন নেই। গাজা ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল একটা ‘নিরাপত্তাবেষ্টনী’ দিয়ে রাখবে। কিন্তু কে ঠিক করবে যে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ হয়েছে কি না?
ওমর বদ্দার বলেন, ‘ইসরায়েল অনির্দিষ্টকাল দখল চালাবে, প্রত্যাহারের কোনো গ্যারান্টি নেই। ফিলিস্তিনিরা বন্দি জীবন যাপন করবে।’ ফিলিস বেনিস বলেন, ‘কোনো নিশ্চয়তা নেই যুদ্ধ শেষ হবে। ইসরায়েল জিম্মি ফিরিয়ে নিয়ে বলতে পারে, ‘সহযোগিতা পাচ্ছি না, যুদ্ধে ফিরব।’ হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, তৃতীয় ধাপে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ ধরে রাখবে।
একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী’ (আইএসএফ) নিরাপত্তা দেখবে। কিন্তু কোন দেশ? ম্যান্ডেট কী? ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো হাজার হাজার শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, আবার তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে শিগগিরই ইসরায়েলকে ইন্দোনেশিয়া ‘স্বীকৃতি’ দেওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন।
তা ছাড়া এই বাহিনীকে কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেওয়া হবে? সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক অ্যালন পিনকাস বলেন, ‘এটি একটি সিমুলেশন গেম—জটিল, বিতর্কিত। নেতানিয়াহু চুক্তি ব্যর্থ করতে সময় কিনবেন। হামাস ৭২ ঘণ্টায় বন্দী মুক্তি দেবে না।’
হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প