পাকিস্তান কোন জাদুর বলে ট্রাম্পকে নিজেদের দিকে টেনে আনছে
Published: 26th, September 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল বৃহস্পতিবার যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এমন এক প্রতিশ্রুতি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, যা আগে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী দেননি।
অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব মূলত নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে। প্রথমে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারত্বের সময় এবং পরে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই’ চলাকালে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গেছে। বিশেষ করে ট্রাম্প নিজে ও মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা পাকিস্তানকে ‘বিশ্বাস করা যায় না’ এমন দেশ বলে আখ্যা দেওয়ার পর সম্পর্ক অনেকটা শীতল হয়ে পড়েছিল। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আল–কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে খুঁজে পেয়েছিল, যা দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করেছিল।
তবে চলতি মাসের শুরুতে ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানের নতুন এক প্রস্তাবের ইঙ্গিত তুলে ধরেছে। ৮ সেপ্টেম্বর সেখানে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। অনুষ্ঠানে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ চুক্তি হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ‘রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ পদার্থ’ সরবরাহ করবে পাকিস্তান। এর আগে গত জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের ‘বিশাল তেলের মজুত’ উন্নয়নে তাঁরা কাজ করবেন।
ইতিমধ্যে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানের খনি খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের এই কৌশল সফল বলেই মনে হচ্ছে। পাকিস্তানকে নিয়ে ট্রাম্পের এমন ইউ–টার্নের বিষয়টি বিশ্লেষকেরাও ভাবেননি। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফিরে আগের অবস্থান থেকে সরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করছেন। ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা’ ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি।
গত মার্চে কংগ্রেসের ভাষণে ট্রাম্প পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা’র জন্য ধন্যবাদ জানান। তাঁর সেনা কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রশংসা করেছেন।
চলতি বছরের জুনে পাকিস্তান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘাত অবসানে মধ্যস্থতা করার পর পাকিস্তান তাঁর নাম প্রস্তাব করে।
ট্রাম্প পাকিস্তানি পণ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তাদের শুল্কহার সবচেয়ে কম। বিপরীতে ভারতের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ। প্রথমবারের মতো কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে (ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির) হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দিয়েছেন ট্রাম্প। অথচ তিনি দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নন।
আর শাহবাজ শরিফ হতে যাচ্ছেন ২০১৯ সালের পর প্রথম পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে মূল চালিকা শক্তি হলো পাকিস্তানের খনিজ সম্পদ নিয়ে প্রস্তাব। ওয়াশিংটন শিল্প, প্রতিরক্ষা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য অপরিহার্য এসব খনিজের নতুন উৎস খুঁজছে। পাকিস্তান সেই সম্ভাব্য উৎস ও সরবরাহকারী দেশ হতে পারে।
সাবেক এক পাকিস্তানি জেনারেল আল–জাজিরাকে বলেছেন, এটা কেবল অর্থনৈতিক সুযোগ নয়, এটা আসলে ‘কৌশলগত করমর্দন’। ভবিষ্যতে খনিজের মূল উপাদানগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়েই এখন লড়াই চলছে। পাকিস্তানের জন্য এটা জাতীয় গর্ব। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈশ্বিক সম্পদের রাজনীতিতে দাবার একটি চাল।
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শাহবাজ শরিফ ও আসিম মুনিরের আলাপের একটি মুহূর্ত। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ওয়াশিংটন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রস ত ব র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।