মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প এ পুরস্কার পাবেন না। কারণ, তিনি বৈশ্বিক শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন, যা নোবেল কমিটি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখে।

নরওয়ের নোবেল কমিটি নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করে থাকে। আগামী ১০ অক্টোবর চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।

পাঁচ সদস্যের নরওয়ে নোবেল কমিটির এক সদস্য রয়টার্সকে বলেন, পুরস্কার পেতে ট্রাম্প যে তদবির চালাচ্ছেন, তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, পুরস্কার বাছাই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করে এবং বাইরের চাপ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখে।

বরং কমিটি পুরস্কারের জন্য এমন কোনো মানবিক সহায়তা সংস্থাকে গুরুত্ব দিতে পারে, যারা ট্রাম্পের মার্কিন সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি হওয়া প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ তালিকায় থাকতে পারে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক সংগঠন রেডক্রস, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দানকারী সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস অথবা সুদানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমসের মতো কোনো তৃণমূল সংগঠন।

পুরস্কার বিশেষজ্ঞ অ্যাসলে স্ভিন মনে করেন, ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তিনি গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে ট্রাম্পের থাকা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার চেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের উইলের ভিত্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। ওই উইলে বলা আছে, পুরস্কারটি সেই ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত, যিনি দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়াতে সবচেয়ে বেশি বা সেরা কাজ করেছেন। পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক নিনা গ্রেগারের মতে, ট্রাম্প তা করছেন না।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের উইলের ভিত্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। ওই উইলে বলা আছে, পুরস্কারটি সেই ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত, যিনি দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বেশি বা সেরা কাজ করেছেন। পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক নিনা গ্রেগারের মতে, ট্রাম্প তা করছেন না।

রয়টার্সকে নিনা গ্রেগার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন, পুরোনো বন্ধু ও মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। যখনই আমরা শান্তিপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বা সত্যিকারে শান্তি প্রচারে আগ্রহী কাউকে ভাবি, তখন আমরা ঠিক এমন আচরণ আশা করি না।’

আরও পড়ুনট্রাম্প কি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন, নিয়ম কী বলছে১১ জুলাই ২০২৫

অপ্রত্যাশিতভাবে পুরস্কার পেয়েছেন যাঁরা

অতীতে অনেকে আশ্চর্যজনকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার আট মাসের কম সময়ের মধ্যে পুরস্কার পান। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কখনো কখনো মানুষ ভয়ংকর বা কর্তৃত্ববাদী রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও পুরস্কার পেয়েছেন। এমনকি তাঁরা আগে অন্যায় বা খারাপ কাজেও জড়িত ছিলেন।

নরওয়ে নোবেল কমিটির সাবেক সদস্য হেনরিক সাইস বলেন, ‘কখনো কখনো নৃশংস কর্মকাণ্ড ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ এবং অন্যায় বা খারাপ কাজে জড়িত থাকার থাকার ইতিহাস সত্ত্বেও কাউকে কাউকে শান্তি পুরস্কার পেতে দেখা গেছে। তবে তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁরা যা করেছেন, তা ভুল ছিল। তাই সেই ভুল ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’

এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সাইস দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। ১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে যৌথভাবে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

গ্রেগার মনে করেন, ট্রাম্প যদি ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বা গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দিতে পারেন, তাহলে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভাবা যেতে পারে।

আরও পড়ুনট্রাম্প যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার চান, গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে: এমানুয়েল মাখোঁ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জোরেশোরে তদবির চলছে

অনেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে তদবির চালিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের মতো এতটা জোরালোভাবে কেউ তদবির চালাতে পারেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের অবস্থান ব্যবহার করে বারবারই দাবি করেছেন, তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এমনকি গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময়ও তিনি একই দাবি করেছেন।

তবে নরওয়ের নোবেল কমিটির উপনেতা আসলে তোয়ের মতে, এ ধরনের তদবিরের ফল সাধারণত উল্টো হয়।

তোয়ে বলেন, ‘এ ধরনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা বরং বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ, আমরা কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা করি। কোনো প্রার্থী খুব জোর দিয়ে চাপ দিলে সেটা আমাদের ভালো লাগে না।’

অতীতে অনেকে আশ্চর্যজনকভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার আট মাসের কম সময়ের মধ্যে পুরস্কার পান। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কখনো কখনো মানুষ ভয়ংকর বা কর্তৃত্ববাদী রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও পুরস্কার পেয়েছেন। এমনকি তাঁরা আগে অন্যায় বা খারাপ কাজেও জড়িত ছিলেন।

আসলে তোয়ে এখানে ঢালাওভাবে তদবিরের প্রসঙ্গ টেনেছেন, তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেননি।

তোয়ে হাসিমুখে বলেন, ‘আমরা সাধারণত একটি বন্ধ কক্ষে কাজ করি, যেখানে আমাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালানোর সুযোগ নেই। আমাদের নিজেদের মধ্যে সমঝোতা হতেই অনেক কষ্ট হয়ে যায়, তার ওপর আরও কেউ আমাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।’

তবে নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রধান জোর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস মনে করেন, নোবেল পেতে বিশ্বের রাজনীতিবিদদের তৎপরতার কোনো প্রভাব তাঁদের কাজের ওপর পড়ে না।

তাহলে কে জিতবেন শান্তি পুরস্কার

মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো তো সম্ভাব্য তালিকাতে থাকছেই। এর পাশাপাশি কমিটি জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও বিবেচনায় নিতে পারে। যেমন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বা পুরো জাতিসংঘ।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার বিষয়েও ভাবা হতে পারে। গত বছর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে গাজায়। এ ক্ষেত্রে নোবেল কমিটি সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকা সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসকে পুরস্কৃত করতে পারে।

বিভিন্ন সংঘাত থামানোর চেষ্টায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নিযুক্ত স্থানীয় মধ্যস্থতাকারীদেরও পুরস্কারের তালিকায় রাখা হতে পারে। যেমন মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের শান্তি কমিটি, ওয়েস্ট আফ্রিকা নেটওয়ার্ক ফর পিসবিল্ডিং বা দারফুরের এল্ডারস অ্যান্ড মিডিয়েশন কমিটি ইন আল ফাশার।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান করিম হাগাগ মনে করেন, ‘এগুলোর মধ্যে যেকোনো সংগঠনই পুরস্কারের যোগ্য।’

আরও পড়ুনট্রাম্পকে নোবেলের জন্য মনোনয়ন দেবেন হিলারি, যদি.

..১৬ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ল প রস ক র প য ক তর ষ ট র ন ব ল কম ট র প রস ক র প য প রস ক র র তদব র চ ক জ কর কর ছ ন র প রস আম দ র র জন য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড

সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে নরওয়ের বিপক্ষে গতকাল রোববার রাতে ইতালিকে জিততে হতো বড় ব্যবধানে। কিন্তু বড় ব্যবধানে দূরে থাক, উল্টো নরওয়ের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ইতালি। ঘরের মাঠে উড়ে গেছে ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।

এই হারের পর ইতালির এখন আর সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই। প্লে-অফের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। অন্য দিকে বাছাইপর্বে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরল নরওয়ে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিল দেশটি। এবার আর্লিং হলান্ড-আলেক্সান্দার সরলথদের হাত ধরে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করল দেশটি।

সান সিরোতে গতকাল গোলের শুরুটা অবশ্য ইতালিই করেছিল। ফ্রান্সিসকো পিও এসপোসিতোর গোলে ১১ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। এরপর ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারে ‘আজ্জুরি’রা। কিন্তু ৬৩ মিনিট থেকে দেখা মেলে অন্য এক নরওয়ের। প্রথমে গোল করে নরওয়েকে সমতায় ফেরান আন্তোনিও নুসা। এরপর এক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করেন হলান্ড। আর যোগ করা সময়ে ইতালির জালে চতুর্থবার বল জড়ান স্ট্রান্ড লারসেন।

আরও পড়ুনহলান্ড এখন মেসি–রোনালদোর পর্যায়ে০৩ নভেম্বর ২০২৫

এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে গ্রুপ ‘আই’-এর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াই। যেখানে ৮ ম্যাচের সব কটিতে জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল নরওয়ে। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে দুইয়ে।

এর ফলে ২০১৮ ও ২০২২–এর পর এখন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়েও শঙ্কায় পড়ল ইতালি। চারবারের বিশ্বকাপজয়ীদের প্লে-অফ অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখকর নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপে ওঠার লড়াইয়ে প্লে-অফে তারা সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল। চার বছর পর ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও ভেঙে যায় প্লে-অফে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলের হারে।

হলান্ডদের উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো ৩২ দেশের, রইল বাকি ১৬
  • ইতালিকে হারিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে নরওয়ে
  • টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ নভেম্বর ২০২৫)