‘বিশেষ বিবেচনায়’ হলে থাকেন শিবির সভাপতি, হয়েছেন ভিপি প্রার্থী
Published: 30th, September 2025 GMT
নিয়ম অনুযায়ী আবাসিক হলের বরাদ্দ দেওয়ার কথা ফলাফলের ভিত্তিতে। অর্থাৎ আবেদনের পর যাঁর পরীক্ষার ফল ভালো, তিনিই হলে থাকার সুযোগ পাবেন। তবে শিবির নেতার বেলায় তা মানা হয়নি। অপেক্ষাকৃত কম ফল নিয়েও আবাসিক হলে থাকছেন হল শাখার সভাপতি। ওই হল থেকে শিবির–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থীও হয়েছেন তিনি। প্রাধ্যক্ষ বলছেন, বিশেষ বিবেচনায় ওই শিক্ষার্থীকে হলে আসন দেওয়া হয়েছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে। শিবিরের ওই নেতার নাম নিয়ামত উল্লাহ। তিনি আবরার ফারাবী নামেও পরিচিত। সোহরাওয়ার্দী হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকছেন তিনি। এ ছাড়া এবার সোহরাওয়ার্দী হল সংসদ নির্বাচনে শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নিয়ামত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফল কম থাকার পরেও আবাসিক হলে তাঁর থাকার বিষয়টি নিয়ে গতকাল সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়ামত উল্লাহ ২ দশমিক ৬৫ ফল নিয়েও আবাসিক হলে আসন পেয়েছেন। অথচ ওই হলে আসন পেতে গেলে অন্ততপক্ষে ২ দশমিক ৯২ সিজিপিএ দরকার হয়। চলতি বছর ১২ আগস্ট এ ফল প্রকাশিত হয়। তবে নিয়ামত উল্লাহ আগে থেকেই হলে অবস্থান করতেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট মিলে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৮ হাজার। এসব শিক্ষার্থী থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মাত্র ১৪টি। এর মধ্যে আবাসিক সুবিধা পান ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পান না। বাধ্য হয়ে তাঁদের থাকতে হয় ক্যাম্পাসের আশপাশে অথবা ২২ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরে। এ কারণে ফলাফলের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনছিলেন ছাত্রলীগকর্মী, এখন শিবিরের হল সভাপতি২১ জুলাই ২০২৫অবশ্য, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা ও বাড়ির দূরত্ব বিবেচনায় প্রতি হলে ১০ জনকে আসন বরাদ্দ দেওয়া যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নীতিমালায় রয়েছে। তবে এ বিবেচনার ক্ষেত্রে একক আসন পাওয়ার সুযোগ নেই। অন্য কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে অর্থাৎ দ্বৈত আসনে তাঁকে থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় হলে শিক্ষার্থী একক আসন নয়, দ্বৈত আসন পেতে পারে। তবে এটি কারও বৈধ আসন নয়।’
ফল কম হওয়ার পরেও কীভাবে একক আসন নিয়ে থাকছেন জানতে চাইলে নিয়ামত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত মার্চে তাঁর বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দ্বৈত আসনের জন্য আবেদন করেন। এরপর গত মাসে তিনি একক আসন পান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ামত উল্লাহ বিশেষ বিবেচনায় আসন পেয়েছেন। প্রত্যেক হলে ১০টির মতো আসন বিশেষ বরাদ্দ থাকে। নিয়ামত উল্লাহ আর্থিক সমস্যার কারণে আবেদন করেছিলেন। এ কারণে তিনি আসন পেয়েছেন।’
ছাত্রলীগ থেকে শিবিরের হল সভাপতি
নিয়ামত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি শিবিরের হল শাখার সভাপতি হন। সম্প্রতি তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডও আলোচনায় আসে। এ সম্পর্কিত কয়েকটি ফেসবুক পোস্টও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি শেখ হাসিনার ছবি পোস্ট করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এতে লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউম্যানিটি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।’ পরে শেখ হাসিনাকে দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জীবনের নানা কাজের প্রশংসা করেন।
একই বছরের ১৪ অক্টোবর তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনকে নিয়ে। তাঁর সঙ্গে নিজের তোলা ছবি দিয়ে লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন চট্টগ্রামের সিংহপুরুষ, নেতাদের নেতা, সাবেক চসিক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক, আমার মতো হাজারো কর্মীর রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাই।’ ফেসবুক পোস্টে জামায়াত-শিবিরকে ‘খুনি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামত উল্লাহ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে যখন আসি, তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলাম। হলে থাকতে গেলে তখন ছাত্রলীগ করা লাগত, তাই ছাত্রলীগ করেছি।’ ওই সময় ছাত্রলীগ নেতাদের চাপের মুখে এসব পোস্ট দিয়েছেন দাবি করে নিয়ামত উল্লাহ বলেন, তিনি ২০২২ সালের জুনে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
নিয়ামত উল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই হলে উঠেছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াটাই ছিল বাস্তবতা। তবে তিনি নবম শ্রেণি থেকে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক একক আসন র র জন ত বর দ দ দ ফ সব ক আসন প আসন ব ক আসন
এছাড়াও পড়ুন:
লোপেজ বললেন, ‘বিচ্ছেদ জীবনের সেরা ঘটনা’
তাঁদের জীবনের গল্প সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই। তুমুল প্রেম, বাগ্দানের পর সবাই যখন বিয়ের অপেক্ষায়; তখন হঠাৎই আসে বিচ্ছেদের ঘোষণা। এরপর দীর্ঘ সময় গড়িয়েছে, দুজনই ভিন্ন সম্পর্কে থিতু হয়েছেন। তবে নিয়তি বোধ হয় চেয়েছিল তাঁদের পুনর্মিলন, শেষ পর্যন্ত সেটাও হয়। কিন্তু দুই বছর গড়াতেই সম্পর্ক ভাঙে, সম্পর্কের দ্বিতীয় সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি হলিউডের তারকা দম্পতি বেন অ্যাফ্লেক ও জেনিফার লোপেজ। বিচ্ছেদের পর বছর পার হয়েছে কিন্তু এ বিষয়ে দুই তারকার কেউই তেমন কথা বলেননি। এবার সিবিএস নিউজ সানডে মর্নিং অনুষ্ঠানে এসে বিচ্ছেদ নিয়ে প্রথমবার সবিস্তার কথা বললেন লোপেজ।
একনজরে বেন-লোপেজের সম্পর্কপ্রথম পরিচয়: ১৯৯৮ সালে, ‘আর্মাগেডন’ ছবির প্রিমিয়ারে।
প্রেম: ২০০২ সালে, ‘গিগলি’ সিনেমার সেটে।
প্রথম বাগ্দান: ২০০২ সালে, ২০০৩ সালে বিয়ে করার ঘোষণা।
প্রথম বিচ্ছেদ: ২০০৪ সালে বাগ্দান ভেঙে দিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা।
পুনর্মিলন: ২০২১ সালে আবার প্রেম শুরু করেন বেন ও লোপেজ।
দ্বিতীয় বাগ্দান: ২০২২ সালে এপ্রিলে দ্বিতীয়বার বাগ্দান সারেন।
অবশেষে বিয়ে: ২০২২ সালের ১৬ জুলাই বিয়ে করেন এই তারকা জুটি।
বিচ্ছেদের আবেদন: ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট বিচ্ছেদের আবেদন করেন লোপেজ।
২৮ সেপ্টেম্বর প্রচারিত অনুষ্ঠানে লোপেজ বলেন, বেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পর তাঁর উপলব্ধি ছিল, এটা তাঁর জীবনের ঘটে যাওয়া সেরা ঘটনা। বিচ্ছেদকে ‘সেরা ঘটনা’ বলার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে এই গায়িকা-অভিনেত্রী বলেন, ‘এটা আমাকে বদলে দিয়েছে। এটা আমাকে এমনভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, যেটা আমার জন্য দরকার ছিল।’
অ্যাফ্লেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা
২০২৪ সালের আগস্টে লোপেজ বিচ্ছেদের আবেদন করেন; চূড়ান্ত হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ডিভোর্সের সময়ে লোপেজ শুটিং করছিলেন নতুন ছবি ‘কিস অব দ্য স্পাইডার ওমেন’-এর। এ সিনেমায় তাঁর সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন দিয়েগো লুনা ও টোনাটিউ। এটি ১৯৯৩ সালের ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি, যা মানুয়েল পুইগের ১৯৭৬ সালের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই গল্প আগেও ১৯৮৫ সালে সিনেমার পর্দায় এসেছে, যেখানে অভিনয় করেছিলেন উইলিয়াম হার্ট, রাউল জুলিয়া ও সোনিয়া ব্রাগা। নতুন সংস্করণে জেনিফার লোপেজ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তাঁর প্রথম মিউজিক্যাল চলচ্চিত্রও বটে।