কপ৩০: ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা নিয়ে আলোচনা
Published: 11th, November 2025 GMT
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া চলতি সপ্তাহেই তছনছ হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। জ্যামাইকা ও ব্রাজিলে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন এখনো চোখে পড়ে। দিন দিন খারাপ হতে থাকা এই আবহাওয়া এবং জলবায়ুর কারণে সৃষ্টি হওয়ার চরম পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ৩০)।
গতকাল সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিন আলোচনার মূল বিষয় ছিল পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কারণ, যে কার্বন নিঃসরণের কারণে জলবায়ুর এই করুণ অবস্থা, তা যথেষ্ট পরিমাণে কমাতে ব্যর্থ হয়েছে দেশগুলো। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিবছর ৩১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা প্রয়োজন।
তবে কোথা থেকে এই অর্থ আসবে, তা পরিষ্কার নয়। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আরও অর্থ ছাড় দিতে চাপের মুখে রয়েছে বিশ্বের উন্নয়ন–সংশ্লিষ্ট ১০টি ব্যাংক। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সংকট মোকাবিলায় দেশগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাবে তারা। গত বছরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে টিকে থাকার জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সরবরাহ করেছিল।
এবারের কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রাজিলের বেলেম শহরে। শহরটিতে অবস্থান করা জাতিসংঘের বিভিন্ন তহবিলের পরিচালকেরা বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ২০ কোটি ডলারের তহবিল গড়তে নতুন একটি বন্ড চালুর ঘোষণা দেবেন তাঁরা। গত বছর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯–এ এই বন্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এ ছাড়া সোমবার জলবায়ু সংক্রান্ত ভিন্ন একটি প্রচেষ্টায় ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জার্মানি ও স্পেন। এই প্রচেষ্টার নাম জলবায়ু বিনিয়োগ তহবিল বা সিআইএফ। এর লক্ষ্য হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চরম জলবায়ুর বিরুদ্ধে টেকসই করে তোলা। সিআইএফের প্রধান নির্বাহী তারিয়ে গবাদেগেসিন রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কপের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা খুবই রোমাঞ্চিত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জলব য় র
এছাড়াও পড়ুন:
পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নিতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন
জাতিসংঘের জলবায়ু–সংক্রান্ত ৩০তম সম্মেলন বা কপ৩০ শুরু হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের বেলেম শহরে। আগামীকাল সোমবার ১১ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের যাত্রা শুরু হবে। এবারের সম্মেলনে পুরোনো প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। একই সঙ্গে পুরোনো ব্যর্থতা শুধরে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কপের পূর্ণ রূপ হলো কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস। এর সদস্যদেশগুলো ১৯৯২ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেছিল। চুক্তিটি হলো দ্য ইউনাইডেট নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)। বিশ্ব জলবায়ুব্যবস্থাকে মানুষের বিপজ্জনক তৎপরতা থেকে রক্ষা করাই এর লক্ষ্য। কপের প্রথম সম্মেলন হয় জার্মানির বার্লিনে, ১৯৯৫ সালে।
এবারের ৩০তম কপ চলছে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করা দেশ হিসেবে ব্রাজিলেরও আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এখন থেকে ঠিক ৩৩ বছর আগে দেশটির রিও ডি জেনিরো শহরে একটি সম্মেলে ইউএনএফসিসিসি চুক্তি সই হয়েছিল। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যে অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে, সে জন্য সম্মেলনে কিছু বিষয়সূচিও নির্ধারণ করেছে ব্রাজিল।
এর আগে কপ২৮–এ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তিতে সই করা দেশগুলো। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওপর এবার জোর দিচ্ছে ব্রাজিল। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি এবারের প্রথমবারের মতো স্বীকার করা হবে এবং সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
ব্রাজিলের বেলেম শহরে আমাজন জঙ্গলের অংশ রয়েছে। এবারের সম্মেলনের জন্য এই শহর বেছে নেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। তা হলো বিশ্বে বনভূমির গুরুত্ব তুলে ধরা। নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বিশ্বজুড়ে এখনো বনভূমি উজাড় হচ্ছে। একই সঙ্গে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, কৃষিকাজ ও জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের মতো শিল্পায়ন–সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতের হুমকির মুখে পড়ছে বনাঞ্চল।
কপ৩০ সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে ইউএনএফসিসিসি চুক্তিতে সই করা দেশগুলো তাদের অগ্রাধিকার তুলে ধরবে এবং অন্যদের অবস্থান খতিয়ে দেখবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন। সম্মেলনে চূড়ান্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয়ে দর–কষাকষি করবেন তাঁরা।