জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের সময় বাড়বে কি না, সেই সিদ্ধান্ত হবে সরকারের সিদ্ধান্ত দেখে
Published: 11th, January 2025 GMT
‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারকে আরও সময় দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর।
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ সময়ের মধ্যে সম্ভব না–ও হতে পারে। আরও সময় লাগতে পারে। এ অবস্থায় সরকারকে আরও সময় দেওয়া হবে কি না।
এর জবাবে আখতার হোসেন বলেন, সরকারের আশ্বাসে গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ স্থগিত রাখা হয়। সরকারের তরফ থেকে আগের রাতে (৩০ ডিসেম্বর) আশ্বস্ত করা হয় যে সরকার সব রাজনৈতিক পক্ষ ও অন্যদের সঙ্গে বসে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করবে। পরদিন সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির কাজটি শেষ করতে আহ্বান জানানো হয়। তবে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কিছু জানায়নি।
আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না, সহায়তা করবে০৯ জানুয়ারি ২০২৫সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে আহ্বান জানান আখতার হোসেন। আর যদি অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে (সরকার) জানানোর পর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি জানান।
বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের প্রতি বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলের অতি ভক্তি রয়েছে।
৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের এ উদ্যোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হবে। এমন প্রেক্ষাপটে ৩০ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) নামে সমাবেশ করে।
আরও পড়ুনদেরির বিষয়ে ‘যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা’ দিতে হবে সরকারকে: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি ৭ ঘণ্টা আগেসেই সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করতে যাচ্ছে সরকার। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী জুলাই ঘোষণাপত্র ১৫ জানুয়ারির মধ্যে হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম তখন বলেছিলেন, সরকার সবার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এতে হয়তো কিছু সময় বৃদ্ধি হতে পারে, কিন্তু এটা খুব বেশি দেরি হবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন।
বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে।
আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব।
সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।
আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।
আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।
সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ