নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সঙ্গে চীনের শিহেজী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নোবিপ্রবি ইন্টারন্যাশনাল কোলাবোরেশান ও কো-অপারেশন সেন্টার (আইসিসিসি) অফিসের তত্ত্বাবধানে উপাচার্যের কার্যালয়ে এ সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।

এ চুক্তিতে নোবিপ্রবির পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইসমাইল এবং শিহেজী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. ঝাওয়ামিন স্বাক্ষর করেন।

এ সময় অন্যান্যদের মাঝে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ), আইআইএস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর সরকার, রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, আইসিসিসি এর অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী, ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন অফিসার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. খালেদ মেহেদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “নোবিপ্রবি ও শিহেজী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ সমঝোতা স্মারক ভবিষ্যতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়াকে সহজতর করবে। শিক্ষা-গবেষণা ও টেকনিক্যাল কোলাবরেশনের ক্ষেত্রে এ ধরনের চুক্তি দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে অত্যন্ত সহায়ক।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

লিবিয়ার মাফিয়া তিন জামাতার মাধ্যমে উত্থান দালাল মনিরের

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুদ্দুস ব্যাপারী (৩৩) ছিলেন মালয়েশিয়ায়। ছয় মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। এরপর স্থানীয় দালাল মনিরের প্রলোভনে পড়ে ইতালি যেতে রাজি হন তিনি। অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছাতে ১৬ লাখ টাকায় হয় ‘বডি কন্ট্রাক্ট’।

অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার অন্যতম একটি পথ লিবিয়া। এ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ছোট ছোট নৌকা। এসব নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। প্রতিবছর এ পথে যাত্রা করতে গিয়ে প্রাণ হারান অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। এ জন্য এ কাজে দালালেরা চালু করেছেন ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় যত দিন লাগুক, অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইতালি জীবিত পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে টাকা নেন দালাল। সে পর্যন্ত একজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর থাকা, খাওয়া, বিমানভাড়া—সবকিছুই বহন করে দালাল চক্র।

কুদ্দুস ব্যাপারী দালাল মনিরের টাকা পরিশোধ করতে তাঁর দুই বিঘা জমি ৪০ লাখ টাকা মূল্যে মনিরের স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে লিখে দেন। চুক্তি অনুযায়ী মনির তাঁকে অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে পাঠালেও সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে কুদ্দুসের কোনো খোঁজ মিলছে না। পরিবারের ধারণা, আরও অনেকের সঙ্গে কুদ্দুসও মারা গেছেন।

কুদ্দুস ইতালি যাচ্ছেন শুনে তাঁর ভগ্নিপতি সুজন হাওলাদার (৩৯) বডি কন্ট্রাক্টে দালাল মনিরকে ১৬ লাখ টাকা দেন। তিনি এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

কুদ্দুস রাজৈর পৌরসভার মজুমদারকান্দি এলাকার আতাহার ব্যাপারীর ছেলে। সুজন হাওলাদার তাঁর চাচাতো বোনের স্বামী। সুজন খুলনা নৌবন্দর এলাকার হালিম হাওলাদার ছেলে। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনা হলেও তাঁর পরিবারের জীবিত কেউ না থাকায় শ্বশুরবাড়ি রাজৈরের মজুমদারকান্দিতে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় ৭ বছর ছিলেন কুদ্দুস। বছরে একবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেশে আসতেন। আগস্টে নবজাতক সন্তানকে দেখতে দেশে এসেছিলেন। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের পরিস্থিতি ভালো চলছে না। এতে হতাশায় ছিলেন কুদ্দুস। বিষয়টি জানার পর থেকে মনির শেখ কুদ্দুসকে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখান। মনিরের প্রস্তাবে রাজি হলে নভেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকা থেকে প্রথমে মিসরে পাঠানো হয় কুদ্দুসকে। ভগ্নিপতি সুজন ২০ ডিসেম্বর ঘর ছাড়েন। তাঁকেও ঢাকা থেকে মিসর হয়ে নেওয়া হয় লিবিয়া। সেখানে একটি বন্দিশালায় প্রায় দুই মাস কাটানোর পর তাঁদের গত ২৪ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে লিবিয়ার বেনগাজি উপকূল নেওয়া হয়। পরে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা বাদেই নৌকাটি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিবিয়ার উপকূলে ২৩ জনের মরদেহ ভেসে এসেছে। এর মধ্যে সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর স্ত্রী মুন্নী বেগম নিশ্চিত করেছেন।

মুন্নী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুজনের কোনো ঘরবাড়ি নেই। তাই বাবার বাড়িতে আমার দুইডা যমজ বাচ্চা নিয়া থাকি। ১৬ লাখ টাকা ধারদেনা কইরা মনির দালালরে দিছি। দালাল আমাগো লগে এইডা কী করল? বডি কন্ট্রাক্টে কথা ছিল, যেভাবেই হোক সুজনরে ঢাকা থিকা ইতালি পৌঁছে দিবে। সেই কথা রাখে নাই দালালে। মাঝসাগরে ছাইড়া দিয়া ওরা আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইছে। এখন আমি ক্যামনে বাঁচমু? কে খাওয়াইবো আমাগো। ওই দালালের জন্যই আমার স্বামী মারা গেছে। আমি ওর বিচার চাই।’

কুদ্দুসের বড় ভাই সোবাহান ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মালয়েশিয়াতে মোটামুটি ভালোই ছিল। এবার ছুটিতে দেশে এসেই মনির দালালের প্রলোভনে পড়ে জমিজমা বেচে দিয়ে ইতালির উদ্দেশে গেছে। দুই সপ্তাহ ধইরা ভাইডার কোনো খবর পাই না। ও কি বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে, তা-ও জানি না। ওর লগে যারা গেম ঘরে (বন্দিশালায়) ছিল, তারা কইছে আমার ভাই নাকি আর নাই। ভাইডার বিষয়ে দালালের কাছে জানতে গেছি, দালালে শান্ত থাকতে কইয়া আর খবর নাই। তারে (দালাল) সকাল-বিকাল খোঁজ কইরাও পাইতাছি না।’

মনিরের তিন জামাতা লিবিয়ার বড় মাফিয়া

অভিযুক্ত দালাল মনির শেখ রাজৈরের মজুমদারকান্দি এলাকার হায়দার শেখের ছেলে। তাঁর তিন মেয়ে, দুই ছেলে। দুই বছর আগেও রাজৈর বাজারে দরজির দোকান করতেন মনির। তিন মেয়েকে বিয়ে দেন লিবিয়াপ্রবাসীর সঙ্গে। এর পর থেকেই মনির মানব পাচারের দালালি পেশায় যুক্ত হন। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে গত ৭ মাসে রাজৈর পৌরসভা ও টেকেরহাট বন্দরে কিনেছেন অন্তত ৫ কোটি টাকার জমি।

এলাকাবাসী জানান, মনিরের তিন জামাতা লিবিয়ার মানব পাচারকারী ও মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত। দালাল মনিরের কাজ হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রলোভন দেখানো। তারপর জামাতাদের মাধ্যমে বডি কন্ট্রাক্টে তিনি ইতালিতে পাঠানোর কাজ করেন। প্রতিটি চুক্তি করেন ১৬ লাখ টাকায়।

সম্প্রতি লিবিয়া উপকূলে ২৩টি লাশ ভেসে আসার পর থেকে পরিবার নিয়ে আত্মগোপন করেছেন মনির। বাড়িতে তাঁর চাচাতো ভাই ও ফুফুরা তাঁর বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিবেশীরা জানান, দরজি মনির এখন ‘মাফিয়া মনির’ হয়ে গেছে।

প্রতিবেশী আকাশ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনির এসব ঘটনা মীমাংসা করার জন্য লোকজন ধরা শুরু করেছেন। আপস-মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মনির গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন না। তবে কোথায় কখন গেছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।’

স্থানীয়দের তথ্যমতে, মনির শেখ ছাড়াও এই চক্রের সঙ্গে রয়েছেন রাজৈরের হরিদাসদি এলাকার স্বপন মাতুব্বর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর এলাকার আম্বিয়া বেগম প্রমুখ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইতালি পাঠানোর স্থানীয় আরেকটি চক্রের এক দালাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাজ লোক ম্যানেজ করা। এই কাজ আমরা লিবিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে করে থাকি। লিবিয়া পর্যন্ত পাঠাতে প্রথম দফায় ১২ লাখ টাকা নিই। পরে গেম দিতে (নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি) ৪ লাখ টাকা নেওয়া হয়। আমরা এখান থেকে লোক আর টাকা কালেকশন করি। মূল কাজ করে লিবিয়ার মাফিয়ারা। কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের মৃধাকান্দি গ্রামের হোসেন হাওলাদারের ছেলে মিরাজ হাওলাদার লিবিয়ায় বড় মাফিয়া। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় এই কাজ করে যাচ্ছেন। মাদারীপুরে বেশির ভাগ লোকাল দালাল এখন তাঁর হয়েই কাজ করে।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানব পাচারসংশ্লিষ্ট ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি কয়েকজন নিহত ও নিখোঁজের ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেননি। রাজৈর উপজেলায় নিহত তিনজন ও নিখোঁজ সাতজন রয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানতে পেরেছি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তাঁদের ধারণা, যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁরাও মারা গেছেন। ভুক্তভোগী এসব পরিবারকে আইনি যেকোনো সহযোগিতা করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন দালালের নাম তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন‘এই কি সেই গেম! আমার ছওয়ালও নাই, ভাইও নাই’০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবাবার অজান্তে ছেলের অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা, মৃত্যুতে নির্বাক পরিবার০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুন‘আমাগো সুখ আর ঘরে আইলো না’১৯ জুন ২০২৪আরও পড়ুনলিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ