এলডিসি উত্তরণ পেছানো যায় কি না—এই প্রশ্ন অবান্তর: আনিসুজ্জামান চৌধুরী
Published: 15th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানো যায় কি না—এই প্রশ্ন এখন অবান্তর। ২০২৬ সালে বাণিজ্য সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা দেবে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। ব্যবসায়ীরা যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত, তা দূর হয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এলডিসি উত্তরণ পর্যায়ে এবং উত্তরণ–পরবর্তীকালে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটি সার্বক্ষণিক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থার সুপারিশ করবে। এ ছাড়া প্রস্তুতির বিষয়টিও দেখভাল করবে এই কমিটি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে বেশি ঝাপটা আসবে বলে মনে করি না। প্রধান উপদেষ্টা এ খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনও নানা ধরনের প্রস্তুতির সুপারিশ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এ জন্য একটি সেল গঠন করা হবে। আবার শুধু বাণিজ্য বিষয়ে দর-কষাকষির জন্য দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।’
‘আমরা এলডিসি উত্তরণের বিষয় আত্মবিশ্বাসী’—এমন মন্তব্য করেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উত্তরণ হব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা ইতিমধ্যে “উড়তে” শুরু করেছি।’
আনিসুজ্জামান চৌধুরী উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘২০১৮ সালে জাতিসংঘের এলডিসি উত্তরণের প্রথম পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশ। এর মানে হলো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বিমানের পাইলটকে (বাংলাদেশ) বলা হয়েছে, আপনি রানওয়ের দিকে যেতে পারেন। ২০২১ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বলা হলো, আপনি এবার টেক অফ করতে পারেন। এখন আমরা উড্ডয়ন অবস্থায় আছি। সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে।’
বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সুশাসনের অভাব, ব্যবসায় খরচ বেশি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব—এমন মত দেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি নিয়ে এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
প্রো বাংলাদেশ কূটনীতিপাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সার্ককে পুনর্জীবিত করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ সার্কভুক্ত সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান তিনি। জাতিসংঘ, ডি-৮, ডেভোস—যেখানেই গেছেন, সার্কের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশের কূটনীতি হবে প্রো বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গ সংস্কারকম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে নির্বাচন, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন—এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। কবে নির্বাচন, তা নির্ভর করবে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছাবে তার ওপর।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এলড স
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির উদ্বেগ আদালত অবমাননার শামিল: ইশরাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে ইশরাক হোসেনের মামলা, রায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তৎপরতা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টিকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অবমাননা করেছে।
বুধবার রাতে এক প্রতিবাদলিপিতে ইশরাক হোসেনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। এর আগে গতকাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল এনসিপি।
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে এনসিপির উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে ইশরাক হোসেনের পক্ষে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তাঁর আইনজীবী বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির বিজ্ঞ আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তা ছাড়া ২০২০ সালে দায়ের করা মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যা মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়; বরং মোকদ্দমাটি আরও আগেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল।
নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ে হওয়া উচিত উল্লেখ করে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এনসিপির এ জাতীয় বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সম্পূর্ণ আইনি অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় বিজ্ঞ আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ করেননি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে, তা এককথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আদালত যথাযথ আইন মেনেই রায় প্রদান করেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ন্যায়বিচার হয়নি বলে মনে করে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে এবং তার বক্তব্য ওই উচ্চ আদালতে রাখারও সুযোগ আছে। এভাবে প্রেসনোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।’
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতার ইশরাক হোসেনকে গত ২৭ মার্চ মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। এর এক মাস পর আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পর এটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে শপথ গ্রহণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। তবে কবে নাগাদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে, সে বিষয়টি নিয়ে এখন ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনের হিসাব অনুযায়ী আগামী ১৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।