বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘আপনারা অনেকে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। অনেকের নাম ও তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে এসেছে।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না। আমাদের কাছে অনেকের তথ্য রয়েছে। দেশে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে হাসিনার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

আজ সোমবার রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে জাহিদুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের দাবিতে এই মানবপ্রাচীরের আয়োজন করে। তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল ‘শাপলা গণহত্যা’।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা দিয়ে গণহত্যা, ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়–পরবর্তী গণহত্যা, ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা কিংবা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এসব গণহত্যায় শহীদের সংখ্যা নিরূপণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ ও জাতিসত্তার ইতিহাস লিখতে হলে এ ভূখণ্ডে মুসলিমদের বাদ দেওয়া যাবে না। তাঁদের অবদান অনেক বেশি।’

মানবপ্রাচীরে অংশ নেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর গণহত্যায় তাঁর ছোট ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ নিহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট ভাই কোনো সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি ছিল না। ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে আলেমদের সমাবেশে অংশ নিয়েছিল সে। কিন্তু তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, শাপলায় শহীদদের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হোক।’

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় শিল্প ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু মূসা, শিক্ষা সম্পাদক মাহিনুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আসাদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম ম নবপ র চ র গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

সারাদেশে হেফাজতের বিক্ষোভ ২৩ মে

চার দাবি আদায়ে দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করে মহাসমাবেশ শেষ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।

আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে দুই কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান।

এর আগে আজ সকালে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। সকাল ৯টায় সমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর সোয়া ১টায়। এতে সভাপতিত্বে করছেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী। সমাবেশে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বক্তব্য দেন।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আজকের মহাসমাবেশের মুখ্য দাবি মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।

এদিকে মহাসমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

দাবিগুলো হলো-

১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরানবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে আলেম-ওলামাদের পরামর্শক্রমে নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয় বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে। 

২. সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান ও আমল রক্ষার্থে বহুত্ববাদ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ সমতা, তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়; এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরুদ্ধ সমকামীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।

৩. শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫. আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর নামে কটূক্তিকারী ও বিষোদ্গার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তির আইনি ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।

৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারাদেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যে ও বানোয়াট সব মামলা অতিসত্ত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে জঙ্গি নাটক বা জঙ্গি কার্ড খেলে বাংলাদেশকে ইসলামপন্থি ও আলেম-ওলামাদের গত ১৫ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছিল; তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের জনতাকে ইসরায়েলি ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে।

৯. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবপর্যায়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১০. রাখাইনকে মানবিক করিডর প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে ফিরে আসতে হবে।

১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারি অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশে ভৌগোলিক ও খণ্ডতায় ও নিরাপত্তাসংকট কমাতে আলেম সমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। 

১২. কাদিয়ানীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫২,৫০০ ছাড়াল
  • ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন
  • ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই
  • জামায়াতের নিবন্ধন: আপিল শুনানির জন্য চলতি সপ্তাহে কার্যতালিকায় উঠছে
  • আ.লীগ নিষিদ্ধ, নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ১২ দফা
  • শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা নিয়ে বিতর্ক, ভিডিও ভাইরাল
  • সারাদেশে ২৩ মে বিক্ষোভ করবে হেফাজত ইসলাম
  • সারাদেশে হেফাজতের বিক্ষোভ ২৩ মে
  • সোহরাওয়ার্দীতে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু