ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন না করতে গণমাধ্যমের প্রতি তথ্য উপদেষ্টার আহ্বান
Published: 5th, May 2025 GMT
ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম। সোমবার তথ্য ভবনে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে 'ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন' শীর্ষক সেমিনারে এই আহ্বান জানান তিনি।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গুম, অপহরণ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মের সম্মতি উৎপাদনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে। এসব অসৎ উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যম তৈরি করেছে। বিগত সরকারের আমলে যেসব গণমাধ্যমকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া তদন্ত করা হবে।
সম্প্রতি চাকরিচ্যুত তিনজন সাংবাদিক প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সরকার চায় না বিনা নোটিশে কোনো সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হোক। কোনো সাংবাদিক অপরাধ করলে তাকে প্রক্রিয়া মেনেই চাকরিচ্যুত করতে হবে। বিনা নোটিশে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি সরকার সমর্থন করে না।
মাহফুজ আলম বলেন, কিছু গণমাধ্যম ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে’ আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করছে। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারকে পটপরিবর্তনের পরবর্তী সরকার বলা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো গণমাধ্যমকে কিছু বলা হয়নি। আমরা মনে করি, জনগণ বিষয়টি মূল্যায়ন করবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো গণমাধ্যম সরকারের পক্ষে লিখুক। সরকারকে প্রশ্ন করুন। সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’
উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের ১৯শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এত স্বল্প সময়ে ফিলিস্তিনেও এই পরিমাণ মানুষ হত্যা করা হয়নি। জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কোনো হত্যাকাণ্ড তুলনীয় নয়।
পতিত সরকারের দুঃশাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র ছিল গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের রাজনীতিকীকরণের ফলে সাংবাদিকরা তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের বোঝা উচিত।
উপদেষ্টা বলেন, যেসব সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন, সরকার তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ৪৪ ধাপ অবনতি হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণমাধ্যমের চিত্র উপলব্ধি করা যায়। বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তার ওপর হামলা করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে অন্য কোনো শাসনামলের তুলনা চলে না। এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বাধীন গণমাধ্যম একসঙ্গে চলতে পারে না। তিনি ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, যেসব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্ভব নয়। তিনি গণমাধ্যমের টেকসই ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সাংবাদিকদের বিভাজিত করা হয়েছিল। সরকারের আনুগত্যে নিয়ে আসার জন্য বিগত সরকার সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কীভাবে গণমাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায়, সে লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। মূল প্রবন্ধে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে ৬১ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৫৮৮ জন সাংবাদিক।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, দৈনিক প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ, দৈনিক নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলি, শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য শাহীন হাসনাত।
সেমিনারে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ববি, শহিদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান, নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আক্তারুজ্জামান ও সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম।
সেমিনারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, হত্যা-নিপীড়নের শিকার সাংবাদিক-পরিবারের সদস্য এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ল গ সরক র র চ কর চ য ত ১৫ বছর র ত সরক র প রসঙ গ উপদ ষ ট হয় ছ ন আওয় ম আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
‘কবে যে বিরিয়ানি খাইয়াছি মনে নাই’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকায় ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছেন সুহৃদরা। ৩ মে সুহৃদ সমাবেশ গোমস্তাপুর উপজেলা ইউনিটের আয়োজনে পঞ্চাশের অধিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুপুরের খাবার।
রহনপুর স্টেশন চত্বরের প্ল্যাটফর্মে কয়েক দিন ধরে শুয়ে থাকা অসহায় ছিন্নমূল মহিলা রহিমা বেগম জানান, ‘হামি (আমি) খুব খুশি হইয়াছি। কবে যে বিরিয়ানি খাইয়াছি (খেয়েছি) মনে নাই। আল্লাহ তোরঘে (তোমাদের) ভালো করুক বাপু।’
রাস্তার পাশে না খেয়ে ঘুরতে থাকা অনেকেই খাবার পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
শাহীন আলম বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার এ আয়োজন খুবই ভালো উদ্যোগ। সবাই এগিয়ে এলে শুধু আজ নয়, এমন উদ্যোগ প্রতিদিনই হতে পারে।’
কর্মসূচি নিয়ে মুরশেদুল হাসান সাগর বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন স্থানে এসব মানুষ মুড়ি বা নষ্ট খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা শহর ঘুরে ঘুরে পঞ্চাশের অধিক ছিন্নমূল মানুষের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দিয়েছি। এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিষয়েও আমরা চিন্তা করছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুহৃদ সভাপতি মুরশেদুল হাসান সাগর, সাধারণ সম্পাদক সিফাত শাহারিয়ার কিয়াম, প্রচার-প্রচারণা সম্পাদক আমির হামজা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, সাংবাদিক শাহীন আলম, আজিজুল, সম্রাট রেজা, ইমতিয়াজ প্রমুখ।
এর আগে প্রস্তুতি সভায় স্থান, সময় ও খাবারের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। সবার সার্বিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ